‘খলনায়ক’ রাশফোর্ডের ‘নায়ক’ হওয়ার পালা

ইংলিশ ফরোয়ার্ড মার্কাস রাশফোর্ডছবি: এএফপি

দৃষ্টি গোলপোস্টে স্থির। ছোট ছোট পায়ে এগিয়ে এসে পেনাল্টি শটটি নিলেন মার্কাস রাশফোর্ড। গোলরক্ষক উল্টো দিকে লাফ দিয়েছিলেন বটে, তবে বল চলে গেল পোস্টের বাইরে। রাশফোর্ডও বুঝলেন সর্বনাশ যা হওয়ার হয়ে গেছে। দুই হাতে মুখ ঢেকে হতাশায় কয়েক মুহূর্ত নুইয়ে রইলেন।

পুরো ঘটনাটা ঘটতে কত সময়ই–বা আর লেগেছে! তবে এটুকুই যে জীবনে বড় ঝড় ডেকে আনতে যাচ্ছে, তা বোঝা যাচ্ছিল রাশফোর্ডের অভিব্যক্তিতেই। তাঁর এই পেনাল্টি মিসেই যে ২০২০ ইউরোর ফাইনালে স্বপ্নভঙ্গ হয় ইংলিশদের।

সেই ফাইনালের পর খলনায়ক হয়ে গেলেন রাশফোর্ড, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বর্ণবাদী আক্রমণের শিকার হতে থাকলেন। পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ হলো, বর্ণবাদের প্রতিবাদে ভালোবাসার ফিরতি বার্তা নিয়ে রাস্তায় নামতে হলো রাশফোর্ড–ভক্তদের।

রাশফোর্ডের জন্য লড়াইটা অবশ্য একেবারেই নতুন কিছু নয়। শৈশবে খুব কাছ থেকেই দেখেছেন মায়ের লড়াই। সিঙ্গেল পেরেন্ট হিসেবে পাঁচ সন্তানের মৌলিক চাহিদাগুলো নিশ্চিত করতেই হিমশিম খেতে হতো মা মেলানিয়ে মেনার্দকে। এক সাক্ষাৎকারে রাশফোর্ড বলেছিলেন, সংসার চালাতে একসঙ্গে তিনটি চাকরি করতে হতো তাঁর মাকে, তাতেও অবশ্য খাবারের অভাব পুরোপুরি মিটত না।

আরও পড়ুন

জীবনের কঠিন এই বাস্তবতা রাশফোর্ড ভুলেছেন পায়ে বল জড়িয়ে নিয়ে। অন্য কোনো খেলনা না থাকায় সারা দিন উঠানে খেলে সময় কাটত তাঁর। সেই বলটি নিয়েও আছে মজার গল্প। পুরোপুরি সাদা সেই বলটিতে কালো মার্কার দিয়ে লিখে দিয়েছিলেন, ‘মার্কাসের বল’। যে বলটি রাশফোর্ড কখনোই হাতছাড়া করতেন না। ছেলের ভেতরে প্রস্ফুটিত হওয়ার অপেক্ষায় থাকা ফুটবল-প্রতিভাটা হয়তো আঁচ করতে পেরেছিলেন তাঁর মা। মাত্র ছয় বছর বয়সে তাঁকে ভর্তি করিয়ে দেন ফ্লেচার মোস রেঞ্জার্স এফসিতে।

তবে সেখানে শুরুটা করেছিলেন মূলত গোলরক্ষক হিসেবে। সে সময় গোলবারের নিচে তাঁর আদর্শ ছিল সাবেক ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড গোলরক্ষক টিম হাওয়ার্ড। সেই ক্লাবকে বয়সভিত্তিক ফুটবলে শিরোপা জিতিয়ে রাশফোর্ড ইউনাইটেডের চোখে পড়েন। ২০০৫ সালে যোগ দেন ‘রেড ডেভিল’দের দলে। সেই যে শুরু আর ফিরে তাকাতে হয়নি।

আরও পড়ুন

২০১৫ সাল পর্যন্ত খেলেছেন ইউনাইটেডের বয়সভিত্তিক দলে। ২০১৫ সালে অভিষেক হয় ক্লাবটির মূল দলে। পরের বছর খুলে যায় জাতীয় দলের দরজাও। তবে জীবনের পরের পর্বটাও উত্থান-পতনে ভরপুর। ২০১৮ সালে জাতীয় দলের হয়ে বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে খেলেছেন রাশফোর্ড। তিন বছর পর ইউরোর ফাইনালে পেনাল্টি মিস করে হয়ে গেলেন খলনায়ক।

জীবন এখন দায় শোধের বড় সুযোগের সামনে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে রাশফোর্ডকে। কাতার বিশ্বকাপে দারুণ ছন্দেও আছেন এই ফরোয়ার্ড। গ্রুপ পর্বের তিন ম্যাচে ৩ গোল করে যৌথভাবে শীর্ষে আছেন রাশফোর্ড। আজ সেনেগালের বিপক্ষে শেষ ষোলোর ম্যাচেও তিনি দলের বড় ভরসা। এখন শুধু ছন্দ ধরে রেখে জ্বলে ওঠার অপেক্ষা।