বর্ণবাদী এই আচরণ যে বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, প্রমাণ করতে ভিডিও দিলেন ভিনিসিয়ুস
এটাই কি প্রথম—ভ্যালেন্সিয়ার মাঠে গত পরশু রিয়াল মাদ্রিদের ব্রাজিলিয়ান তারকা ভিনিসিয়ুস জুনিয়র বর্ণবাদী আচরণের শিকার হওয়ার পর প্রশ্নটি উঠেছে। কেউ কেউ এটাকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে উল্লেখ করেছেন। স্প্যানিশ লা লিগার প্রধান হাভিয়ের তেবাস আবার এর দায় ভিনিসিয়ুসের ওপরই চাপানোর চেষ্টা করেছেন। সব মিলিয়ে অনেকটাই বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন ভিনি।
এমন বর্ণবাদী আক্রমণের শিকার তিনি এবারই প্রথম হননি, এর আগেও অনেকবার তাঁর সঙ্গে বর্ণবাদী আচরণ করা হয়েছে এবং এগুলো কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়—ভিনিসিয়ুস এটাই বলতে চেয়েছেন। ভিনি নিজের কথা প্রমাণ করতে ইনস্টাগ্রামে একটি ভিডিও পোস্ট করেন। সে ভিডিওতে তাঁর সঙ্গে ঘটে যাওয়া বর্ণবাদী আচরণের ঘটনাগুলো একত্র করার চেষ্টা করেছেন তিনি।
শুধু যে ভিডিওই পোস্ট করেছেন, তা নয়। ভিনি তাঁর নিজের মনের কথাগুলোও লিখেছেন ভিডিওর পাশে। ব্রাজিলিয়ান তারকা তাঁর সঙ্গে ঘটে যাওয়া বর্ণবাদী আচরণের বর্ণনা দিতে গিয়ে শুরুটা করেছেন এভাবে, ‘প্রতিটি অ্যাওয়ে ম্যাচই একেকটা বিস্ময়। এটা অনেক মৌসুম ধরে চলছে। হত্যার হুমকি, পুতুল টানিয়ে রাখা, অনেক অপরাধমূলক স্লোগান...সবকিছুই লেখা আছে।’
নিজের সঙ্গে ঘটে যাওয়া এসব ঘটনার প্রতিকার শুরু থেকেই চেয়ে এসেছেন ভিনিসিয়ুস। বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন সময় প্রতিবাদ করেছেন তাঁর ব্রাজিল দলের সতীর্থ নেইমার, রিয়াল মাদ্রিদের সতীর্থ থিবো কোর্তোয়া ও কোচ কার্লো আনচেলত্তিসহ অনেকেই। কিন্তু প্রতিকার দূরে থাক, দিনের পর দিন রিয়ালের প্রায় প্রতিটি অ্যাওয়ে ম্যাচে বর্ণবাদী আচরণের শিকার হয়ে আসছেন ভিনি।
বর্ণবাদী আচরণে ত্যক্তবিরক্ত ভিনিসিয়ুস সবশেষ ভ্যালেন্সিয়ার মাঠে ঘটে যাওয়া ঘটনা নিয়ে যেন একটু বেশিই ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন। এবার তিনি স্পেন, তথা স্পেনের ফুটবলকেই এর জন্য দায়ী করে বসেন। ওই ঘটনার পর ভিনিসিয়ুস টুইট করেছিলেন, ‘এটা প্রথম, দ্বিতীয় কিংবা তৃতীয়বার নয়। লা লিগায় বর্ণবাদ স্বাভাবিক ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। খোদ কর্তৃপক্ষ ও স্পেনের ফুটবল ফেডারেশন এটা মনে করে এবং সমর্থকদের দলগুলো সাহস জোগায়। বলতে বাধ্য হচ্ছি, স্পেন আজ ব্রাজিলিয়ানদের কাছে বর্ণবাদী দেশ হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠছে।’
ভিনিসিয়ুসের এই টুইটের পর তেবাস উল্টো ব্রাজিলিয়ান তারকাকেই দোষারোপ করে পাল্টা টুইট করেন, ‘বর্ণবাদের বিরুদ্ধে লা লিগা কী করে এবং করতে পারে, এ বিষয়ে যেহেতু ব্যাখ্যা করা হয়নি, আমরা আপনাকে সেটা ব্যাখ্যা করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু নিজেরই অনুরোধ করা নির্ধারিত দুটি তারিখে আপনি উপস্থিত হননি। লা লিগার সমালোচনা ও অপমান করার আগে নিজের সম্পর্কে সঠিকটা জানা উচিত। নিজেকে অন্যের সুবিধা অনুযায়ী ব্যবহার হতে দেবেন না। নিশ্চিত করুন যে উভয় পক্ষের কর্মদক্ষতা এবং আমরা একত্রে যা করছি, সে সম্পর্কে আপনার সম্পূর্ণ জানাশোনা আছে।’
তেবাসের এ টুইট মেনে নিতে পারেননি ভিনিসিয়ুস। তিনি এর জবাব কালই দিয়েছেন। আরেকটি টুইটে তিনি লেখেন, ‘বর্ণবাদের সমালোচনা করার বদলে আবারও লা লিগা প্রেসিডেন্ট সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আমাকে আক্রমণ করলেন। আপনি যত কথাই বলুন, কিছু না পড়ার ভান করুন, আপনার চ্যাম্পিয়নশিপের সুনামে ধাক্কা লেগেছে। আপনার পোস্টের নিচের মন্তব্য দেখুন, অবাক হবেন...। (এ বিষয় থেকে) আপনার নিজেকে সরিয়ে নেওয়া বর্ণবাদেরই সমান্তরাল। আপনি আমার বন্ধু নন যে বর্ণবাদ নিয়ে কথা বলব। আমি চাই ব্যবস্থা গ্রহণ ও শাস্তি। হ্যাশট্যাগে আমার কিছু যায় আসে না।’
ভিনিসিয়ুস এখানেই থেমে না থেকে বাংলাদেশ সময় কাল রাতে ইনস্টাগ্রামে তাঁর সঙ্গে ঘটে যাওয়া বিষয়গুলো নিয়ে ভিডিও বানিয়ে তা পোস্ট করেছেন। সে ভিডিওতে অভিযোগের সুরে লেখেন, ‘সব সময় একই কথা বলা হয় যে “বিচ্ছিন্ন ঘটনা, একজন সমর্থক”। না, এগুলো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। ধারাবাহিক অধ্যায়গুলো স্পেনের কয়েকটি শহরে ঘটেছে (এবং এমনকি টিভি শোতেও।)’
ভিনিসিয়ুস এরপর ভিডিও পোস্ট করার উদ্দেশ্য জানান এভাবে, ‘ভিডিও এর প্রমাণ। এখন আমার প্রশ্ন, এই বর্ণবাদীদের ক জনের নাম ও ছবি ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে। আমি বলছি, শূন্য (একজনেরও নয়)।’
ভিনিসিয়ুস এখানেই থামেননি। এরপর তিনি লেখেন, ‘এই লোকগুলোকে অপরাধী হিসেবে চিহ্নিত করা এবং খেলাটির জন্য ক্লাবগুলোকে শাস্তি না দেওয়ার জন্য আর কি বাকি থাকে? পৃষ্ঠপোষকেরা লা লিগা কর্তৃপক্ষকে এ নিয়ে নালিশ জানায় না কেন? প্রতি সপ্তাহে এই বর্বরতা সম্প্রচার করতে টেলিভিশনগুলোর কী লজ্জা হয় না? সমস্যা গুরুতর ও যোগাযোগ কোনো কাজে আসছে না। অপরাধকে সমর্থন দিতেই আমাকে দোষারোপ করা।’