মেসির আর্জেন্টিনার পর শিকার মার্তার ব্রাজিল—যে কীর্তি শুধুই হার্ভি রেনারের
এক সময় রাতে ঝাড়ুদারের কাজ করে সকালের সূর্য উঠতেই ফুটবল নিয়ে ছুটে যেতেন মাঠে। তাঁর স্বপ্ন পূরণ করতে। যে স্বপ্নের খোঁজে সেই দিনগুলোয় ছুটে বেড়াতেন, সেগুলো অনেক আগেই বাস্তবে রূপ দিয়েছেন। শুধু রূপই দেননি, হার্ভি রেনার অনেক প্রথমের সঙ্গেও জড়িয়ে ফেলেছেন নিজের নাম।
সেই রেনার এবার আরেকটি প্রথমের সঙ্গে নিজেকে জড়িয়েছেন। ফুটবল ইতিহাসের প্রথম কোচ হিসেবে বিশ্বকাপে ছেলে ও মেয়ে উভয় দলের হয়ে ম্যাচ জিতেছেন ৫৪ বছর বয়সী ফরাসি।
গত বছর কাতার বিশ্বকাপে সৌদি আরবের কোচ ছিলেন রেনার। নিজেদের প্রথম ম্যাচেই লিওনেল মেসির আর্জেন্টিনাকে ২–১ ব্যবধানে হারিয়ে চমকে দেয় তাঁর দল। আর কাল ফ্রান্স নারী দলের কোচ হিসেবে বিশ্বকাপে জিতেছেন নিজের প্রথম ম্যাচ। ব্রিসবেনে ফরাসি মেয়েরা ব্রাজিলকে হারিয়েছে সেই একই ব্যবধানে; ২–১! রেফারি শেষ বাঁশি বাজাতেই অনন্য কীর্তি গড়ে ফেলেছেন রেনার।
রেনারের আগে বিশ্বকাপে ছেলে–মেয়ে দুই দলকেই কোচিং করানোর অভিজ্ঞতা আছে শুধু জন হার্ডম্যানের। ২০০৭ ও ২০১১ নারী বিশ্বকাপে হার্ডম্যানের অধীনে খেলেছে নিউজিল্যান্ড। ২০১৫ নারী বিশ্বকাপে ছিলেন কানাডার দায়িত্বে।
পরে কোচ হন কানাডা ছেলেদের দলের। গত বছর কাতারে তাঁর অধীনে বিশ্বকাপ খেলেছে কানাডার ছেলেরা। তবে কানাডার মেয়েদের কোয়ার্টার ফাইনালে তুলতে পারলেও নিউজিল্যান্ডের মেয়ে ও কানাডার ছেলেদের দল তাঁর কোচিংয়ে বিশ্বকাপে কোনো ম্যাচ জেতেনি। হার্ডম্যান না পারলেও গেরোটা অবশেষে খুলেছেন রেনার।
২০১২ সালে ‘আন্ডারডগ’ হিসেবে খেলতে গিয়ে দিদিয়ের দ্রগবার আইভরি কোস্টকে হারিয়ে জাম্বিয়াকে আফ্রিকা কাপ অব নেশনসের শিরোপা এনে দেন রেনার। ৩ বছর পর সেই আইভরি কোস্টকে জেতান একই শিরোপা। অনেক প্রথমের শুরু সেখান থেকেই; প্রথম কোচ হিসেবে দুটি ভিন্ন দলকে আফ্রিকা মহাদেশের সেরা বানিয়ে।
২০১৮ রাশিয়া বিশ্বকাপে মরক্কোকে মূলপর্বে জায়গা পাইয়ে দেন, যা এই শতাব্দীতে তাদের প্রথম বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ। পরের বছর হন সৌদি আরবের কোচ। সৌদি আরব ২০২২ কাতার বিশ্বকাপের মূলপর্বে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে রেনারের অধীনেই। দলটিকে কাতারের টিকিট পাইয়ে দেওয়ার পথে জেতান ১৮ ম্যাচ। এখানেও জড়িয়ে যান প্রথমের সঙ্গে। প্রথম বিদেশি কোচ হিসেবে সৌদি আরবকে জেতান সর্বাধিক ম্যাচ।
এরপরের গল্প তো সবারই জানা, যা কি না রূপকথাকেও হার মানিয়েছে। কাতার বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচেই ফেবারিট আর্জেন্টিনাকে হারিয়ে দেয় সৌদি আরব। যেটাকে বিশ্বকাপ ইতিহাসের সবচেয়ে বড় অঘটন আর সৌদি ফুটবলের সবচেয়ে বড় সাফল্য বিবেচনা করা হয়। যদিও পোল্যান্ড ও মেক্সিকোর কাছে হেরে গ্রুপপর্ব থেকে ছিটকে পড়ে সৌদি আরব। আর মেসির আর্জেন্টিনা পরের ৬ ম্যাচ জিতে তিন যুগ পর বিশ্বকাপ ঘরে তোলে।
তবে রেনার কাতার বিশ্বকাপ দিয়েই সবার নজরে আসেন। এ বছর কোরিনেঁ দিয়াকারের জায়গায় ফরাসি মেয়েদের দায়িত্ব পান। আর কাল মার্তা–দেবিনিয়ার ব্রাজিলকে হারিয়ে নিজেকে নিয়ে গেছেন নতুন উচ্চতায়।
কীর্তিটা অবশ্য আগের ম্যাচেই হতে পারত। কিন্তু জ্যামাইকার বিপক্ষে নিজেদের প্রথম ম্যাচে দুর্দান্ত খেলেও ড্র করে ফ্রান্স। তাই রেনারের অপেক্ষাও একটু বেড়েছিল।