মোরছালিনের দারুণ গোলে লেবাননকে রুখে দিল বাংলাদেশ
শেষ বাঁশির সঙ্গে সঙ্গে লেবাননের কয়েকজন ফুটবলার হতাশায় শুয়ে পড়লেন মাঠে। এমন ড্র তাঁরা হয়তো আশা করেননি। কিন্তু বাংলাদেশের কাছে ১-১ ব্যবধানের এই ড্র জয়ের সমান। তাই তো বিশ্বনাথ, ইসা ফয়সালরা দুই হাত মেলে আনন্দ প্রকাশ করলেন প্রায় ৭ হাজার দর্শকে ঠাসা কিংস অ্যারেনার গ্যালারির সামনে।
২০১১ বিশ্বকাপ বাছাইয়ে ঢাকায় লেবাননকে ২-০ গোলে হারিয়েছিল বাংলাদেশ। লেবাননের ফিফা র্যাংকিং তখন ১৫৯। বাংলাদেশের ১৪৭। ১২ বছর পর র্যাংকিংয়ে এখন বাংলাদেশের চেয়ে ৭৯ ধাপ এগিয়ে লেবানন। শক্তিতে তারাই এগিয়ে। ফলে লেবাননের জয়ই ছিল এই ম্যাচে স্বাভাবিক প্রত্যাশা। কিন্তু আরেকটি বিশ্বকাপ বাছাইয়ে ফেবারিট হয়েও বাংলাদেশকে হারাতে পারেনি মধ্যপ্রাচ্যের দেশটি। পিছিয়ে পড়েও শেষ পর্যন্ত পয়েন্ট ভাগ করে মাথা উঁচু করেই মাঠ ছেড়েছে বাংলাদেশ।
প্রথমার্ধটা কেটেছে গোলশূন্য। এই অর্ধের শেষের দিকে চোট পাওয়ায় গোলকিপার মিতুল মারমার জায়গায় দ্বিতীয়ার্ধে বদলি গোলকিপার আসেন মেহেদি হাসান। কিন্তু জাতীয় দলে তাঁর অভিষেকটা স্মরণীয় হলো না। ৬৮ মিনিটে আপাতনিরীহ একটা বল তাঁর হাত ফসকে বেরিয়ে যায়। সে বল সহজে জালে ঠেলেন বদলি ফরোয়ার্ড মাজেদ ওসমান। অনেকটা খেলার ধারার বিরুদ্ধ গোল খেয়েছে বাংলাদেশ।
কিন্তু এই গোলের হতাশায় বেশিক্ষণ ভুগতে হয়নি বাংলাদেশকে। প্রায় মাঝমাঠ থেকে ফয়সাল আহমেদ ফাহিম বল দেন শেখ মোরছালিনকে। মোরছালিন এককভাবে বলটা নিয়ে বক্সের বাইরে থেকে দারুণ শটে গোল করেন (১-১)। তাঁর গোলে জেগে ওঠে স্টেডিয়ামের গ্যালারি। বাকি সময়ে দুদলই চেষ্টা করেছে গোলের। কিন্তু দুই দলকেই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে এক পয়েন্ট নিয়েই।
এই ড্রয়ে ২০২৬ বিশ্বকাপ বাছাইয়ে দুই ম্যাচে ১ পয়েন্ট পেয়েছে বাংলাদেশ। লেবানন আগের ম্যাচে ফিলিস্তিনের সঙ্গে ড্র করে। দুই ম্যাচে তাদের পয়েন্ট ২। তবে ঢাকায় জয়ের আশা নিয়েই এসেছিল লেবানন। সেই জয় না পাওয়া তাঁদের কাছে হতাশাই। যদিও জেতার মতো ফুটবল খেলতে পারেনি সফরকারীরা। লেবাননের ক্রোয়েশিয়ান কোচ বলেছিলেন ঘরের মাঠে বাংলাদেশকে হারানো কঠিন হবে। সত্যিই তা–ই হলো।
লেবানন যে গতিতে ম্যাচটা শুরু করেছিল, ১৭-১৮ মিনিট পর তা আর ধরে রাখতে পারেনি। হয়তো কন্ডিশনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে সমস্যা হয়েছে তাদের। আর বাংলাদেশ মাঝমাঠ খেলা তৈরি করেছে। আক্রমণে মোরছালিন, ফাহিমরা বেশ ভুগিয়েছেন লেবানন রক্ষণকে। জিতলে পারলে ভালো হতো। তবে এই ড্র বাংলাদেশের আত্মবিশ্বাস বাড়াবে। আগামী ২১ মার্চে ফিলিস্তিনের সঙ্গে ঢাকাতেই পরের ম্যাচ খেলবে বাংলাদেশ।
লেবাননের শুরুর চাপ সামলে আজ বাকি সময়টা বাংলাদেশ খেলেছে দারুণ আক্রমণাত্মক ফুটবল। মনেই হয়নি বাংলাদেশের সামনে লেবাননের মতো দল। উল্টো গোল নষ্ট না করলে ম্যাচটা জিততে পারত হাভিয়ের কাবরেরার দলই। প্রথমার্ধ শেষে বাংলাদেশে পুড়েছে তিনটি সুযোগ নষ্টের আফসোসে। ভালো জায়গায় বল পেয়েও দুবার গোল করতে পারেননি একাদশে ফেরা ফরোয়ার্ড শেখ মোরছালিন। ৮৯ মিনিটে নষ্ট করেছেন আরেকটি সুযাগ। পোস্টের খুব কাছ থেকে বল মেরেছেন বাইরে। সুযোগ হারিয়েছেন মিডফিল্ডার সোহেল রানাও। রাইটব্যাক বিশ্বনাথের হেড গেছে লেবানন গোলকিপারের হাতে। দুই হলুদ কার্ডের কারণে খেলতে না পারা উইংগার রাকিব হোসেনের অভাব অনুভূত হয়েছে এই সময়।
সর্বশেষ অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষ ১৬ নভেম্বর মেলবোর্নে যে একাদশ নামিয়েছিলেন হাভিয়ের কাবরেরা, তা থেকে চারটি পরিবর্তন নিয়ে লেবাননের বিপক্ষে আজ একাদশ সাজান বাংলাদেশ কোচ। রক্ষণে হাসান মুরাদের জায়গায় শাকিল হোসেন। দুই হলুদ কার্ডের কারণে বাইরে থাকা আরেক ডিফেন্ডার সাদ উদ্দিনের জায়গায় ইসা ফয়সাল। একই কারণে আগের ম্যাচে মাঠের বাইর থাকা উইংগার রাকিব হোসেনের বদলে শেখ মোরছালিন। এ ছাড়া লাল কার্ডের কারণে অস্ট্রেলিয়া ম্যাচ খেলতে না পারা মিডফিল্ডার মজিবর রহমান জনির জায়গায় একাদশে ফেরেন সোহেল রানা জুনিয়র।
তবে অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়াকে তুলে নেওয়া হয়েছে ৬০ মিনিটে। মাঠে আসেন রবিউল। আক্রমণও তখন বৈচিত্র্য আসে বাংলাদেশের আর তা বিভ্রান্তও করেছে লেবাননকে।
বাংলাদেশের একাদশ: মিতুল মারমা, শাকিল হোসেন, বিশ্বনাথ ঘোষ, তারিক কাজী, ইসা ফয়সাল, মোহাম্মদ হৃদয়, সোহেল রানা, সোহেল রানা জুনিয়র, জামাল ভূঁইয়া, শেখ মোরছালিন, ফয়সাল আহমেদ ফাহিম