‘খুবই কঠিন একটা দিন’ কাটল জামালদের
‘খুবই কঠিন একটা দিন’—অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে মেলবোর্নে ৭–০ গোলে উড়ে যাওয়ার পর বাংলাদেশ ফুটবল দল নিয়ে এই কথাটিই বললেন কোচ হাভিয়ের কাবরেরা। পুরো ম্যাচে ডাগআউট দাঁড়িয়ে ছটফট করেছেন বাংলাদেশের স্প্যানিশ কোচ। বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের দ্বিতীয় রাউন্ডের প্রথম ম্যাচটিই যে তাঁর শিষ্যদের কঠিন এক পরীক্ষা হতে যাচ্ছে, সেই ইঙ্গিত আগেই দিয়েছিলেন তিনি। বলেছিলেন এ ম্যাচে কেবল জোর লড়াইটাই করে যেতে পারে বাংলাদেশের ফুটবলাররা। ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে ১৮৩ নম্বর স্থানে থেকে ২৭ নম্বর দলের সঙ্গে পেরে ওঠাটা যে বড্ড কঠিন—সেটি নিয়ে কোনো সন্দেহই ছিল না কারও।
ম্যাচের সময় ডাগআউটে কাবরেরাকে অসহায় লাগছিল। বিশেষ করে দলীয় শক্তি তো বটেই, ব্যক্তিগত স্কিলে যোজন যোজন ব্যবধানে এগিয়ে থাকা অস্ট্রেলীয় ফুটবলারদের সঙ্গে টক্করে যখন তারিক কাজী, বিশ্বনাথ ঘোষ, মোহাম্মদ হৃদয়, মুরাদ হাসানরা মার খাচ্ছিলেন, তখন স্প্যানিশ কোচের চোখেমুখে ফুটে উঠছিল অসহায়ত্ব। হয়তো তিনি আশা করেছিলেন, কয়েক মাস ধরে কুয়েত, লেবানন, মালদ্বীপ, আফগানিস্তানের মতো প্রতিপক্ষের সঙ্গে তাঁর শিষ্যরা যেমন খেলেছে, অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে সেই ফুটবলটাই তাঁরা খেলবেন। কিন্তু অস্ট্রেলিয়া যে শক্তিমত্তায় কতটা এগিয়ে, সেটিই আজ মেলবোর্নে বুঝতে পেরেছে বাংলাদেশ দল।
কাবরেরা অবশ্য ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশের ৭–০ গোলে হারার ব্যাপারটাকে খুব অপ্রত্যাশিত কিছু বলতে চাননি। তবে তিনি স্বীকার করেছেন, আরও একটু লড়াই যদি দলের খেলোয়াড়েরা করতে পারতেন, তাহলে স্কোরলাইনটা আরও কিছুটা ‘ভদ্রোচিত’ হলেও হতে পারত, ‘ছেলেদের জন্য খুবই কঠিন একটা দিন আজ। কিন্তু এমন কিছু অপ্রত্যাশিত ছিল না। প্রথমার্ধে খেলোয়াড়দের কাছ থেকে আরও একটু লড়াই আশা করেছিলাম। আমরা আজ পুরোপুরি উড়ে গেছি।’
অস্ট্রেলীয় দলের খেলোয়াড়েরা শারীরিক দিক দিয়ে অসহায় বানিয়ে দিয়েছিলেন বাংলাদেশের ফুটবলারদের। ম্যাচের আগে কোচ কাবরেরা এই শঙ্কাটিই করেছিলেন। আজ ম্যাচে সেই শঙ্কা অনুমিতভাবেই সত্যে পরিণত হয়েছে, ‘অস্ট্রেলিয়া খুবই কঠিন প্রতিপক্ষ। খেলোয়াড়দের জন্য এমন দলের বিপক্ষে খেলাটা খুবই কঠিন ব্যাপার ছিল। ব্যক্তিগত স্কিলই শুধু নয়, শারীরিক দিক দিয়েও তারা এগিয়ে ছিল।’
বাংলাদেশ দল অস্ট্রেলিয়া, সৌদি আরব, ইরান, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়ার মতো প্রতিপক্ষের সঙ্গে খুব বেশি খেলে না। ২০২০ সালের ডিসেম্বরে ২০২২ বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে কাতার ছিল বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ। ঢাকায় কর্দমাক্ত মাঠে লড়াকু ফুটবল খেললেও (২–০) দোহায় গিয়ে ৫–০ গোলে হেরেছিল বাংলাদেশ। সে ম্যাচেও এমনই অসহায় অবস্থায় ছিলেন বাংলাদেশের ফুটবলাররা। অনেকেই বলেন এমন প্রতিপক্ষের সঙ্গে ম্যাচের ফল, খেলোয়াড়দের আত্মবিশ্বাসকে প্রচণ্ডভাবে আঘাত করে। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে আজ ৭–০ গোলে হারের পর দেশে ফিরেই ২১ নভেম্বর লেবাননের সঙ্গে পরের ম্যাচের প্রস্তুতি নিতে হবে দলকে। আজকের এই হার খেলোয়াড়দের আত্মবিশ্বাসে কোনো নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে কি না, এমন প্রশ্ন করা হয়েছিল কাবরেরাকে। স্প্যানিশ এই কোচ অবশ্য তেমন কিছু আশঙ্কা করছেন না, ‘খেলোয়াড়েরা ইতিবাচকই আছে মানসিকভাবে। আমি মনে করি না অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৭ গোল খাওয়া লেবাননের সঙ্গে পরের ম্যাচে কোনো নেতিবাচক প্রভাব রাখবে।’
অস্ট্রেলিয়া বাংলাদেশকে কোনো সুযোগই দেয়নি বলে মনে করেন কাবরেরা, ‘আমরা চেয়েছিলাম অস্ট্রেলিয়ার খেলোয়াড়দের ভুলের সুযোগ নেব। কিন্তু তারা তো কোনো ভুলই করেনি। বল পায়ে তারা খুব ঠান্ডা মাথায় সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমরা জানতাম শারীরিক পার্থক্যটা অনেক হবে। মাঠে দেখা গেছে সেই সুবিধাটাই আমাদের ওপর নিয়েছে অস্ট্রেলিয়া। ম্যাচে পুরোপুরি আধিপত্য বিস্তার করে খেলেছে তারা।’