বায়ার্নের রেকর্ড ছুঁয়ে রিয়াল–আর্সেনালের কীর্তি ছোঁয়ার অপেক্ষায় লেভারকুসেন
অবিশ্বাস্য! বায়ার লেভারকুসেনের চলতি মৌসুমের পারফরম্যান্সকে এভাবেই এক শব্দে বিশেষায়িত করা যায়। মৌসুম শুরুর আগে কেউ যদি বলত, লেভারকুসেন অপরাজিত থেকে বুন্দেসলিগার শিরোপা জিতবে, তবে তাঁকে হয়তো কেউ কেউ পাগল বলেও ডাকতে পারত! লেভারকুসেনের কোনো অন্ধভক্তও এমন কিছু ভাবতে পারেননি।
তবে সবকিছু যেন উল্টে দিয়েছে একসময় শিরোপা না জেতার কারণে ‘নেভারকুসেন’ বলে পরিচিতি পাওয়া দলটি। যারা এ মৌসুমে লিগে টানা ২২ ম্যাচ অপরাজিত। যে ছন্দে জাবি আলোনসোর দলটি এগিয়ে যাচ্ছে, তাতে সবাইকে টপকে লেভারকুসেনের অপরাজিত দল হিসেবে শিরোপা জয় সময়ের ব্যাপার বলেই মনে হচ্ছে। যা এখন মনে করিয়ে দিচ্ছে, আর্সেনাল-জুভেন্টাস-রিয়াল মাদ্রিদের মতো দলকেও। ইউরোপের শীর্ষ ৫ লিগে এই দলগুলোও একসময় কোনো ম্যাচ না হেরে লিগ শিরোপা জিতেছিল।
লেভারকুসেনের অপরাজিত শিরোপা জয় অবশ্য এখনো দূরের বাতিঘর, তবে এরই মধ্যে দারুণ কিছু মাইলফলক নিজেদের করে নিয়েছে তারা। বুন্দেসলিগার কোনো দলের সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে অপরাজিত থাকার রেকর্ডটি এত দিন পর্যন্ত এককভাবে দখলে ছিল বায়ার্ন মিউনিখের। গতকাল রাতে হাইডেনহেইমকে ২-১ গোলে হারিয়ে সেই রেকর্ডে এখন ভাগ বসিয়েছে লেভারকুসেন।
২০১৯-২০ ও ২০২০-২১ মৌসুমে সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে টানা ৩২ ম্যাচে অপরাজিত ছিল বায়ার্ন। এখন লেভারকুসেন সব মিলিয়ে এ মৌসুমেই অপরাজিত আছে ৩২ ম্যাচে। আগামী শনিবার মাইঞ্জের বিপক্ষে হার এড়াতে পারলে বায়ার্নের সেই রেকর্ডকে ছাড়িয়ে এককভাবে শীর্ষে উঠবে তারা।
এরপর লেভারকুসেনের সামনে থাকবে ‘অপরাজিত’ লিগ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার লক্ষ্য। যা তাদের পৌঁছে দেবে অন্য এক উচ্চতায়। এমনকি এ মৌসুমে অপরাজিত থেকে ট্রেবল (বুন্দেসলিগা, ইউরোপা লিগ ও জার্মান কাপ) জেতার সুযোগও আছে লেভারকুসেনের সামনে।
ইউরোপে প্রথম অপরাজিত থেকে লিগ চ্যাম্পিয়ন দল হওয়ার গৌরব অর্জন করেছিল ইংলিশ ক্লাব প্রেস্টন নর্থ এন্ড। ইংল্যান্ডের শীর্ষ স্তরের লিগে টানা ২২ ম্যাচ জিতে সেবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল দলটি। এরপর ১৯১২-১৩ মৌসুমে ২১ ম্যাচ অপরাজিত থেকে ইতালির সর্বোচ্চ স্তরের লিগ জিতেছিল প্রো ভার্সেলি। এরপর ১৯২২-২৩ মৌসুমে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটায় ইতালিয়ান ক্লাব জেনোয়া।
তারা লিগ জেতে ২৮ ম্যাচ অপরাজিত থেকে। অপরাজিত থেকে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পরের দুটি ঘটনা দেখা গিয়েছিল স্পেনে। ১৯২৯-৩০ মৌসুমে অ্যাথলেটিক বিলবাও এবং ১৯৩১-৩২ মৌসুমে রিয়াল মাদ্রিদ ১৮ ম্যাচে অপরাজিত থেকে জেতে লা লিগা শিরোপা। ১৯৪২-৪৩ মৌসুমে জার্মানিতে এই কীর্তি প্রথম করে দেখায় ড্রেসডনার। যারা প্রথম স্তরের ১৮ ম্যাচের পাশাপাশি জার্মান চ্যাম্পিয়নশিপের পাঁচ ম্যাচে অপরাজিত থাকে।
ইতালিয়ান লিগ সিরি ‘আ’তে ১৯৭৮-৭৯ মৌসুমে অপরাজিত থেকে মৌসুম শেষ করে পেরুগিয়া। কিন্তু অপরাজিত থেকেও কিন্তু তারা লিগ জিততে পারেনি। ৩০ ম্যাচের ১১টিতে জিতলেও ১৯টিতে ড্র করে দলটি। ফলে তাদের পয়েন্ট হয় ৪১।
অন্যদিকে এসি মিলান ৩০ ম্যাচের ৩টিতে হারলেও জিতে নেয় ১৭ ম্যাচ এবং ড্র করে ১০ ম্যাচ। ফলে ৪৪ পয়েন্ট নিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয় তারাই। ১৯৮২-৮৩ মৌসুমে ২৬ ম্যাচের লিগে অপরাজিত থেকে শিরোপা জেতে পূর্ব জার্মানির বার্লিনার এফসি দিনামো। ১৯৯১-৯২ মৌসুমে ৩৪ ম্যাচে অপরাজিত থেকে লিগ জেতে ইতালিয়ান ক্লাব এসি মিলান।
এরপর ২০০৩-০৪ সালে আর্সেনালের ৩৮ ম্যাচে অপরাজিত থাকার কীর্তি তো ‘ইনভিনসিবল’ হিসেবে ইতিহাসের পাতায় খোদাই হয়ে আছে। আর্সেন ওয়েঙ্গারের আর্সেনালের পর আর কোনো ইংলিশ ক্লাব এখন পর্যন্ত এই কীর্তি করে দেখাতে পারেনি।
তবে ২০১১-১২ মৌসুমে আর্সেনালের সমান ৩৮ ম্যাচ অপরাজিত থেকে সিরি ‘আ’র চ্যাম্পিয়নস হয় জুভেন্টাস। এরপর অবশ্য ইউরোপীয় শীর্ষ পাঁচ লিগে আর কোনো দল এ ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটাতে পারেনি। তবে এবার লেভারকুসেনের সামনে সুবর্ণ সুযোগ। সে জন্য আর ১২ ম্যাচে অপরাজিত থাকলেই চলবে জাবি আলোনসোর দলকে।
এদিকে হাইডেনহেইম ম্যাচ দিয়ে লেভারকুসেনের দায়িত্ব নেওয়ার ৫০০তম দিন পূরণ করলেন আলোনসো। যদিও এ নিয়ে বিশেষ উচ্ছ্বাসে ভাসতে চান না স্প্যানিশ এই কোচ, ‘আমি ৫০০ দিন পূরণ উদ্যাপন করব না। আমি ম্যাচ, পারফরম্যান্স এবং ফল নিয়ে সন্তুষ্ট। আমরা ভালো অবস্থায় আছি। আমরা এগিয়ে যেতে চাই এবং পরের ম্যাচে মনোযোগ রাখতে চাই। সব মিলিয়ে পারফরম্যান্স ভালো। আমি সত্যিই আনন্দিত।’