আর্জেন্টিনার খেলোয়াড়দের বর্ণবাদী আচরণের তদন্তে ফিফা, ফার্নান্দেজের পাশে মাচেরানো

আর্জেন্টিনার মিডফিল্ডার এনজো ফার্নান্দেজের সামাজিক যোগাযােগমাধ্যমে একটি ভিডিও পোস্ট করার পর বিতর্ক শুরু হয়েছেএএফপি

কোপা আমেরিকা জয়ের পর আর্জেন্টিনার খেলোয়াড়দের বিরুদ্ধে বর্ণবাদী গান গাওয়ার অভিযোগ উঠেছে। ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ফিফা গতকাল জানিয়েছে, এ ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। ফিফার পক্ষ থেকে এক মুখপাত্র বলেছেন, ‘সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওটি সম্বন্ধে অবগত আছে ফিফা এবং এ ঘটনার তদন্ত করা হচ্ছে। খেলোয়াড়, সমর্থক কিংবা অফিশিয়ালদের যেকোনো প্রকার বৈষম্যমূলক আচরণের কঠোর নিন্দা জানাচ্ছে ফিফা।’

মায়ামিতে বাংলাদেশ সময় গত সোমবার সকালে কোপার ফাইনালে কলম্বিয়াকে ১-০ গোলে হারায় আর্জেন্টিনা। এরপর আর্জেন্টিনা ও চেলসি মিডফিল্ডার এনজো ফার্নান্দেজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করা এক লাইভ ভিডিওতে ফ্রান্সকে ঘিরে বর্ণবাদী মন্তব্য করতে শোনা যায় আর্জেন্টিনার খেলোয়াড়দের। টিম বাসে আর্জেন্টিনার খেলোয়াড়দের উদ্‌যাপন ইনস্টাগ্রামে লাইভ করছিলেন ফার্নান্দেজ। খেলোয়াড়েরা বর্ণবাদী গান শুরু করার পরপরই লাইভ বন্ধ করে দেন ফার্নান্দেজ।

২০২২ বিশ্বকাপ ফাইনালে ফ্রান্সকে হারানোর পর দলটির খেলোয়াড়দের তাক করে বর্ণবাদী গান বানিয়েছিলেন আর্জেন্টিনার সমর্থকেরা। কোপা আমেরিকা জয়ের পর ফার্নান্দেজসহ আর্জেন্টিনার অন্যান্য খেলোয়াড়েরা টিম বাসে ওই গান গেয়েছেন। ফ্রান্সের তারকা স্ট্রাইকার কিলিয়ান এমবাপ্পে মূলত এই গানের লক্ষ্যবস্তু, যেখানে বর্ণবাদী মন্তব্যও করা হয়েছে।

গত রোববার কোপা আমেরিকায় চ্যাম্পিয়ন হয় আর্জেন্টিনা
এএফপি

এ ঘটনায় ফার্নান্দেজের বিরুদ্ধে অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলামূলক প্রক্রিয়া শুরু করেছে তাঁর ক্লাব চেলসি। ফার্নান্দেজ যদিও এরই মধ্যে ক্ষমা চেয়েছেন। চেলসি ‘অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলামূলক প্রক্রিয়া’ শুরুর ব্যাপারটি জানিয়ে বিবৃতিতে বলেছে, ‘যেকোনো ধরনের বৈষম্যমূলক আচরণকে অগ্রহণযোগ্য বলে মনে করে চেলসি। খেলোয়াড়ের ক্ষমা চাওয়াকে আমরা প্রশংসার চোখে দেখি এবং এটাকে সচেতন করে তোলার সুযোগ হিসেবে দেখা হবে।’

বেনফিকা থেকে ২০২৩ সালে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে রেকর্ড ১০ কোটি ৫০ লাখ পাউন্ডে চেলসিতে যোগ দেওয়া ফার্নান্দেজ ক্ষমা চেয়ে বলেছেন, ‘এ গানে অত্যন্ত অপমানজনক ভাষা আছে এবং এসব শব্দ ব্যবহারের কোনো অজুহাতই নেই। সব ধরনের বৈষম্যের বিপক্ষে আমি। কোপা আমেরিকা উদ্‌যাপনের উন্মাদনায় পড়ে গিয়েছিলাম বলে ক্ষমা চাই।’

আর্জেন্টিনার অলিম্পিক ফুটবল দলের কোচ হাভিয়ের মাচেরানো এ নিয়ে ফার্নান্দেজের পাশে দাঁড়িয়েছেন। লিভারপুল ও বার্সেলোনার সাবেক এই ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার মনে করেন, ভিডিওটি অপ্রাসঙ্গিকভাবে টেনে আনা হয়েছে। তাঁর ভাষায়, ‘আমরা আর্জেন্টাইনরা আর যা–ই হোক অন্তত বর্ণবাদী নই। আমি এনজোকে চিনি। দারুণ মানুষ। তার এমন কোনো সমস্যা নেই।’

মাচেরানো এরপর বিষয়টি ব্যাখ্যা করেন এভাবে, ‘উদ্‌যাপনের অংশ হিসেবে একটি ভিডিওর অংশ অপ্রাসঙ্গিকভাবে উঠে এসেছে। দেশ হিসেবে আমাদের অন্তত অন্তর্ভুক্তিমূলক ব্যাপারটি আছে। পৃথিবীর নানা প্রান্তের মানুষ আর্জেন্টিনায় বাস করে। তাদের সঙ্গে যে ব্যবহার করা উচিত, আমরা সেটাই করি।’

ফ্রান্স ফুটবল ফেডারেশন (এফএফএফ) গত সোমবার ফিফার কাছে এ নিয়ে অভিযোগ করেছে। ফ্রান্স দলের খেলোয়াড়দের বিরুদ্ধে বৈষম্যমূলক এবং অগ্রহণযোগ্য বর্ণবাদী আচরণের কঠোর নিন্দা জানিয়েছেন এফএফএফ সভাপতি ফিলিপ দিয়ালো।