‘টিনো লিভ্রামেন্টো তাহলে হাত দুটো কী করবে? পেছনে মুড়িয়ে রাখবে? রাগে গা জ্বলছে’—কথাটা নিউক্যাসল ইউনাইটেডের সাবেক মিডফিল্ডার জার্মেইন জেনাসের। চ্যাম্পিয়নস লিগে গতকাল রাতে নিউক্যাসলের বিপক্ষে বিতর্কিত এক পেনাল্টির পর ফুটবল পণ্ডিত হিসেবে কথাটা বলেছেন টিএনটি স্পোর্টসকে। তাঁর রাগের মাত্রা বোঝা যায় পরের কথায়, ‘খেলোয়াড়েরা সর্বস্ব নিংড়ে দিয়েছে, ঐতিহাসিক এক জয় হওয়া উচিত ছিল এটি। নিউক্যাসলকে সর্বস্বান্ত করা হয়েছে।’
ঘটনা পিএসজির মাঠ পার্ক দে প্রিন্সেসে। ‘এফ’ গ্রুপের ম্যাচে স্বাগতিকদের বিপক্ষে ২৫ মিনিটে আলেক্সান্দার আইজ্যাকের গোলে এগিয়ে ছিল নিউক্যাসল। কিন্তু যোগ করা সময়ের ৮ মিনিটে পোলিশ রেফারি শিমন মারচিনিয়াক ইংলিশ ক্লাবটির বিপক্ষে পেনাল্টির বাঁশি বাজান।
নিউক্যাসলের বক্সের ভেতর দাঁড়িয়ে থাকা উসমান দেম্বেলে সতীর্থের পাস থেকে ক্রস করেছিলেন। তখন তাঁকে কড়া পাহারায় রেখেছিলেন নিউক্যাসল ফুলব্যাক টিনো লিভ্রামেন্টো। দেম্বেলের ক্রস থেকে বল লিভ্রামেন্টোর শরীরে লেগে হাতের ওপর পড়ে। এরপরই পেনাল্টির আবেদন করেন পিএসজির খেলোয়াড়েরা। রেফারি শিমন মারচিনিয়াক ভিডিও অ্যাসিস্ট্যান্ট রেফারি (ভিএআর) প্রযুক্তির সহায়তা নেন এবং মনিটরে ঘটনাটি পুনর্মূল্যায়নের পর পেনাল্টির সিদ্ধান্ত দেন। স্পটকিক থেকে গোল করে পিএসজিকে সমতায় ফেরান কিলিয়ান এমবাপ্পে।
পয়েন্ট ভাগাভাগিতে নিউক্যাসলের শেষ ষোলোয় ওঠার আশা বেশ কঠিন হয়ে গেল। গ্রুপে নিজেদের শেষ ম্যাচে এসি মিলানকে হারানোর পাশাপাশি নিউক্যাসলকে প্রার্থনা করতে হবে বরুসিয়া ডর্টমুন্ড যেন পিএসজিকে হারাতে পারে। কিন্তু পিএসজির বিপক্ষে গতকাল জিতলে শেষ ম্যাচে গিয়ে ভাগ্যটা নিজেদের হাতেই রাখতে পারত নিউক্যাসল। ৫ ম্যাচে ৭ পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় পিএসজির সঙ্গে ২ পয়েন্ট ব্যবধানে পিছিয়ে তৃতীয় নিউক্যাসল (৫ ম্যাচে ৫ পয়েন্ট)।
ম্যাচ শেষে পেনাল্টির সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন তোলেন নিউক্যাসল কোচ এডি হাউ। সংবাদকর্মীদের বলেছেন, ‘আমার মতে এটা সঠিক সিদ্ধান্ত ছিল না। বলটা তার হাতে লেগেছে। কিন্তু আমার মনে হয় না তার হাত অপ্রত্যাশিত অবস্থানে ছিল। আমার মতে এটা বাজে সিদ্ধান্ত এবং খুবই হতাশার। কারণ, ওই মুহূর্তে ম্যাচে খুবই কম সময় অবশিষ্ট ছিল। কিন্তু এখন এ নিয়ে আমাদের আর কিছুই করার নেই।’
ভিডিও রিপ্লেতে দেখে মনে হয়েছে, লিভ্রামেন্টো দেম্বেলের ক্রস কোনোভাবেই হাত দিয়ে থামানোর চেষ্টা করেননি। বলটা শরীরে লাগার সময় তাঁর হাত স্বাভাবিক অবস্থানেই ছিল। সেখান থেকে হাতে লাগায় আসলে তাঁর কিছুই করার ছিল না। টিএনটি স্পোর্টসে ফুটবল–পণ্ডিত হিসেবে কাজ করা রেঞ্জার্সের সাবেক স্ট্রাইকার অ্যালি ম্যাককোয়িস্ট বলেছেন, ‘এটা কোনোভাবেই পেনাল্টি হয় না। এটার জন্য পেনাল্টি দিলে সেটা লজ্জার।’
এই ম্যাচের রেফারি শিমন মারচিনিয়াককে তাঁর কাজে বিশ্বের অন্যতম সেরা হিসেবেই বিবেচনা করা হয়। সর্বশেষ বিশ্বকাপ ফাইনাল পরিচালনা করেছেন। বাঁশি বাজিয়েছেন গত জুনে চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনালেও। বিবিসি ব্যাখ্যা করেছে তাঁর পেনাল্টির সিদ্ধান্ত দেওয়ার কারণ।
ফুটবল খেলার আইন অনুসারে সংবাদমাধ্যমটি জানিয়েছে, হ্যান্ডবল দেওয়ার ব্যাপারে রেফারিরা তিনটি বিষয়কে গুরুত্ব দেন। ১. খেলোয়াড় ‘ইচ্ছাকৃতভাবে’ বলের দিকে হাত বাড়িয়েছেন কি না? ২. বল থেকে খেলোয়াড় কতটা দূরে কিংবা কাছে ছিলেন এবং বল কতটা গতিতে হাতে আঘাত করেছে। ৩. হাত ‘অস্বাভাবিক অবস্থান’–এ ছিল কি না? বিবিসি জানিয়েছে, রেফারি বুঝেছেন লিভ্রামেন্টো ইচ্ছাকৃতভাবে হাত বাড়াননি কিংবা খুব দ্রুত প্রতিক্রিয়াও না দেখালেও তাঁর হাত অস্বাভাবিক অবস্থানে ছিল।
জয়ের সুবাস পেতে পেতে পেনাল্টি হজম করে হেরে যাওয়ায় তাই হতাশাই ঝরল হাউয়ের কণ্ঠে, ‘খেলোয়াড়দের জন্য খারাপ লাগছে। কঠিন পরিস্থিতিতে তারা যেভাবে পারফর্ম করেছে, এরপর ওই (পেনাল্টির) সিদ্ধান্তে ভাগ্য আর আমাদের হাতে রইল না।’