২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

সাগরিকার জন্য এবারের ঈদটা অন্য রকম

সাগরিকা—মেয়েদের ফুটবলের সবচেয়ে সম্ভাবনাময় খেলোয়াড় হিসেবে ধরা হচ্ছে যাকেপ্রথম আলো

মোসাম্মৎ সাগরিকা পার্থক্যটা বুঝতে পারছেন খুব ভালোভাবেই।

এক বছরের কম সময়ের ব্যবধান। কিন্তু বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ নারী ফুটবল দলের এই স্ট্রাইকারের কাছে গত বছরের ঈদের চেয়ে এবারেরটা পুরোপুরি অন্য রকম। গত ফেব্রুয়ারিতে ঢাকায় মেয়েদের সাফ অনূর্ধ্ব-১৯ ফুটবলের সেরা খেলোয়াড় আর সর্বোচ্চ গোলদাতার দুটি ট্রফিই নিজের করে নিয়েছেন। সেই সঙ্গে দেশকে বানিয়েছেন ভারতের সঙ্গে যৌথ চ্যাম্পিয়ন। ফাইনালে ৯৩ মিনিট পর্যন্ত ১-০ গোলে পিছিয়ে থাকা বাংলাদেশকে বাঁচিয়েছেন গোল করে।

সেই গোলের পর কত কাণ্ড! টাইব্রেকার, সাডেন ডেথে ১১-১১ সমতা। এরপর তো সেই ম্যাচ কমিশনারের কুখ্যাত ভুল। সাগরিকার কাছে সবকিছুই স্বপ্নের মতো।

ঠাকুরগাঁওয়ের রানীশংকৈল থেকে উঠে আসা এই ফুটবলারকে এরই মধ্যে মেয়েদের ফুটবলের সবচেয়ে সম্ভাবনাময় খেলোয়াড় হিসেবে ধরা হচ্ছে। এবারের ঈদ তাঁর ও তাঁর পরিবারের জন্য এসেছে অন্য রকম আবহ নিয়ে।

সাগরিকার বাবা লিটন আলী এলাকার দোকানি। মা আনজুয়া বেগম পুরোদস্তুর গৃহিণী। সামান্যতম সচ্ছলতাও পরিবারটিতে কখনোই ছিল না। এর মধ্যে মেয়ের ফুটবলার হওয়ার স্বপ্ন দেখা। বাবার সঙ্গে এ নিয়ে মনোমালিন্য; সব বাধা পেরিয়ে নিজের চেষ্টাতেই এই পর্যন্ত আসা—এসব সবারই জানা। তবে সাগরিকার নতুন গল্প হচ্ছে আরও স্বপ্নে দেখার। নিজেকে অন্য উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার। ঈদের পরই মেয়েদের ফুটবল লিগ শুরু হবে। সাগরিকা খেলবেন নাসরিন স্পোর্টস একাডেমির হয়ে। এর মধ্যেই ঈদের ছুটিতে বাড়ি যাওয়া। বাড়িতে চলছে মহাযজ্ঞ। গ্রামের বাড়িতে উঠছে পাকা দালান।

আরও পড়ুন

সাফে দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের পুরস্কার হিসেবে ঠাকুরগাঁওয়ের জেলা প্রশাসক আর রানীশংকৈলের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার উদ্যোগে চলছে এই নির্মাণকাজ। সাগরিকাই জানালেন সে কথা, ‘বাড়িতে এসে দেখি সব ওলট-পালট। ডিসি আর ইউএনও স্যার আমাদের বাড়িতে পাকা দালান তুলে দিচ্ছেন সরকারি টাকায়। আমি সাফে ভালো খেলেছি বলেই নাকি এই পুরস্কার। এসব দেখলে একটু ভয়ই লাগে। সবাই আমাকে এত ভালোবাসে, আমাকে তো নিজের পারফরম্যান্স আরও ভালো করতে হবে। এটা আমার জন্য বিরাট দায়িত্বের ব্যাপার।’

সাফ অনূর্ধ্ব-১৯ ফুটবলের সেরা খেলোয়াড় ছিলেন সাগরিকা
প্রথম আলো

ঈদ করতেই বাড়ি গেছেন। এবারের ঈদটা একেবারেই অন্য রকম মনে হচ্ছে তাঁর, ‘আগের বছরগুলোর সঙ্গে বেশ পার্থক্য। আর্থিক ব্যাপারটা তো আছেই। বেশ কিছু স্বপ্ন পূরণের পর এই ঈদ হওয়ায় খুশির মাত্রাটা আরও বেশি। মা–বাবা আর ভাইকে টুকটাক কিছু কিনে দিতে পেরেছি। কী যে ভালো লেগেছে। নিজের জন্য এখনো কিছু কিনিনি। দেখি চাঁদ রাতের আগে কিনব।’

আরও পড়ুন

সাগরিকা শুধু ভালো ফুটবলই খেলেন না। রান্নার প্রতিও তাঁর দারুণ আগ্রহ। জানালেন সেটিও, ‘এবার রান্না করব। খুব ভালো করতে পারি না, তবে চেষ্টা করি। মাকে এত দিন সাহায্য করেছি। এবার ভাবছি, নিজেই কিছু রান্নাবান্না করে তাঁদের খাওয়াব।’

আসন্ন লিগ নিয়েও অনেক স্বপ্ন সাগরিকার, ‘লিগটা তো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নিজের পারফরম্যান্স ধরে রাখা, এটাকে আরও ওপরের দিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য লিগে ভালো খেলাটা জরুরি। আমার ক্লাব নাসরিন স্পোর্টস একাডেমি আমার ওপর আস্থা রেখেছে। আমি সর্বোচ্চটা দিয়ে চেষ্টা করব সেই আস্থার প্রতিদান দিতে।’

আনন্দময় ঈদটা সেই মিশনে নামার আগেই সাগরিকার জন্য বড় টনিক।

আরও পড়ুন