যে কারণে ভিনিসিয়ুসের ব্যালন ডি’অর প্রাপ্য
ভিনিসিয়ুস জুনিয়রের ব্যালন ডি’অর জেতাটা এখন শুধুই সময়ের ব্যাপার। আনুষ্ঠানিক ঘোষণাটাই যা বাকি। বড় কোনো নাটকীয়তা না ঘটলে আগামী সোমবার ব্রাজিলিয়ান উইঙ্গারের হাতেই ব্যালন ডি’অর ট্রফি দেখছে সবাই।
রিয়াল মাদ্রিদও নাকি নিজেদের ব্যালন ডি’অর–জয়ী ফুটবলারকে বরণ করে নেওয়ার প্রস্ততি সেরে রেখেছে। এখন প্যারিসের পোডিয়ামে নামটা উচ্চারিত হওয়ার অপেক্ষা। প্রশ্ন হচ্ছে, কীভাবে ব্যালন ডি’অর জয়ে বাকিদের ছাড়িয়ে গেলেন ভিনিসিয়ুস?
২০০৮ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত ব্যালন ডি’অরকে ব্যক্তিগত সম্পত্তি বানিয়ে ফেলেছিলেন লিওনেল মেসি ও ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। সে সময়টাতে এ দুজনের কেউ একজন ট্রফিটি জিততে যাচ্ছেন, তা একরকম অবধারিতই ছিল। ২০১৮ সালে লুকা মদরিচের হাত ধরেই ভাঙে এই ধারা। এখন মেসি কিংবা রোনালদোর কেউই ইউরোপে খেলেন না। মেসি খেলছেন ইন্টার মায়ামিতে এবং রোনালদো সৌদি প্রো লিগে।
এবারের ব্যালন ডি’অরের আলোচনাতেও তাঁদের নাম নেই। ব্যালন ডি’অরের আলোচনায় শুরু থেকে ভিনিসিয়ুস ছাড়া অন্যদের মধ্যে আছেন রদ্রি, জুড বেলিংহাম এবং দানি কারভাহাল। কিন্তু নানা হিসাবের পর সেটি নেমে আসে ভিনি এবং রদ্রির মধ্যে। শেষ মুহূর্তে এসে অবশ্য পাল্লা ভারী হয়েছে ভিনিসিয়ুসেরই। তাঁর হাতেই এখন ব্যালন ডি’অর দেখছেন বেশির ভাগ ফুটবলপ্রেমী।
এবারের ব্যালন ডি’অরের জন্য বিবেচিত হবে ২০২৩ সালের আগস্ট থেকে ২০২৪ সালের জুলাই পর্যন্ত সময়ের পারফরম্যান্স। অর্থাৎ একজন ফুটবলারের এই সময়কালীন পারফরম্যান্সকেই শুধু ব্যক্তিগত শ্রেষ্ঠত্বের এ পুরস্কারের জন্য বিবেচনা করা হবে। যে কারণে চলতি মৌসুম কে কীভাবে শুরু করেছেন, তা একেবারেই বিবেচ্য হবে না।
এরপরও অবশ্য কিন্তু আছে! যেহেতু ব্যালন ডি’অরে ভোট একটি গুরুত্বপূর্ণ নির্ণায়ক, সে ক্ষেত্রে রদ্রির চোট এবং বেলিংহামের ছন্দহীনতার বিপরীতে ভিনিসিয়ুসের বর্তমান পারফরম্যান্স নিশ্চিতভাবেই তাঁকে ভোট আদায়ে এগিয়ে রাখবে। গত মৌসুমের পারফরম্যান্স মূল্যায়ন করলেও ভিনিসিয়ুস ছিলেন রীতিমতো অনবদ্য।
বিশেষ করে গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তগুলোতে বারবার নিজেকে মেলে ধরেছেন এই উইঙ্গার।
সাম্প্রতিক সময়ে বড় ম্যাচের খেলোয়াড় হিসেবে বিশেষভাবে পরিচিতি পেয়েছেন ভিনিসিয়ুস। গত কয়েক মৌসুমের পারফরম্যান্স দিয়েই এই ধারণা প্রতিষ্ঠা করেছেন ভিনি, যা এবারও অটুট আছে। ডর্টমুন্ডের বিপক্ষে হ্যাটট্রিক করা ম্যাচটি তো অনেক দিন মনে রাখার মতো। বিশেষ করে শেষ দুটি গোল মৌসুমের সেরা গোলের তালিকায় থাকার মতো।
এর আগে গত মৌসুমেও দলের যখন প্রয়োজন হয়েছে,জ্বলে উঠেছেন ভিনিসিয়ুস। লা লিগায় রিয়ালের হয়ে ২৬ ম্যাচে ১৫ গোলের পাশাপাশি সহায়তা করেছেন আরও ৬ গোলে। একই মৌসুমে ভিনিসিয়ুসের মতো বেলিংহামও কিন্তু ভালোই করেছেন। এমনকি গোলের দিক থেকে বেলিংহাম কিন্তু ভিনির চেয়ে এগিয়ে ছিলেন।
লা লিগায় রিয়ালের হয়ে ২৬ ম্যাচে ১৫ গোলের পাশাপাশি ভিনিসিয়ুস সহায়তা করেছেন আরও ৬ গোলে।
তবে বেলিংহাম আলো ছড়িয়েছেন মূলত মৌসুমের শুরুর দিকে, আর ভিনিসিয়ুস মৌসুমের শেষ দিকে। অর্থাৎ মৌসুমের যে সময়টাতে ফল নির্ধারণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনা করা হয়, সে সময়টাতেই সবচেয়ে বেশি উজ্জ্বল ছিলেন ভিনিসিয়ুস। পাশাপাশি এটাও মনে রাখা প্রয়োজন যে মৌসুমের প্রথম লেগে ভিনিসিয়ুস কিন্তু চোটে পড়ে বেশ কিছু ম্যাচ মিস করেছেন।
২০২৩–২৪ মৌসুমে সম্ভাব্য ৩,৪২০ মিনিটের মধ্যে ভিনিসিয়ুস খেলেছেন ১,৮৭২ মিনিট (৫৪%)। তবে প্রায় অর্ধেক সময় না খেলেও লিগের সেরা খেলোয়াড়দের তালিকায় জায়গা করে নিয়েছেন ভিনি। মৌসুমে লিগে তাঁর ২১ গোলে অবদান রাখার কথা তো আগেই বলা হয়েছে।
এর ফলে মৌসুমে সবচেয়ে বেশি গোলে অবদান রাখা খেলোয়াড়দের মধ্যে ৬ নম্বরে জায়গা পেয়েছেন ভিনিসিয়ুস। অথচ ১,৯০০ মিনিটের কম খেলা কোনো খেলোয়াড়ই ১৫-এর চেয়ে বেশি গোলে অবদান রাখতে পারেননি। এ ছাড়া শট নেওয়া কিংবা সুযোগ তৈরিতেও ভিনিসিয়ুসের অবস্থান ছিল সেরা পাঁচে। যা তাঁর মাঠে থাকা সময়ের বিপরীতে তাক লাগিয়ে দেওয়ার মতোই।
আর চ্যাম্পিয়নস লিগে রিয়ালের ১৫তম শিরোপা জয়ের পথরেখাটাই এঁকে দিয়েছেন তো ভিনিই। কোয়ার্টার ফাইনালে ঘরের মাঠে ম্যানচেস্টার সিটির বিপক্ষে ৩–৩ গোলের ড্রয়ে করেছেন জোড়া অ্যাসিস্ট। এরপর সেমিফাইনালের প্রথম লেগে বায়ার্নের মাঠে ২–২ গোলের ড্রয়ে দুটি গোলই করেছিলেন ভিনিসিয়ুস। আর ফাইনালেও শিরোপা জয়ের পথে গোল করেছিলেন এই ব্রাজিলিয়ান। সব মিলিয়ে নকআউট পর্বে গোল এবং সহায়তা মিলিয়ে ভিনিসিয়ুসের অবদান ছিল ৬টিতে। যা নকআউট পর্বে অন্য যে কারও চেয়ে বেশি।
তবে পরিসংখ্যান এক পাশে সরিয়ে রাখলেও গত মৌসুমের শেষ ভাগে ভিনিসিয়ুসের পারফরম্যান্স অনবদ্য। লা লিগা এবং চ্যাম্পিয়নস লিগ দুটিতেই আক্রমণভাগে রিয়ালের মূল ভরসা হয়ে ওঠেন এই তরুণ। বিশেষ করে চাপের মুখে কাউন্টার অ্যাটাকগুলোতে ভিনিসিয়ুসকে থামানোই দুঃসাধ্য হয়ে উঠেছিল। পাশাপাশি ওয়ান টু ওয়ানেও ভিনি ছিলেন দারুণ সফল। শেষ পর্যন্ত তাঁর হাত ধরেই জোড়া শিরোপা জিতেছে বার্নাব্যুর ক্লাবটি।
সব মিলিয়ে গত মৌসুমের পারফরম্যান্স বিবেচনায় ভিনিসিয়ুসের এবারের ব্যালন ডি’অর জয় সময়ের ব্যাপারই বলা যায়। এমনকি পরেরবারের জন্যও যে ভিনি বুকিং দেওয়া শুরু করেছেন বললে ভুল হবে না। এখন এবারের ব্যালন ডি’অর দিয়ে ফুটবলে শুরু হতে যাওয়া ভিনি–যুগ কতটা দীর্ঘায়িত হয়, সেটাই দেখার অপেক্ষা।