প্রথম ম্যাচে কেমন খেললেন হামজা
বাংলাদেশ ০ : ০ ভারত
সুনীল ছেত্রী কতটা ভয়ংকর, অন্তত বাংলাদেশের কোচ হাভিয়ের কাবরেরা ভালো করেই জানেন। সেটা বোধ হয় মাঠে নামার আগে হামজা চৌধুরীকে ভালোভাবে বুঝিয়ে বলেছেন কোচ। হামজাও পুরো ৯০ মিনিট অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছেন নিজের দায়িত্ব। ম্যাচের পুরো সময় ভারতের এই অভিজ্ঞ ফরোয়ার্ডকে বোতলবন্দী রাখার পাশাপাশি পুরো মাঠেই খেলেছেন হামজা।
জওহরলাল নেহরু স্টেডিয়ামে আজ হামজাকে নিয়েই শুরুর একাদশ সাজান কাবরেরা। লাল রঙের ৮ নম্বর জার্সি পরে প্রথমবার দেশের হয়ে মাঠে নামেন প্রিমিয়ার লিগ খেলা এই খেলোয়াড়। এমনিতে ডিফেন্সিভ মিডফিল্ড পজিশনে খেলতে অভ্যস্ত হলেও বাংলাদেশের হয়ে অভিষেক ম্যাচে তাঁর পজিশন ছিল সেন্ট্রাল মিডফিল্ড। ক্যারিয়ারে এর আগে এই পজিশনে খুব বেশি না খেললেও নিজেকে নিংড়ে দিয়েছেন হামজা। খেলা তৈরির পাশাপাশি প্রতিপক্ষের আক্রমণ ঠেকানো, বল কাড়া ও পাস দেওয়াতেও দুই পা ছুরির মতো চলেছে হামজার।
রক্ষণভাগ, মাঝমাঠ ও আক্রমভাগ—হামজা মূলত এ তিনটি জায়গায় সময় বুঝে সেতুবন্ধের কাজটা করেছেন। এ কারণে গোটা মাঠে তাঁকে দৌড়াতেও হয়েছে অনেক বেশি। কখনো সেন্ট্রাল মিডফিল্ডে, কখনো সেন্টারব্যাকে খেলার নিয়ন্ত্রণ ধরে রেখেছেন, আবার কখনো প্রতিপক্ষের স্ট্রাইকার সুনীল ছেত্রীকে মার্কিং করার কাজও করেছেন। শুধু ছেত্রী কেন, বাকিরাও হামজার শ্যেনদৃষ্টি এড়াতে পারেননি। ২৬ মিনিটে যেমন বাঁ প্রান্ত ধরে আক্রমণে উঠেছিলেন ভারতের শুভাশীষ বোস। দৌড়ে গিয়ে তাঁর কাছ থেকে বল কাড়েন হামজা। নইলে ফাঁকা উইং ধরে বিপদ তৈরি করতে পারতেন শুভাশীষ।
প্রথমার্ধে সব মিলিয়ে ৩টি গোলের সুযোগ তৈরি করেন হামজা। এর মধ্যে ম্যাচের ১০ মিনিটে তাঁর কর্নার থেকে ভারতের গোলকিপারের হাত ঘুরে বল বক্সে পেয়েও কাজে লাগাতে পারেননি হৃদয়। ৪০ মিনিটে বাংলাদেশের গোললাইনে গিয়ে দাঁড়ান হামজা। উদ্দেশ্য, সুনীল ছেত্রীকে চোখে চোখে রাখা। শেষ পর্যন্ত সেটা তিনি সফলভাবেই করেছেন। কর্নার থেকে ভেসে আসা বল কিংবা উড়ে আসা ক্রসে ছেত্রী নাগাল পাওয়ার আগেই বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছেন হামজা। প্রথমার্ধে পাওয়া বাংলাদেশের চারটি কর্নারের সব কটিই নেন হামজা। সেট পিস কিংবা ডেড বলে বাংলাদেশের ভরসা তিনি হয়েছেন ঠিক অভিষেক ম্যাচ থেকেই। হামজার নেওয়া চারটি কর্নারের মধ্যে দুটি থেকে গোলের সুযোগ তৈরি হয়েছিল, যা কাজে লাগাতে পারেননি বাংলাদেশের ফরোয়ার্ডরা।
দ্বিতীয়ার্ধে দেখা মিলেছে বুদ্ধিদীপ্ত ও গতিময় হামজার। ৪৭ মিনিটে যেমন বাঁ উইং ধরে আক্রমণে উঠেছিলেন লেফট উইঙ্গার লিস্টন কোলাচো। পেছন থেকে তাঁকে আটকানোর চেষ্টা করেও পারেননি রহমত মিয়া। বাঁ উইং তখন ফাঁকা। বিপদ বুঝে অনেকটা দূর থেকেই দৌড়ে এসে কোলাচোকে ট্যাকল করে ফেলে দেন হামজা। খালি চোখে দেখে মনে হয়েছিল, হলুদ কার্ড দেখতে পারেন। কিন্তু ট্যাকলটি নিখুঁত হওয়ায় লেবাননের রেফারি হুসেইন এহিয়া বাঁশি বাজাননি। এরপর ৫৮ মিনিটে কর্নার থেকে বাংলাদেশের বক্সে বল পেয়েছিলেন ছেত্রী। লাফিয়ে তাঁর হেডের আগেই বল ক্লিয়ার করেন হামজা। এই ‘গেম সেন্স’ অতীতে খুব কমই দেখা গেছে বাংলাদেশ দলের খেলায়। চার মিনিট পর আবারও ছেত্রীর সামনে বাধা হয়ে দাঁড়ান হামজা। পোস্টে শট নিতে দেননি।
ভারতের বিপক্ষে ম্যাচটা বাংলাদেশ জিততে পারেনি শেষ পর্যন্ত। তবে গোলশূন্য ড্র ম্যাচেও লাল-সবুজের জার্সিতে দারুণ অভিষেক হয়েছে ইংলিশ লিগ খেলা এই ফুটবলারের।
নির্ধারিত সময় শেষ হওয়ার ১০ মিনিট আগে হামজাকে দেখা গেল অন্য চরিত্রে। এবার তিনি আক্রমণে। তবে সতীর্থদের সহায়তা সেভাবে না পেয়ে নিচে নেমে আসেন। নির্ধারিত সময় শেষ হওয়ার ৪ মিনিট আগে বাংলাদেশের বক্স থেকে দুবার বল ‘ক্লিয়ার’ করেন হামজা। যোগ করা সময়েও বাংলাদেশকে দুবার বিপদের হাত থেকে বাঁচান হামজা। আরও একটি বিষয় পরিষ্কার বোঝা গেছে, বিরতির পর বাংলাদেশ ও ভারতের খেলোয়াড়েরা ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলেন কিছুটা। দৌড় দেখেই বোঝা গেছে, বেশ কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু হামজাকে দেখে মনে হয়েছে, কিছুই হয়নি। ঠান্ডা মাথায় শুধু নিজের কাজটা করেছেন। দৌড়েছেন পুরো মাঠেই। হাসিও লেগে ছিল মুখে।
কিন্তু ড্র করায় সেই হাসিটা আর জয়ের হাসিতে রূপান্তরিত হয়নি। হামজা একা ভালো খেললেও একের পর এক গোলের সুযোগ নষ্ট করেছে বাংলাদেশ। যে কারণে জাতীয় দলে তাঁর অভিষেক ম্যাচে শুধু জয়টাই পাওয়া হলো না।