দামাক ০: ৩ আল নাসর
এক ক্লাব ছেড়ে একই দেশের আরেক ক্লাবের সঙ্গে মানিয়ে নিতেই অনেকের বেশ কিছুদিন সময় লেগে যায়। সেখানে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো তো এক মহাদেশ ছেড়ে আরেক মহাদেশে পাড়ি জমিয়েছেন।
তবে নামটা যেহেতু রোনালদো; তাই যেকোনো ক্লাবে, যেকোনো পরিবেশে, যেকোনো পরিস্থিতিতে তাঁর কাছে গোলই সবার কাম্য। কিন্তু সৌদি আরবের ক্লাব আল নাসরের হয়ে প্রথম দুই ম্যাচ রাঙাতে পারেননি। তাতেই পর্তুগিজ মহাতারকাকে নিয়ে শুরু হয় সমালোচনা।
রোনালদো অবশ্য বরাবরই পারফরম্যান্স দিয়ে নিন্দুকদের মুখে কুলুপ এঁটে দিয়েছেন। এখনো দিয়ে যাচ্ছেন।
আল নাসরের হয়ে প্রথম দুই ম্যাচে গোল না পাওয়া রোনালদোই পরের চার ম্যাচে করে ফেললেন ৮ গোল। আল ওয়েহদার পর আজ দামাকের বিপক্ষেও হ্যাটট্রিক করলেন ৩৮ বছর বয়সী ফরোয়ার্ড; সেটাও প্রথমার্ধে মাত্র ২৬ মিনিটের ব্যবধানে।
দ্বিতীয়ার্ধে আর গোল না হওয়ায় সৌদিতে রোনালদোর দ্বিতীয় হ্যাটট্রিকেই দামাককে ৩–০ ব্যবধানে হারিয়েছে আল নাসর। সেই সঙ্গে সৌদি প্রো লিগের শীর্ষে ফিরেছে ক্লাবটি।
১৮ ম্যাচে আল নাসরের পয়েন্ট ৪৩। দুইয়ে নেমে যাওয়া আল হত্তিহাদের পয়েন্ট ৪১, তিনে থাকা আল শাবাবের ৪০। আর ২২ পয়েন্ট নিয়ে সাতেই রয়ে গেছে দামাক।
বেশ কিছুদিন ধরেই লিগের শীর্ষস্থান নিয়ে ইঁদুর–বিড়াল খেলা চলছে আল নাসর ও আল ইত্তিহাদের মধ্যে। পরশুই আল রাইদের সঙ্গে গোলশূন্য ড্র করে চূড়ায় উঠেছিল ইত্তিহাদ। আজ রোনালদোর হ্যাটট্রিক নাসরকে আবারও শীর্ষে ফেরাল।
আল নাসরের হয়ে সর্বশেষ চার ম্যাচেই গোলে অবদান রেখেছেন রোনালদো। দলের শেষ দশ গোলের সবকটিতেই আছে তাঁর ছোঁয়া। আটটি নিজে করেছেন, দুটি সতীর্থদের দিয়ে করিয়েছেন। আল তাউনের বিপক্ষে আগের ম্যাচে গোল না পেলেও দুটি অ্যাসিস্ট করেছিলেন রোনালদো। এর আগে আল ওয়েহদার বিপক্ষে একাই করেছেন চার গোল।
হ্যাটট্রিকের নিরিখে বর্তমান সময়ের ফুটবলারদের মধ্যে অনেক আগেই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী লিওনেল মেসিকে ছাড়িয়ে গেছেন রোনালদো। আজকেরটা নিয়ে তাঁর হ্যাটট্রিক সংখ্যা গিয়ে ঠেকল ৬২টিতে। মেসির হ্যাটট্রিক ৫৬টি।
‘বয়স শুধুই একটা সংখ্যা’—অতিমাত্রায় ক্লিশে হয়ে পড়া বাক্যটিকেই বারবার মনে করিয়ে দিচ্ছেন রোনালদো। ৬২ হ্যাটট্রিকের ৩২টিই যে তিনি করেছেন ৩০তম জন্মদিনের কেট কাটার পর!
দামাকের মাঠ প্রিন্স সুলতান বিন আবদুল আজিজ স্টেডিয়ামে ম্যাচের ১৮ মিনিটে সফল স্পট কিকে আল নাসরকে এগিয়ে দেন রোনালদো। ফারুখ চাফাই নিজেদের বক্সে বলে হাত লাগালে পেনাল্টি পায় আল নাসর।
পাঁচ মিনিট পরেই সুলতান আল–ঘান্নামের পাস থেকে ব্যবধান ২–০ করে ফেলেন রোনালদো। আর বিবরতির ঠিক আগমুহূর্তে পেয়ে যান তৃতীয় গোল। এই গোলে আইমান ইয়াহইয়া অ্যাসিস্ট করলেও পুরো কৃতিত্ব উইঙ্গার আবদুলরহমান ঘারিবের। নিজেদের বক্সের একটু বাইরে সতীর্থের হেড থেকে বল পেয়ে দৌড় শুরু করেন ঘারিব। দামাকের দুই খেলোয়াড়কে কাটিয়ে এগিয়ে যান আরও অনেক দূর। সুযোগ বুঝে বল বাড়ান ডানপ্রান্তে ফাঁকায় দাঁড়ানো ইয়াহইয়াকে। ইয়াহইয়া পাস দেন রোনালদোকে। দূরের পোস্টে উঁচু করে নেওয়া শটে বাকি কাজ সারেন পাঁচবারের ব্যালন ডি’অর জয়ী তারকা।
সৌদি আরবের ফুটবল যে মানের বিচারে ইউরোপের ধারেকাছেও নেই, দামাকের প্রতিটি গোল হজমে নিজেদের রক্ষণভাগের দুর্বলতা যেন সেটাই স্পষ্ট ফুটিয়ে তুলেছে। এতে অবশ্য রোনালাদোর অর্জনকে ছোট করে দেখার কারণ নেই। লিগের মান যেমনই হোক, দলের সর্বশেষ দশ গোলের সবকটিতে অবদান রাখা নিশ্চয় চাট্টিখানি ব্যাপার নয়।