অনুতপ্ত তপু প্রায়শ্চিত্তের অপেক্ষায়
তপু বর্মণের তর সইছে না আর!
সেপ্টেম্বর মাসে মালদ্বীপে বসুন্ধরা কিংসের হয়ে এএফসি কাপ খেলতে গিয়ে শৃঙ্খলাবিরোধী কাণ্ডে জড়িয়ে নিষিদ্ধ হয়েছিলেন। সেই নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ শেষ হবে ৩১ ডিসেম্বর।
যদিও গুঞ্জন আছে, তাঁর আর গোলকিপার আনিসুর রহমান জিকোর নিষেধাজ্ঞা নাকি তুলে নিতে যাচ্ছে কিংস। শিগগিরই তাঁদের দুজনকে অনুশীলনেও যোগ দিতে বলা হয়েছে। তপুর শাস্তির মেয়াদ ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত থাকলেও আনিসুরের নিষেধাজ্ঞা ২০২৪ সালের মার্চ পর্যন্ত।
তপু এখন প্রহর গুনছেন মাঠে ফেরার। সেপ্টেম্বরের মালদ্বীপ–অধ্যায় তিনি জীবন থেকে মুছেই ফেলতে চান, ‘আমি বলে বোঝাতে পারব না, কতটা অনুতপ্ত আমি। কাজটা খুব বাজে হয়েছিল। ক্লাব আমাকে শাস্তি দিয়েছে, আমি মাথা পেতে নিয়েছি। এখন মাঠে ফেরার অপেক্ষা করছি। যদিও জানি ফেরাটা সহজ হবে না। আমাকে লড়েই ফিরতে হবে।’
বাংলাদেশ দলের জার্সিতে ৫৩টি ম্যাচ খেলেছেন তপু। মাঠের ভূমিকা ডিফেন্ডারের হলেও ৬টি গোলও আছে তাঁর। জাতীয় দলের রক্ষণের সবচেয়ে বড় ভরসাই বলা হয় তাঁকে। এএফসি কাপ খেলতে গিয়ে কয়েকজন ক্লাব সতীর্থের সঙ্গে শৃঙ্খলাবিরোধী যে কাণ্ডে জড়িয়ে পড়েছিলেন, সেটি হতবাকই করেছিল ফুটবলপ্রেমীদের। তৌহিদুল আলম সবুজ, রিমন হোসেন, আনিসুর রহমান ও শেখ মোরছালিনরা ছিলেন সঙ্গী। রিমন আর মোরছালিনের অপরাধ কম হওয়ায় তাঁদের জরিমানা করেই ছেড়ে দিয়েছে কিংস। তপু, আনিসুর আর তৌহিদুলকেই ভিন্ন মেয়াদে নিষিদ্ধ করা হয়। তপু আর আনিসুরের ফেরার সম্ভাবনা প্রবল হলেও তৌহিদুলের নিষেধাজ্ঞা মৌসুমজুড়েই।
নিষিদ্ধ থাকার দিনগুলো তপুর জন্য কতটা কঠিন ছিল, সেটি তাঁর মুখেই শুনুন, ‘খুব কঠিন সময় ছিল। জাতীয় দলকে খুব মিস করেছি। মিস করেছি ক্লাবের খেলাও। এএফসি কাপে কী দুর্দান্ত কয়েকটি ম্যাচ খেলল আমার ক্লাব। মালদ্বীপের সঙ্গে বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের ম্যাচ দুটি খেলতে না পারার কষ্ট আমাকে আজীবন পোড়াবে। এরপর লেবানন আর অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে দুই ম্যাচ। টিভিতে খেলা দেখেছি, কিন্তু মন খুব খারাপ ছিল। নিজের দোষেই এমনটা হয়েছে। তবে এটা আমার জন্য খুব বড় শিক্ষা।’
তপু জানেন, ফেরার লড়াইটা তাঁর একার। তবে জাতীয় দল ও ক্লাব কোচরা তাঁকে ফেরার প্রক্রিয়ায় থাকতে প্রেরণা জুগিয়েছেন বলে জানান এই ডিফেন্ডার, ‘নিষিদ্ধ হওয়ার পরপরই জানতাম ফেরার লড়াইটা আমার একারই। জাতীয় দলের কোচ হাভিয়ের কাবরেরা আর কিংস কোচ অস্কার ব্রুজোন দুজনই আমাকে এটা বলেছিলেন। দুই কোচের সঙ্গেই আমার কথা হয়েছে। তাঁরা আমাকে যে সাহস দিয়েছেন, সেটি অতুলনীয়। আমি ফিটনেস ট্রেনিং করেছি নিজে নিজে, নিজেকে ফিট রাখতে চেয়েছি। দীর্ঘ সময় মাঠের বাইরে থাকার অভিজ্ঞতা আমার আগেও আছে। চোটের কারণে এক বছর বাইরে কাটিয়েছি।’
জাতীয় দলে ফেরার লড়াই যথেষ্ট কঠিন এ নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই, ‘আমার অনুপস্থিতিতে দল খুব ভালো করেছে। আমার বদলে যারা খেলেছে, সবাই ভালো করেছে। তাই আমি জানি ফেরাটা খুব কঠিন হবে আমার জন্য। নিজেকে প্রমাণ করেই ফিরতে হবে। সেই মানসিক প্রস্তুতি আমার আছে। এখন নিজের পারফরম্যান্স দিয়েই প্রায়শ্চিত্তটা আমাকে করতে হবে।’
তপুর সেই পারফরম্যান্সটার অপেক্ষাতেই এখন দেশের ফুটবল।