ইউরোপিয়ান গোল্ডেন শু তো হলান্ডই পাচ্ছেন, দৌড়ে ছিলেন আর কারা
‘ইউরোপিয়ান গোল্ডেন শু’ জয়ের প্রসঙ্গ উঠলে লিওনেল মেসিকে মনে পড়তে পারে। বার্সেলোনায় থাকতে ৬ বার এই পুরস্কার জিতেছেন মেসি, যা গোল্ডেন বুটের ইতিহাসে কোনো খেলোয়াড়ের সবচেয়ে বেশিবার জয়ের রেকর্ড। এবার কে জিততে পারেন? আর্লিং হলান্ড? রবার্ট লেভানডফস্কি? ভিক্টর ওসিমেন? কিলিয়ান এমবাপ্পে? নাকি নিকলাস ফুলক্রুগ?
সবার আগে ইউরোপিয়ান গোল্ডেন শু পুরস্কারটি একটু ব্যাখ্যা করে নিলে ভালো হয়। এক মৌসুমে ইউরোপিয়ান ক্লাব ফুটবলের লিগগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ গোলদাতাকে এই পুরস্কার দেওয়া হয়। ১৯৬৭–৬৮ মৌসুম থেকে পুরস্কারটি দেওয়া শুরু হয় এবং ১৯৯৭ সাল থেকে পয়েন্টের ভিত্তিতে লিগের মানও ঠিক করে দেওয়া হয়।
ইউরোপের শীর্ষ পাঁচ লিগে (প্রিমিয়ার লিগ, লা লিগা, সিরি আ, বুন্দেসলিগা ও ফ্রেঞ্চ লিগ আঁ) যেমন প্রতি গোলের জন্য ২ পয়েন্ট। র্যাঙ্কিংয়ে ষষ্ঠ থেকে ২১তম লিগে প্রতি গোলের জন্য ১.৫ পয়েন্ট এবং পরবর্তী লিগগুলোয় প্রতি গোলের জন্য ১ পয়েন্ট দেওয়া হয়। এবার দেখে নেওয়া যাক, চলতি মৌসুমে ইউরোপের শীর্ষ পাঁচ লিগে গোলের হিসেবে কে এগিয়ে?
ইউরোপিয়ান গোল্ডেন বুট জয়ে শীর্ষ পাঁচ লিগের খেলোয়াড়দের আধিপত্যই বেশি। প্রতিদ্বন্দ্বিতা বেশি হওয়ায় গোলপ্রতি পয়েন্ট অন্য লিগগুলোর চেয়ে বেশি—এই পাঁচ লিগের খেলোয়াড়েরা তাই প্রতি গোলে বাকি লিগগুলোর খেলোয়াড়দের চেয়ে এমনিতেই এগিয়ে থাকেন। ১৯৯৬–৯৭ মৌসুম থেকে হিসাব করলে দেখা যায়, এই ২৬ মৌসুমে শীর্ষ পাঁচ লিগের বাইরে মাত্র তিনটি লিগের খেলোয়াড়েরা এই পুরস্কার জিততে পেরেছেন—ডাচ লিগ (১৯৯৭–৯৮), পর্তুগিজ প্রিমেরা লিগ (১৯৯৮–৯৯, ২০০১–০২) ও স্কটিশ প্রিমিয়ার লিগ (২০০০–০১)। ২০০২ সালের পর থেকে ইউরোপের শীর্ষ পাঁচ লিগের বাইরে অন্য কোনো লিগের খেলোয়াড় পুরস্কারটি জিততে পারেননি।
ইউরোপিয়ান ক্লাব ফুটবলের মৌসুম এখন শেষের দিকে। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ, লা লিগা ও ইতালিয়ান সিরি আ–তে শিরোপার মীমাংসা হয়ে গেছে। বুন্দেসলিগায় এখনো তা না হলেও আর ২টি করে ম্যাচ আছে দলগুলোর। ফ্রেঞ্চ লিগ আঁ-তে পিএসজির জয়ও মোটামুটি নিশ্চিত। আর মাত্র ৩ ম্যাচ আছে পিএসজির। যেহেতু লিগগুলো শেষের পথে, তাই গোল্ডেন শু নিয়ে আলোচনার পালেও হাওয়া লেগেছে।
আর সেই আলোচনায় অবিসংবাদিতভাবে এগিয়ে আর্লিং হলান্ড। এবার গোল্ডেন শু যে ম্যানচেস্টার সিটির নরওয়েজিয়ান তারকার হাতে উঠছে, তা অনেকটাই নিশ্চিত।
গোলের পর গোল করে রেকর্ডের পর রেকর্ড গড়েছেন হলান্ড। ৩৬ গোল নিয়ে লিগের সর্বোচ্চ গোলদাতাও সিটি তারকা। তাঁর প্রতি গোলে যেহেতু ২ পয়েন্ট, তাই এখন পর্যন্ত মোট পয়েন্ট সংখ্যা ৭২। গোল্ডেন শু জয়ের দৌড়ে বাকিদের চেয়ে বড় ব্যবধানেই এগিয়ে হলান্ড। এ তালিকায় দ্বিতীয় প্রিমিয়ার লিগের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ গোলদাতা টটেনহামের হ্যারি কেইন। ইংল্যান্ডের হয়ে সর্বোচ্চ গোলদাতা এবারের লিগে ২৭ গোল করে মোট ৫৬ পয়েন্ট নিয়ে দুইয়ে।
তিনে ফ্রেঞ্চ লিগ আঁর সর্বোচ্চ গোলদাতা কিলিয়ান এমবাপ্পে। এ মৌসুমে এখন পর্যন্ত ২৬ গোল করে ৫২ পয়েন্ট নিয়ে গোল্ডেন শু জয়ের দৌড়ে তৃতীয় পিএসজি তারকা। ২৫ গোল করা লিঁও তারকা আলেক্সান্দার লাকাজাত্তে ৫০ পয়েন্ট নিয়ে চতুর্থ। লিগ আঁতে এমবাপ্পের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা ভালোই জমেছে লাকাজাত্তের।
পাঁচে নাপোলি তারকা ভিক্টর ওসিমেন। নাপোলির হয়ে ২৩ গোল করা নাইরেজিয়ান তারকা ইতালিয়ান সিরি আ–তে এ মৌসুমে সর্বোচ্চ গোলদাতা। গোল্ডেন শু জয়ের দৌড়ে তাঁর পয়েন্ট ৪৬।
এ তো গেল গোল্ডেন শু জয়ের দৌড়ে শীর্ষ পাঁচ খেলোয়াড়ের তথ্য–উপাত্ত। ইউরোপের শীর্ষ পাঁচ লিগে সর্বোচ্চ গোলদাতাদের একবার দেখে নেওয়া যাক—প্রিমিয়ার লিগে হলান্ড, লা লিগায় রবার্ট লেভানডফস্কি (২১ গোল), সিরি আ–তে ওসিমেন, লিগ আঁতে এমবাপ্পে ও বুন্দেসলিগায় ভেরডার ব্রেমেন তারকা নিকলাস ফুলক্রুগ (১৬)।
বার্সা তারকা লেভানডফস্কি ২১ গোল নিয়ে গোল্ডেন শু জয়ের দৌড়ে ষষ্ঠ—তাঁর পয়েন্ট ৪২। কিন্তু তাঁর চেয়ে বেশি গোল করেও ১৫তম আমাল পেলেগ্রিনো। নরওয়ের শীর্ষ লিগে এ মৌসুমে ২৫ গোল নিয়ে শীর্ষে বোদো/গ্লিমত্ ফরোয়ার্ড। তারপরও তিনি পিছিয়ে; কারণ, নরওয়েজিয়ান লিগে গোলপ্রতি পয়েন্ট ১.৫। পেলেগ্রিনোর পয়েন্ট তাই ৩৭.৫।