ব্রাজিলের বিপক্ষে মেসির পারফরম্যান্স কেমন
২০২২ সালে কাতার বিশ্বকাপের পর থেকে বিপরীত দিকে এগোচ্ছে আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিলের ফুটবল। আর্জেন্টিনা যেখানে সাফল্যের চূড়া ছুঁয়েছে, সেখানে ব্রাজিলের ফুটবল পৌঁছেছে তলানিতে। আর্জেন্টিনার উড়ন্ত পারফরম্যান্সের অন্যতম নায়ক ছিলেন লিওনেল মেসি। তাঁর হাত ধরেই ৩৬ বছরের বিশ্বকাপ-খরা দূর করেছে আর্জেন্টিনা। আগামীকাল ভোরে সেই মেসির আর্জেন্টিনার মুখোমুখি হবে ব্রাজিল। বিশ্বকাপ বাছাইয়ের ম্যাচে ঐতিহাসিক মারাকানায় মুখোমুখি হবে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী এই দুই দল। যেখানে নিশ্চিতভাবে সবচেয়ে বেশি চোখ থাকবে মেসির ওপর।
ক্যারিয়ারে খুব কম সময়ই মেসিকে আটকে রাখতে পেরেছে প্রতিপক্ষ দলগুলো। ম্যাচের পর ম্যাচে প্রতিপক্ষকে গুঁড়িয়েই নিজেকে শ্রেষ্ঠত্বের চূড়ায় তুলেছেন মেসি। যেখানে রেকর্ডও কথা বলছে মেসির হয়ে। তবে এরপরও সব দলের বিপক্ষে মেসির রেকর্ড সমান ভালো নয়। কিছু দল ঠিকই মেসিকে আটকে রাখতে সক্ষম হয়েছে, যাদের একটি হচ্ছে ব্রাজিল। যাদের বিপক্ষে আগামীকাল মাঠে নামবেন আর্জেন্টাইন অধিনায়ক। ব্রাজিলের বিপক্ষে মুখোমুখি হওয়ার আগে টানা ১৪ ম্যাচ অপরাজিত থাকার পর উরুগুয়ের বিপক্ষে হারের স্বাদ পেয়েছেন মেসিরা। তাই ব্রাজিল ম্যাচের আগে মেসিদের খানিকটা উদ্বিগ্ন হওয়া মোটেই অস্বাভাবিক নয়।
লাতিন আমেরিকায় ঐতিহাসিকভাবে আর্জেন্টিনা একমাত্র দল যাদের ব্রাজিলের বিপক্ষে ভালো করার ইতিহাস আছে। তবে ব্রাজিলের বর্তমান দলটি পথ হারিয়ে এখন ধুঁকছে। তাই উরুগুয়ের বিপক্ষে হারের পরও আর্জেন্টিনা সমর্থকেরা ব্রাজিল ম্যাচ নিয়ে আশাবাদী। অবশ্য দলটির নাম ব্রাজিল বলে ভয়ও কম নয়! কে জানে নিজেদের নতুন শুরুর জন্য আর্জেন্টিনার বিপক্ষে ম্যাচটিকে ব্রাজিল পাখির চোখ করে কিনা। তাই সব মিলিয়ে এই ম্যাচে আর্জেন্টিনার জন্য মেসির ছন্দে থাকা জরুরি।
আন্তর্জাতিক ম্যাচে মেসির রেকর্ড কেমন, তা নিয়ে নতুন করে বলার কিছু নেই। ১২৫ ম্যাচে করেছেন ১০৬ গোল। একটি বিশ্বকাপ, একটি কোপা আমেরিকা এবং একটি অলিম্পিক পদক আছে মেসির। আছে বয়সভিত্তিক শিরোপাও। বল পায়ে খুব কম জায়গাতেই সংগ্রাম করতে দেখা গেছে মেসি। ব্রাজিলের বিপক্ষে তাঁর পারফরম্যান্স যে খারাপ, এমন নয়। কিন্তু সেটা মোটেই মেসিসুলভ নয়। ব্রাজিলের বিপক্ষে এখন পর্যন্ত ১৩ ম্যাচ খেলেছেন মেসি। করেছেন মাত্র ৫ গোল। যেখানে একটিতে আবার করেছেন হ্যাটট্রিকও। এই ১৩ ম্যাচে ৫ জয়, ৬ হার এবং ২ বার ড্রয়ের স্বাদ পেয়েছেন মেসি।
ব্রাজিলের বিপক্ষে মেসির ৫ গোল বিশ্লেষণ করলেও প্রকৃত চিত্রটা পাওয়া যায়। মেসির এই ৫ গোলের সবই এসেছে প্রীতি ম্যাচে। বিশ্বকাপ বাছাইয়ে এখন পর্যন্ত ৪ ম্যাচ খেলে কোনো গোল কিংবা অ্যাসিস্ট নেই মেসির। আর কোপা আমেরিকাতেও মেসি ব্রাজিলের মুখোমুখি হয়েছে ৩ ম্যাচে। এই ম্যাচগুলোতেও নেই কোনো গোল ও অ্যাসিস্ট। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হচ্ছে মেসি ব্রাজিলের বিপক্ষে ঘরের মাঠে এবং ব্রাজিলের মাঠে কোনো গোল করতে পারেননি। আর ব্রাজিলই হচ্ছে একমাত্র দেশ, যাদের মেসি এখনো বিশ্বকাপ বাছাইয়ে হারাতে পারেননি। সব মিলিয়ে এসব তথ্য ব্রাজিলের বিপক্ষে মেসির সংগ্রামের চিত্রকেই সামনে নিয়ে আসে।
ব্রাজিলের বিপক্ষে মেসির এই সংগ্রামের পেছনে মূলত ভূমিকা রেখেছে ব্রাজিলের সঠিক পরিকল্পনা। মেসির বিপক্ষে বরাবরই রক্ষণকে সুসংগঠিত রাখার কাজটা ঠিকঠাকভাবেই করেছে ব্রাজিল। আর বিভিন্ন সময় যেসব ডিফেন্ডার মেসিকে মার্ক করেছেন তাঁরাও বিশ্বমানের। এমনকি সাম্প্রতিক সময়েও মেসিদের বিপক্ষে রক্ষণে দারুণ নৈপুণ্য দেখিয়েছেন থিয়াগো সিলভা, মার্কুইনোস এবং এদের মিলিতাওরা। যে কারণে ব্রাজিলের বিপক্ষে বড় মঞ্চে মেসি খানিকটা নিষ্প্রভই ছিলেন।
তবে ব্রাজিলের বিপক্ষে বড় মঞ্চে গোল পাওয়ার দারুণ সুযোগ এবার মেসির সামনে। নিজেদের ছন্দ হারিয়ে সাম্প্রতিক সময়ে বেশ ধুঁকছে ব্রাজিল। তাই মারাকানায় আজ নিজের পরিসংখ্যানকে হয়তো আরেকটু সমৃদ্ধ করতে চাইবেন ‘এলএম টেন।’ আরও একটি কারণে মেসির জন্য এই ম্যাচ গুরুত্বপূর্ণ। সেটি হচ্ছে মারাকানা। ২০১৪ সালে এই মাঠেই বিশ্বকাপ শিরোপা হাতছাড়া করেছেন মেসি। ৭ বছর পর সেই যন্ত্রণা তিনি ভুলেছেন কোপা আমেরিকার ফাইনালে ব্রাজিলকে ১–০ গোলে হারিয়ে। আর এবার মেসির সামনে সুযোগ মারাকানার রেকর্ডেও এগিয়ে যাওয়ার। মেসি সেটি পারবেন কিনা তা জানতে আরও কিছু সময় অপেক্ষা করতে হবে।