মেসি কখনো ‘থর’, কখনো ‘ব্ল্যাক প্যান্থার’ কখনো আবার ‘স্পাইডার–ম্যান’
১৯৬২ সালে মার্ভেল কমিকস বাজারে আনে স্পাইডার–ম্যান নামের একটি কমিক বই। আমেরিকান সেই কমিক সিরিজের স্পাইডার–ম্যানের সুপারহিরো চরিত্রটি এরপর দুনিয়াজুড়ে তোলপাড় তোলে। শিশু–কিশোর এবং বড়দের মধ্যেও ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায় কমিক চরিত্রটি। এরপর চলচ্চিত্রে রূপায়ণের মধ্য দিয়ে এর জনপ্রিয়তার মাত্রা আরও বেড়ে যায়। কিন্তু আজকের পর সেই স্পাইডার–ম্যানের জনপ্রিয়তা যে আরও বাড়তে যাচ্ছে, তা নিশ্চিত করেই বলা যায়। এবার ফুটবল মাঠে যে স্পাইডার–ম্যানকে মনে করিয়ে দিলেন লিওনেল মেসি।
আজ শার্লটের বিপক্ষে ইন্টার মায়ামির ৪–০ গোলের জয়ের পথে ৮৬ মিনিটে দুর্দান্ত ফিনিশিংয়ে গোল করেন মেসি। সেই গোলের পর স্পাইডার–ম্যানের মতো জাল ছাড়তে দেখা গেল মেসিকে। তবে সুপারহিরো চরিত্রকে মাঠের উদ্যাপনে মেসির ফিরিয়ে আনা এবারই প্রথম নয়। যুক্তরাষ্ট্রের ফুটবলে অভিষেকের পর থেকে মেসিকে দেখা যাচ্ছে অভিনব সব উদ্যাপনে মেতে উঠতে। তবে মেসির এই নতুন উদ্যাপনগুলোর মধ্যে একটি সাদৃশ্য আছে। সবগুলো উদ্যাপন মার্ভেল কমিকস তথা মার্ভেল সিনেম্যাটিক ইউনিভার্স (এমসিইউ) এর চরিত্র থেকে নেওয়া।
২২ জুলাই ক্রুজ আজুলের বিপক্ষে লিগস কাপের ম্যাচ দিয়ে ইন্টার মায়ামির জার্সিতে অভিষেক হয়েছে মেসির। সেদিন ম্যাচের অন্তিম মুহূর্তে গোল করে দলকে জয় এনে দেন বিশ্বকাপজয়ী আর্জেন্টাইন অধিনায়ক। অভিষেক ম্যাচে গোলের পর দুই হাত ছড়িয়ে চিরচেনা উদ্যাপন করতে দেখা যায় মেসিকে। এরপর আটলান্টা ইউনাইটেডকে মেসির মায়ামি হারায় ৪–০ গোলে।
সেই ম্যাচেই প্রথম দেখা যায় মেসির ‘সুপারহিরো’ উদ্যাপন। সেদিন মেসিকে গোলের পর থরের মতো হাত বাড়িয়ে অনেকটা ‘গলা চেপে ধরা’র ভঙ্গিতে উদ্যাপন করতে দেখা যায়, যা মূলত থরের হাতুড়ি ধরে রাখার অনুকরণে করা। এরপর দ্বিতীয় রাউন্ডে অরল্যান্ডো সিটির বিপক্ষে মেসিরা পান ৩–১ গোলের জয়।
সেদিন মেসি উদ্যাপন করেন ব্ল্যাক প্যান্থার ‘ওয়াকান্ডা ফরএভার’ এর অনুকরণে। এটিতে মেসিকে দেখা যায় দুই হাতকে আড়াআড়িভাবে বুকের ওপর রেখে উদ্যাপন করতে। আর আজ মেসিকে দেখা গেল স্পাইডার–ম্যানের মতো করে উদ্যাপনে। যেখানে গোলের পর মেসিকে দেখা যায় স্পাইডার–ম্যানের মতো করে জাল ছড়ানোর ভঙ্গি করতে।
এর আগে মেসি যখন প্রথমবার থরের মতো করে উদ্যাপন করলেন, সেটি তখন অনেকেই বুঝতে পারেননি। পরে তাঁর সেই সেই উদ্যাপনের ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন স্ত্রী আন্তোনেল্লা রোকুজ্জো। ইনস্টাগ্রামে রোকুজ্জো লিখেছিলেন, ‘থরের দিন।’ তাঁর এই উদ্যাপন নিয়ে ফুটবলভিত্তিক সংবাদমাধ্যম গোল ডটকম জানায়, মেসির ছেলেরা মার্ভেল ভক্ত। তাদের উদ্দেশ করেই মেসির এমন উদ্যাপন। কিন্তু মেসির এসব উদ্যাপনে আরও নানা ‘ষড়যন্ত্রতত্ত্ব’ও সামনে এসেছে।
থরের মতো উদ্যাপনের পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কেউ কেউ থরের থিমে করা অ্যাডিডাসের মার্ভেল বলের ছবি পোস্ট করে জানতে চেয়েছেন, মেসির এমন উদ্যাপন অ্যাডিডাসের প্রচারণামূলক ক্যাম্পেইনের অংশ কি না। অ্যাডিডাস আবার মেসিরও স্পনসর। অ্যাডিডাসের অবশ্য ক্যাপ্টেন আমেরিকা সংস্করণের বলও আছে।
তবে এখন পর্যন্ত ক্যাপ্টেন আমেরিকার মতো উদ্যাপন করতে দেখা যায়নি মেসিকে। এর মধ্যে মার্ভেল থিমের বলের অভিষেক হয়েছে এমএলএস অলস্টার বনাম আর্সেনালের ম্যাচে। এই বলের দাম বর্তমানে ১৭০ ডলার।
তবে ক্যাপ্টেন আমেরিকার মতো করে মেসি এখনো উদ্যাপন না করলেও, গত ১ জুলাই ইন্টার মায়ামির নতুন জার্সিতে দেখা গেছে ক্যাপ্টেন আমেরিকার ঢাল, যা সব মিলিয়ে মেসির উদ্যাপনের ক্ষেত্রে মার্ভেলের বাণিজ্যিক সম্পৃক্ততাকেই ইঙ্গিত করছে। এমএলএসের সঙ্গে অবশ্য মার্ভেলের সম্পৃক্ততা আছে। এর আগে গত জুনে এমএলএস, অ্যাডিডাস ও মার্ভেল জানায় এমএলএ মার্সেন্ডাইজে মার্ভেলের সুপারহিরোদের দেখা যাবে। সব মিলিয়ে মেসির উদ্যাপনে বাণিজ্যের যুক্ত থাকার সম্ভাবনা একেবারে উড়িয়ে দেওয়ার সুযোগ নেই।
তবে মেসির এই বিশেষ উদ্যাপনের পেছনে নিছক শিশুসুলভ আনন্দ কিংবা বাণিজ্যিক উদ্দেশ্য, যা–ই থাকুক, ভক্তদের তা নিয়ে মাথাব্যথা নেই। তাঁরা এখন তৃপ্তি নিয়ে উপভোগ করছেন মেসির গোল এবং উদ্যাপন। কে জানে, সামনের দিনগুলোতে মেসি হয়তো হাল্ক, আয়রন ম্যান, ক্যাপ্টেন আমেরিকা কিংবা গ্রোটের মতো উদ্যাপন করে যুক্তরাষ্ট্রে মেসি–উন্মাদনাকে আরও অনেক বাড়িয়ে দেবেন।
মেসি ইন্টার মায়ামির হয়ে নিজের পরের ম্যাচ খেলবেন ১৬ আগস্ট। লিগস কাপের সেমিফাইনালে মেসিদের সেই ম্যাচের প্রতিপক্ষ ফিলাডেলফিয়া। সেদিন গোল পেলে মেসি নতুন কোনো উদ্যাপন করেন কি না, সেটাই এখন দেখার অপেক্ষা।