নাটকীয় টাইব্রেকারে চারবারের চ্যাম্পিয়ন যুক্তরাষ্ট্রকে বিদায় করে দিল সুইডেন
‘বেয়ারেস্ট অব মার্জিন’।
২০১৯ বিশ্বকাপ ক্রিকেটে মহানাটকীয়তার পর ইংল্যান্ড চ্যাম্পিয়ন হতেই ধারাভাষ্যকক্ষে ইয়ান স্মিথের মুখ থেকে বেরিয়ে ছিল ক্রিকেট লোকগাথার অংশ হয়ে যাওয়া বাক্যটা।
চার বছর পর আরেকটি বিশ্বকাপে শোনা গেল সেই লাইনটা—‘বেয়ারেস্ট অব মার্জিন’’ এবার ক্রিকেট নয়, ফুটবলে। ছেলেদের নয়, মেয়েদের সেই বিশ্বকাপ। অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নে মেয়েদের বিশ্বকাপের শেষ ষোলোতে যে ম্যাচে চারবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন যুক্তরাষ্ট্রকে টাইব্রেকারে হারিয়ে ফুটবল বিশ্বকে চমকে দিয়েছে সুইডেন। মেয়েদের বিশ্বকাপের সবচেয়ে সফল দলটি এর আগে কখনোই সেমিফাইনালের আগে বিদায় নেয়নি বিশ্বকাপ থেকে।
গোলরক্ষক জেসিরা মুসোভিচের অসাধারণ পারফরম্যান্সেই যুক্তরাষ্ট্রকে রুখে দিয়ে ম্যাচটাকে টাইব্রেকারে নিয়ে যায় সুইডেন। পুরো ম্যাচে এবারের বিশ্বকাপের রেকর্ড ১১টি সেভ করা মুসোভিচকে অবশ্য টাইব্রেকারে কোনো শট বাঁচাতে হয়নি। সাডেন ডেথে গড়ানো টাইব্রেকারে তাঁর দল জিতেছে ৫-৪ গোলে। এর আগে দুদল কোনো গোল করতে পারেনি নির্ধারিত ও অতিরিক্ত সময়ে।
টাইব্রেকারের প্রথম পাঁচটি শটই খুঁজে পেয়েছিল জাল। যুক্তরাষ্ট্র এগিয়ে গিয়েছিল ৩-২ গোলে। এরপরই শুরু হয় গোল মিসের পালা। সুইডেনের তৃতীয় শটটা যায় বারের ওপর দিয়ে। ৯৯ মিনিটে অ্যালেক্স মরগানের বদলি হিসেবে নামা মেগান রাপিনোও মেরে দিলেন ওপর দিয়ে। এরপর সুইডেনের চতুর্থ শটটা ফিরিয়ে দেন যুক্তরাষ্ট্রের গোলরক্ষক অ্যালিসা ন্যাহার। গোল হলেই কোয়ার্টার ফাইনাল, যুক্তরাষ্ট্রের পঞ্চম শটটা নিতে এসে বাইরে মেরে দিলেন সোফিয়া স্মিথ। হানা বেনিসন সমতা এনে সাডেন ডেথে নিয়ে যান।
সাডেন ডেথের প্রথম শটে গোল পায় দুই দলই। কেলি ও’হারার নেওয়া যুক্তরাষ্ট্রের সপ্তম শটটি ডান পাশের পোস্টে প্রতিহত হওয়ার পরই এল ‘বেয়ারেস্ট অব মার্জিন’ মুহূর্ত। লিনা হারটিগের নেওয়া শট প্রায় ফিরিয়ে দিয়েছিলেন মার্কিন গোলরক্ষক। বল তাঁর হাতে লাগলেও আবার ধেয়ে যায় গোলের দিকে। মরিয়া ন্যাহার দ্বিতীয় প্রচেষ্টায় ফিরিয়ে দেন বল। কিন্তু হলো না, ভিএআর ও গোললাইন টেকনোলজির সাহায্য নিয়ে রেফারি ফ্রাপার গোলের বাঁশিই বাজালেন। গোললাইন টেকনোলজি দেখাল ন্যাহার দ্বিতীয়বার ফেরানোর আগে কয়েক সুতার ব্যবধানেই বলটি গোললাইন অতিক্রম করে গেছে।
আর তা নিশ্চিত হতেই সুইডিশরা মেতেছে ‘বিশ্ব জয়ের’ উল্লাসে। আর চারবারের চ্যাম্পিয়নরা চোখ ভাসিয়েছেন কান্নায়।
রাপিনোদের কাঁদারই কথা। এই ম্যাচে এক গোল ছাড়া আর সবই যে করেছেন তাঁরা। ম্যাচে এতটাই প্রাধান্য ছিল তাঁদের যে মনে হচ্ছিল যুক্তরাষ্ট্র-সুইডেন নয়, খেলা হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র-মুসোভিচের মধ্যে।
অথচ এই ম্যাচের আগে জেসিরা মুসোভিচের নাম কজনই বা জানতেন! সেই সুইডিশ গোলরক্ষকই আজ চারবারের বিশ্বের চ্যাম্পিয়নদের বিপক্ষে শেষ ষোলোর লড়াইয়ে বাধার প্রাচীর হয়ে দাঁড়ালেন। এই ম্যাচের আগে সুইডেনের হয়ে মাত্র ১০ বার গোলবারে দাঁড়ানো বসনিয়ান বংশোদ্ভূত গোলরক্ষক একের পর এক মার্কিন আক্রমণ ঠেকিয়ে ম্যাচটাকে নিয়ে যান অতিরিক্ত সময় হয়ে টাইব্রেকারে।
এর পর সুইডেনের হাসি ও যুক্তরাষ্ট্রের কান্না।