ভবিষ্যতের ‘হ্যাজি’ গড়ছেন কার্পেন্থিয়ানসের ম্যারাডোনা
বাঁ পায়ের দুর্দান্ত কারিকুরি, নজরকাড়া ড্রিবলিং আর খেলা তৈরির অসাধারণ দক্ষতার জন্যই রোমানিয়ান কিংবদন্তি ফুটবলার গিওর্গি হ্যাজিকে বলা হতো ‘কার্পেন্থিয়ানসের ম্যারাডোনা’—১৯৯৪ বিশ্বকাপে যাঁর পায়ের জাদু মুগ্ধ করেছিল ফুটবলপ্রেমীদের। সেই বিশ্বকাপে হ্যাজির অসাধারণ নৈপুণ্যে ফুটবল-বিশ্বকে চমকে দিয়ে রোমানিয়া ওঠে কোয়ার্টার ফাইনালে। হ্যাজি করেন তিন গোল। এখন পর্যন্ত এটাই বিশ্বকাপে রোমানিয়ার সর্বোচ্চ সাফল্য। ২০০০ সালে জাতীয় দলকে বিদায় জানান হ্যাজি। রোমানিয়াও ১৯৯৮ সালের পর আর বিশ্বকাপের মূল পর্বে জায়গা করে নিতে পারেনি।
তবে হ্যাজি রোমানিয়াকে আবার বিশ্বকাপে জায়গা পাইয়ে দেওয়ার পথ তৈরির চেষ্টা করছেন। খেলোয়াড়ি জীবনকে বিদায় জানানোর পর মনোযোগ দিয়েছেন কোচিংয়ে। ২০০৯ সালে গড়ে তুলেছেন ‘গিওর্গি হ্যাজি ফুটবল একাডেমি’, যেটা এখন দেশটির ভবিষ্যৎ ফুটবলার গড়ার অন্যতম সূতিকাগার।
বর্তমানে হ্যাজির একাডেমিতে ৬ থেকে ১৯ বছর বয়সী দুই শতাধিক তরুণ ফুটবলার প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। এ ছাড়া ডজনের বেশি ফুটবলার রোমানিয়ার শীর্ষ পর্যায়ের পেশাদার লিগেও দল পেয়েছেন, যাঁদের অনেকে আবার দলের অধিনায়কও। পথচলার ১৫ বছরের মধ্যে হ্যাজির একাডেমির এমন সাফল্যে অনেকেই বাহবা দিচ্ছেন। রিয়াল মাদ্রিদ, বার্সেলোনা, গ্যালাতাসারাইয়ের মতো ক্লাব মাতানো হ্যাজির নিখুঁত পরিকল্পনার জন্যই তাঁর একাডেমির এমন দ্রুত এগিয়ে যাওয়া। প্রতিষ্ঠার পর একাডেমির জন্য ২ কোটি ৫০ লাখ ইউরোর বেশি অর্থ খরচ করেছেন রোমানিয়ার সর্বকালের সেরা এই ফুটবলার।
বর্তমানে রোমানিয়ান ক্লাব পারুল কনস্ট্যান্টার কোচ হ্যাজি, যে ক্লাবের প্রায় ৭০ শতাংশের মালিকও তিনি। ২০২২–২৩ মৌসুমে রোমানিয়ান সুপার লিগায় চ্যাম্পিয়নও হয় তাঁর দল। ২০০১ থেকে কোচিংয়ের সঙ্গে জড়িত হ্যাজি। দীর্ঘ এই সময়ে ডাগআউট সামলানোর সঙ্গে একাডেমির দেখভালও করছেন। এর মধ্যে গত ১২ মার্চ দেশটির প্রেসিডেন্ট ইলি বোলোজানের হাত থেকে রোমানিয়ার সর্বোচ্চ সম্মান ‘নাইট’ উপাধি পান হ্যাজি। সেদিন সাক্ষাৎকার দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন তিনি, যা নিয়ে পরে বেশ আলোচনাও হয়।
২০০০ সালে ইউরোর কোয়ার্টার ফাইনাল খেলা রোমানিয়া অনেক দিন ধরেই ইউরোপের ফুটবলের শ্রেষ্ঠত্বের প্রতিযোগিতায়ও ছন্দে ছিল না। ২০০৪ সালে তারা ইউরোতে অংশ নেওয়ার সুযোগই পায়নি। ২০০৮ সালে সুযোগ পেলেও গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় নেয়। পরের আসরে আবার দর্শকসারিতে রোমানিয়া। ২০২৪ ইউরোতে দারুণ সম্ভাবনা জাগিয়ে রোমানিয়া ছিটকে পড়ে শেষ ষোলো থেকে। যে দলের নয়জনই আবার হ্যাজির একাডেমির, যেখানে তাঁর ছেলে ইয়ানিস হ্যাজিও আছেন। শুধু তা–ই নয়, গত বছর জাতীয় দলের ৬০ শতাংশ গোল ও অ্যাসিস্টে অবদান রেখেছেন হ্যাজির একাডেমির ফুটবলাররা।
আধুনিক সব সুযোগ–সুবিধাসহ ১৭ হেক্টর জায়গা নিয়ে গড়ে উঠেছে হ্যাজির একাডেমি। যেখানে মাঠ আছে ১৩টি। যে কারণে প্রশিক্ষণে থাকা ২০০ ফুটবলারের প্রায় এক–তৃতীয়াংশই একসঙ্গে অনুশীলন করতে পারে। গত ৫ ফেব্রুয়ারি ছিল হ্যাজির ৬০তম জন্মদিন। সেদিন নিজের একাডেমি নিয়ে গর্ব করেই কিছু কথা বলেন এই কিংবদন্তি। বিশ্বের অন্য কোনো একাডেমির তুলনায় হীনম্মন্যতাও নেই তাঁর। বরং ভুলের চেয়ে অর্জনই বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে করছেন হ্যাজি, ‘ভুল গোনা বন্ধ করেন...আপনাকে ভুলের বদলে প্রাপ্তিগুলোকে দেখতে হবে।’ মূলত তাঁর একাডেমি থেকে রোমানিয়ার ফুটবল কী পাচ্ছে, সেটাই হয়তো বোঝাতে চেয়েছেন তিনি। এরপরই বললেন, ‘আপনি গতকাল যা করেছেন, আজ তা গুরুত্বপূর্ণ নয়। এটা ইতিহাস। আপনাকে প্রতিদিনই আরও ভালো করতে হবে।’