আদালতে ধর্ষণের অভিযোগ অস্বীকার আলভেজের

আদালতে বিচারকাজ চলার সময় এভাবেই চুপচাপ বসে ছিলেন দানি আলভেজএএফপি

বার্সেলোনার পানশালায় এক তরুণীকে ধর্ষণের অভিযোগে আটক ব্রাজিলের সাবেক ফুটবলার দানি আলভেজের বিচারের শেষ দিন ছিল গতকাল বুধবার। আদালতে আলভেজ তাঁর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।  

৪০ বছর বয়সী আলভেজ অভিযোগ করা তরুণী সম্পর্কে বার্সেলোনার আদালতে বলেছেন, ‘যদি সে চলে যেতে চাইত, তাহলে যেতেই পারত। কারণ, সে সেখানে থাকতে বাধ্য নয়।’

আলভেজ শুধু ধর্ষণই নয়, তরুণীকে আঘাত করা ও তাঁর চুল টেনে ধরার মতো শারীরিক নির্যাতন করেছিলেন বলেও অভিযোগ উঠেছে। কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে প্রায় ২০ মিনিট কথা বলার সময় এসব অভিযোগও অস্বীকার করেছেন বার্সা, পিএসজি ও জুভেন্টাসের সাবেক ডিফেন্ডার। আলভেজ বলেছেন, ‘আমি কোনো হিংস্র প্রকৃতির মানুষ নই।’

গত সোমবার এই বিচারকাজ শুরু হয়, শেষ হয় গতকাল বুধবার। ভুক্তভোগী তরুণী তাঁর পরিচয় গোপন রাখতে পর্দার আড়ালে থেকে এক ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে সাক্ষ্য দেন।

আদালত থেকে বের হয়ে আসছেন আলভেজের স্ত্রী জোয়ানা সাঞ্জ ও মা লুসিয়া আলভেজ
এএফপি

২০২২ সালের ৩০ ডিসেম্বর বার্সেলোনার সাটন নামে একটি পানশালার ভিআইপি সেকশনের বাথরুমে আলভেজ তাঁকে ধর্ষণ করেন বলে অভিযোগ করেন সেই তরুণী। তিন সপ্তাহ পর আলভেজকে গ্রেপ্তার করা হয়। এর পর থেকেই স্পেনে কারাবন্দী জীবন কাটছে তাঁর।

স্পেনের কৌঁসুলিরা আলভেসের ৯ বছর কারাদণ্ড দাবি করেছেন। এ ছাড়া ভুক্তভোগীর জন্য ১ লাখ ৫০ হাজার ইউরো (১ কোটি ৭৭ লাখ টাকা) ক্ষতিপূরণ চেয়েছেন। আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে আদালত চূড়ান্ত রায় দিতে পারেন।

ধর্ষণের অভিযোগ তোলা তরুণীর চিকিৎসা করেছেন একজন মনোবিজ্ঞানী। তিনি আদালতকে বলেছেন, মানসিকভাবে আঘাত পাওয়ায় এই নারীর মধ্যে বিপর্যস্ত ভাবের লক্ষণ দেখা গেছে। তবে আলভেজের আইনজীবীরা যেসব বিশেষজ্ঞকে নিয়ে এসেছিলেন, তাঁরা দাবি করেছেন, মামলা ঘিরে সংবাদমাধ্যমের তুমুল আগ্রহের কারণে মেয়েটি উদ্বিগ্ন হয়ে থাকতে পারেন।

আরও পড়ুন

গত মঙ্গলবার প্রায় ২০ জন প্রত্যক্ষদর্শী আদালতে সাক্ষ্য দিতে এসেছিলেন। তাঁদের মধ্যে আলভেজের একজন ব্রাজিলিয়ান বন্ধুও আছেন, যিনি ঘটনার রাতে আলভেজের সঙ্গেই ছিলেন। তিনি বলেছেন, পানশালায় প্রবেশের আগে আলভেজ প্রচুর পরিমাণে অ্যালকোহল পান করেছিলেন।

আদলতে আলভেজকে হাতকড়া পরিয়ে রাখা হয়েছিল। এ সময় এক পুলিশ কর্মকর্তা তাঁর পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন
এএফপি

ভুক্তভোগীর এক বন্ধু ও কাজিনও আদালতে হাজির হয়েছিলেন। ধর্ষণের শিকার হয়ে বাথরুম থেকে পালানোর পর ওই তরুণীকে কতটা যন্ত্রণাদায়ক অবস্থা মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে, সে বিষয়ে এ দুজন আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন।

পুরোটা সময় আলভেজ আদালতে উপস্থিত ছিলেন। তাঁকে হাতকড়া পরিয়ে রাখা হয়েছিল এবং পাশে একজন পুলিশ কর্মকর্তা ছিলেন। বিচারক অন্যদের বয়ান শোনার সময় আলভেজ সামনের সারিতে চুপচাপ বসে ছিলেন।

আরও পড়ুন

স্পেনের কৌঁসুলিরা বলেছেন, আলভেজ এবং তাঁর বন্ধু ব্রুনো ব্রাসিল তিনজন তরুণীর জন্য শ্যাম্পেন কিনেছিলেন। সেই তিন তরুণীর মধ্যে একজনকে আলভেজ তাঁর সঙ্গে অন্যদিকে যেতে বলেন। আলভেজের কথায় রাজি হয়ে মেয়েটি তাঁর সঙ্গে যান। সেখানে যে একটি বাথরুম ছিল, সেটা মেয়েটির জানা ছিল না। বাথরুমে ঢুকতেই আলভেজ হিংস্র হয়ে ওঠেন এবং মেয়েটি বারবার চলে যেতে চাইলেও আলভেজ তাঁকে শারীরিক নির্যাতন করেন। আদালতে মেয়েটির বন্ধু ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন।

এর আগেও ধর্ষণের অভিযোগ অস্বীকার করেছিলেন আলভেজ। টিভি সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, তিনি এই তরুণীকে চেনেন না। তবে পরবর্তী সময়ে যৌন সম্পর্কের কথা স্বীকার করে বলেন, সবকিছু দুজনের ইচ্ছাতেই হয়েছে। গত বছরের জুনে স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যমকে বলেছিলেন, স্ত্রী তাঁকে ছেড়ে চলে যাবে—এ শঙ্কায় তিনি মিথ্যা বলেছিলেন।

বার্সেলোনার আদালতে আলভেজের বিচারকাজ চলার একটি মুহূর্ত
এএফপি

বিচারকাজ চলার সময় আদালতে আলভেজের স্ত্রী জোয়ানা সাঞ্জও উপস্থিত ছিলেন। সাঞ্জ বলেছেন, সে রাতে আলভেজ একদম মাতাল অবস্থায় বাসায় ফিরেছিলেন। তাঁর স্বামীর শরীর থেকে অ্যালকোহলের গন্ধ আসছিল। শয়নকক্ষে ঢোকার পর তিনি বেশ কয়েকটি আসবাবের সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে বিছানায় লুটিয়ে পড়েন। আলভেজ কথা বলার মতো পরিস্থিতিতে ছিলেন না বলে সাঞ্জ সে রাতে তাঁর কাছ থেকে কিছু জানতে চাননি।

আরও পড়ুন

ধর্ষণের অভিযোগে আটকের আগে পুমাস ইউএনএএমের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ ছিলেন আলভেজ। তবে গ্রেপ্তার হওয়ার পরপরই মেক্সিকান ক্লাবটি তাঁর সঙ্গে চুক্তি বাতিল করে।