বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম: ৪২ মাসেও শেষ হয়নি কচ্ছপ গতির সংস্কার কাজ

তিন বছরের বেশি সময় ধরে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে সংস্কার কাজ চলছেপ্রথম আলো

প্রধান ফটক দিয়ে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামের ভেতরে ঢোকার মুখে এক সেনাসদস্য বললেন, ভেতরে যাওয়া যাবে না। নিষেধ আছে। সাংবাদিক পরিচয় দিয়েও কাজ হলো না। তবে নতুন বছরের প্রথম দিন বিকেলবেলা ফটকের বাইরে দাঁড়িয়ে দেখা যায়, ভেতরে কাজ চলছে। কেউ মাঠের পরিচর্যা করছেন, কেউ গ্যালারি ঘষামাজা করছেন। চলছে প্রধান ফটক বর্ধিতকরণের কাজ।

স্টেডিয়ামের দোতলা ও তিনতলায় বিভিন্ন ফেডারেশনে অফিস থেকে স্টেডিয়ামের ভেতরে বসে উঁকি দিলে সামগ্রিক ছবিটা ভেসে ওঠে। তাতে দেখা যায়, ক্লাব প্যাভিলিয়নে চেয়ার বসে গেছে। পশ্চিম পাশের গ্যালারিতেও বসেছে চেয়ার। ওপরে ছাদও হয়ে গেছে। বসে গেছে ছাদের ওপর ছাউনি। কিন্তু পূর্ব পাশের গ্যালারি প্রস্তুত নয়। গ্যালারি ভাঙাচোরা, এগুলোর মেরামত চলছে। এই পাশে তাই এখনো চেয়ারই বসানো হয়নি।

তবে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের (এনএসসি) পুরোনো ভবনের সামনে দিয়ে স্টেডিয়ামে ঢোকার রাস্তাটা নতুনভাবে হয়েছে। তবে স্টেডিয়ামের চারপাশের গোলাকার রাস্তাটা এখনো হয়নি। যার অর্থ, ২০২৪ সালের মধ্যে স্টেডিয়ামের কাজ শেষ হয়নি এবং আরও সময় লাগবে।

অথচ আওয়ামী লীগ সরকারের যুব ও ক্রীড়ামন্ত্রী নাজমুল হাসান জোর দিয়েই বলেছিলেন, ডিসেম্বরের মধ্যে কাজ শেষ হবে। আগস্টে সরকার বদলের পর যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টার দায়িত্ব নেওয়া আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়াও বলেছেন একই কথা। বছর শেষে শুধু ফ্লাডলাইট বসানোর কাজটাই বাকি থাকার কথা ছিল। যা শেষ হওয়ার কথা আগামী মার্চের মধ্যে।

গ্যালারির কিছু অংশে ছাউনি বসেছে
প্রথম আলো

আগস্টে দায়িত্ব নেওয়ার পর জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে সভায় ২০২৪-এর মধ্যে কাজ শেষ করার নির্দেশ দিয়েছিলেন ক্রীড়া উপদেষ্টা। প্রকল্প পরিচালক ডিসেম্বরের মধ্যে প্রতিটি কাজ আন্তর্জাতিক মানের সঙ্গে মিল রেখে শেষ করার প্রতিশ্রুতিও দেন ক্রীড়া উপদেষ্টাকে। সর্বশেষ গত ২২ ডিসেম্বর ব্যাডমিন্টনের এক অনুষ্ঠানে এসে ক্রীড়া উপদেষ্টা বলেছিলেন, ‘ডিসেম্বরে কাজ শেষ হওয়ার কথা। আশা করি জানুয়ারি থেকে খেলা শুরু হবে।’

আরও পড়ুন

জানুয়ারি মাস শুরু হয়ে গেছে। কিন্তু এ মাসে খেলা শুরু হবে বলে মনে হচ্ছে না। যদিও মাঠ প্রস্তুত হয়ে গেছে আগেই। বসেছে অ্যাথলেটিকস ট্র্যাক, যেখানে ঘরোয়া অ্যাথলেটিকসও হয়েছে। কিন্তু ফুটবল ঠিক কবে ফিরবে, বাফুফে সভাপতি তাবিথ আউয়ালও তা পুরোপুরি বলতে পারছেন না।

প্রথম আলোকে কাল তিনি বলেছেন, ‘সেপ্টেম্বরে আমরা দায়িত্ব নেওয়ার পর স্টেডিয়াম পরিদর্শন করে বাফুফে ও এনএসসির প্রতিনিধি। তখন এনএসসির পক্ষ থেকে আমাদের বলা হয়েছিল, ২০ ডিসেম্বরের মধ্যে ফ্লাডলাইট ছাড়া সব শেষ হয়ে যাবে। কিন্তু ২০ তারিখ পার হয়েছে আরও ১১ দিন আগে। কাজ শেষ হয়নি। এখন আমরা আগামী সপ্তাহে দ্বিতীয়বার স্টেডিয়ামে পরিদর্শন করব। তারপর সব দেখে বলতে পারব, কবে এখানে খেলা হবে।’

বসেছে অ্যাথলেটিকস ট্র্যাক, যেখানে ঘরোয়া অ্যাথলেটিকসও হয়েছে। কিন্তু ফুটবলের জন্য মাঠ কবে প্রস্তুত হবে, এখনো অস্পষ্ট
প্রথম আলো

প্রকল্প পরিচালক শামছুল আলম প্রথম আলোকে কাল বলেছেন, ‘আমি জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ থেকে গত ১৯ ডিসেম্বরে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ে বদলি হয়েছি। তখন পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামের স্ট্রাকচারাল (কাঠামোগত) কাজ শেষ হয়েছে। ভেতরে দুটি রাস্তার কাজ তখন পর্যন্ত বাকি ছিল। এগুলো পিচঢালা রাস্তা। কম সময় লাগবে। তবে এনএসসির গেট থেকে স্টেডিয়াম পর্যন্ত (আরসিসি) রাস্তাটা হয়ে গেছে। পূর্ব পাশের গ্যালারিতে চেয়ার বসানো বাকি। এ পাশের গ্যালারির ওপরের ছাউনি বিদেশ থেকে আসার পথে। আশা করি, ফ্লাডলাইট ছাড়া এক মাসের মধ্যে সব কাজ শেষ হবে।’  

আরও পড়ুন

তাঁর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গ্যালারিতে ১৮ হাজার দেশি চেয়ারের অর্ধেক পশ্চিম গ্যালারিতে বসানো হয়েছে। ভিআইপি বক্সে ৪ হাজার ৮০০ বিদেশি চেয়ার লাগানোর কাজ চলছে।

শুরুতে ৬০ কোটি ৪৫ লাখ টাকার বাজেট বেড়ে শেষ পর্যন্ত হয়েছে ১৫৮ কোটি ৪৫ লাখ। প্রকল্পের টাকা বেড়েছে, পাল্লা দিয়ে বেড়েছে সময়ও। ২০২১ সালের মাঝামাঝি কাজ শুরুর পর ২০২২ সালের ৩১ ডিসেম্বর শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ২০২৪ সালের ডিসেম্বর শেষে নতুন বছর শুরু হওয়ার পরও স্টেডিয়ামের সংস্কারকাজ শেষ হয়নি। মাঝখানে পেরিয়ে গেছে ৪২ মাস!

আরও পড়ুন