গত ৯ ডিসেম্বর যে যাত্রা শুরু হয়েছিল, মাঝখানে নানা বিরতি শেষে আজ তার সমাপ্তি হয়েছে। বাংলাদেশ প্রিমিয়ার ফুটবল লিগের ২০২২-২৩ মৌসুমে দাঁড়ি পড়েছে অবশেষে। চ্যাম্পিয়ন-রানার্সআপ নির্ধারণ হয়েছিল আগেই। আজ শেষ দিনে চূড়ান্ত হলো কারা তৃতীয় হয়েছে, সেটি। আর এখানেই চমক। তৃতীয় হওয়া দলটির নাম বাংলাদেশ পুলিশ এফসি।
চ্যাম্পিয়ন বসুন্ধরা কিংস এবারের লিগে একটি মাত্র ম্যাচ হেরেছে, সেটি পুলিশের কাছেই। গত ১২ মে পাওয়া সেই জয়ের পর আর পেছনে তাকাতে হয়নি পুলিশকে। এরপর হারিয়েছে আজমপুর, ফর্টিস, রহমতগঞ্জ, মুক্তিযোদ্ধা ও আজ শেষ ম্যাচে চট্টগ্রাম আবাহনীকে (৩-২)।
পুলিশের জন্য এটা বড় সাফল্যই। তবে যোগাযোগ করলে উদ্ধৃত হতে চাননি পুলিশ এফসির এক কর্মকর্তা। তিনি শুধু এটুকু বলেছেন, পুলিশ একটি ঐতিহ্যবাহী দল। অনেক বছর পর দেশের শীর্ষ লিগে ফিরে তৃতীয় মৌসুমেই তারা তৃতীয় হয়েছে। এটিই তাদের সেরা সাফল্য ঘরোয়া লিগে। আর সেটা সম্ভব হয়েছে বিদেশি কোচের অধীনে ভালো প্রস্তুতি নিয়ে এবং শীর্ষ কর্মকর্তাদের সমর্থন পেয়ে। এমন ফলে তাঁরা খুব খুশি।
কিছুটা উচ্চাভিলাষী হয়ে তৃতীয় হওয়ার চেষ্টা করেছিল মোহামেডান। পুলিশ আজ শেষ ম্যাচে হেরে গেলে সেই সুযোগ আসত মোহামেডানের সামনে। কিন্তু পুলিশ সুযোগটা দেয়নি সাদা–কালোদের। তবু মন্দের ভালো, শেষ দিনে রহমতগঞ্জকে ৩-১ গোলে হারিয়ে চতুর্থ হয়েছে সাদা–কালোরা। মোহামেডান শুরুর দিকে অনেকটা পিছিয়ে ছিল।
তবে হতাশ করেছে বড় বাজেটের শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্র। পঞ্চম হয়েছে তারা। মারুফুল হকের শেখ জামাল হয়েছে ষষ্ঠ, নবাগত ফর্টিস সপ্তম। চট্টগ্রাম আবাহনী অষ্টম, রহমতগঞ্জ নবম। মুক্তিযোদ্ধা ও আজমপুর ফুটবল ক্লাব উত্তরা নেমে গেছে।
চূড়ান্ত পয়েন্ট তালিকা
শিরোপা লড়াইয়ে এবারও লড়াই হয়নি কোনোই। তিন ম্যাচ হাতে রেখেই ২৬ মে শেখ রাসেলকে হারিয়ে টানা চতুর্থবার চ্যাম্পিয়ন হয়ে স্বাধীনতা–উত্তর বাংলাদেশের ফুটবলে রেকর্ড গড়ছে বসুন্ধরা কিংস। কিংস নিজেদের এমন জায়গায় নিয়েছে যে যেখানে তাদের চ্যালেঞ্জ জানানোর কার্যত কেউ নেই। আবাহনী লিমিটেড পেশাদার লিগে সর্বোচ্চ ছয়বারের চ্যাম্পিয়ন বটে, কিন্তু আকাশি–নীলেরা পারছে না কিংসের সঙ্গে টক্কর দিতে। এবারের লিগে কিংসের চেয়ে ১৫ পয়েন্ট পিছিয়ে আবাহনী হয়েছে দ্বিতীয়। আবাহনী এ মৌসুমে স্বাধীনতা কাপের ফাইনালে উঠতে পারেনি। ফেডারেশন কাপের ফাইনালে মোহামেডানের কাছে হেরেছে টাইব্রেকারে। নিকট অতীতে এই প্রথম আবাহনী একটা মৌসুমটা কাটাল কোনো শিরোপা ছাড়াই।
লিগে সর্বোচ্চ গোলদাতা হয়েছেন বসুন্ধরা কিংসের ব্রাজিলিয়ান স্ট্রাইকার দরিয়েলতন গোমেজ। তাঁর নামের পাশে ২০ গোল। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী মোহামেডানের মালির স্ট্রাইকার সুলেমান দিয়াবাতের ১৫ গোল। সুলেমান গত লিগে ২১ গোল করে সর্বোচ্চ গোলদাতা হয়েছিলেন। তবে এবার লিগের সাত হ্যাটট্রিকের তিনটিই তাঁর। দেশিদের মধ্যে শুধু আবাহনীর ফয়সাল আহমেদ ফাহিম ও এলিটা কিংসি একটি করে হ্যাটট্রিক করেছেন। নাইজেরিয়ার নাগরিকত্ব ছেড়ে বাংলাদেশ হওয়া এলিটা কিংসলি লিগে করেছেন ৮ গোল। দেশিদের মধ্যে তিনিই সর্বোচ্চ গোলদাতা, সেরা দশে তাঁর অবস্থান ৯ নম্বরে। বাকি দেশি স্ট্রাইকারদের গোলদাতার তালিকায় খুঁজতে দুরবিন লাগবে।