বাংলাদেশের ফুটবলারদের বাজারদর কার কত
কোন খেলোয়াড়ের দাম কত, নতুন মৌসুমে কার দাম বাড়ল–কমল, কোন ক্লাব কাকে দলে ভেড়াল—এসব নিয়ে বেশির ভাগ ফুটবলপ্রেমীর আগ্রহের কেন্দ্রে ইউরোপীয় ক্লাব।
কারণটাও অনুমেয়। বিশ্ব ফুটবলের অধিকাংশ নামীদামি খেলোয়াড় ইউরোপে খেলেন। রোনালদো–নেইমার–বেনজেমার মতো তারকাদের কাঁড়ি কাঁড়ি টাকায় নিয়ে এসে বয়স দুয়েক ধরে আলোচনায় মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সৌদি আরব।
বাংলাদেশের ফুটবলপ্রেমীদেরও নিশ্চয় ইউরোপীয় ক্লাব ফুটবলের প্রতি আকর্ষণ বেশি। তাই বলে দেশের শীর্ষ ঘরোয়া প্রতিযোগিতা বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ নিয়ে কারও তেমন আগ্রহ নেই, তা কিন্তু নয়। দেশের ফুটবল জৌলুশ হারিয়ে ফেললেও এখনো কেউ কেউ নিয়মিত খোঁজখবর রাখেন, মাঠে বসে খেলা দেখেন।
তবে বাংলাদেশের কোনো ফুটবলারের বাজারমূল্য কত, তা হয়তো অনেকেই জানেন না। সেটিই জানিয়েছে ফুটবলের তথ্য–উপাত্ত বিষয়ক জনপ্রিয় ওয়েবসাইট ট্রান্সফারমার্কেট।
বিশ্ব ফুটবলের দলবদল, তথ্য–উপাত্ত ও পরিসংখ্যানভিত্তিক জনপ্রিয় এই ওয়েবসাইটের সর্বশেষ হিসেবে বর্তমানে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের সবচেয়ে দামি স্থানীয় ফুটবলার পুলিশ এফসির লেফট–ব্যাক ঈসা ফয়সাল ও বসুন্ধরা কিংসের ফরোয়ার্ড রাকিব হোসেন। দুজনেরই বাজারমূল্য ২ লাখ ৫০ হাজার ইউরো, বাংলাদেশি মুদ্রায় যা ৩ কোটি ১৩ লাখ টাকার সমান।
সবচেয়ে দামি স্থানীয় ১০ স্থানীয় ফুটবলারের পাঁচজনই বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের বর্তমান চ্যাম্পিয়ন বসুন্ধরা কিংসের। তালিকায় রাকিবের সঙ্গে আছেন তাঁর চার ক্লাব সতীর্থ সোহেল রানা, মোহাম্মদ সোহেল রানা, তারিক কাজী ও তপু বর্মণ।
মিডফিল্ডারদের মধ্যে দাম বেশি ঢাকা আবাহনী লিমিটেডের মোহাম্মদ হৃদয়ের। তাঁর বাজারমূল্য ২ লাখ ইউরো (২ কোটি ৫০ লাখ টাকা)। গোলকিপারদের মধ্যে সবার ওপরে হৃদয়ের সতীর্থ মিতুল মারমা। তাঁর বাজারমূল্য ১ লাখ ৭৫ হাজার ইউরো (২ কোটি ১৯ লাখ)।
বাংলাদেশ জাতীয় দলের অধিনায়ক হয়েও বাদ পড়া জামাল ভূঁইয়া শীর্ষ পঞ্চাশেও নেই। ২৫ হাজার ইউরো কমে জামালের বর্তমান দাম ৭৫ হাজার ইউরো, টাকার অঙ্কে ৯৩ লাখ ৯০ হাজারের কিছু বেশি। নানা জটিলতায় এবারের লিগ মৌসুমে এখনো খেলতে নামা হয়নি জামালের। ৩৪ বছর বয়সী এই মিডফিল্ডার সম্প্রতি ডেনমার্ক থেকে ঢাকায় ফিরে কোচিং কোর্স করছেন।
ফুটবলারদের বাজারমূল্য কী? ট্রান্সফারমার্কেটে কীভাবে এটি নির্ধারণ করা হয়?
সহজ ভাষায় বাজারমূল্য বলতে বোঝায় মুক্ত বাজারে একজন খেলোয়াড়ের আনুমানিক সর্বোচ্চ দাম। এই দাম দলবদলের ক্ষেত্রে ক্লাবগুলোর মধ্যে আলোচনায় বা দরকষাকষিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দলবদল ফির সঙ্গে বাজারমূল্য মেলে না।
ট্রান্সফারমার্কেট একটি অ্যালগরিদমের (গাণিতিক সমাধান পদ্ধতি) ওপর ভিত্তি করে বাজারমূল্য নির্ধারণ করে থাকে। প্রতি বছরই এই দাম সমন্বয় করা হয়।
ফুটবলারদের বাজারমূল্য নির্ধারণের ক্ষেত্রে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর দেখা হয়। সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো—ভবিষ্যতের সম্ভাবনা, বয়স, ক্লাব ও জাতীয় দলে পারফরম্যান্স, লিগের মান ও স্তর (খেলাধুলা–আর্থিক উভয় দিক থেকে), খ্যাতি ও প্রতিপত্তি, উন্নতি করার সম্ভাব্যতা, আগ্রহী ক্লাবের সংখ্যা, অভিজ্ঞতার স্তর, পারফর্ম করার সক্ষমতা, লিগের নির্দিষ্ট কিছু বৈশিষ্ট্য, চোটজনিত সংবেদনশীলতা, সাধারণ চাহিদা ও বাজারে ট্রেন্ড কি না ইত্যাদি।
বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে খেলা বিদেশি ফুটবলারদের মধ্যে সবচেয়ে দামি বসুন্ধরা কিংসের মিগুয়েল ফেরেইরা। ব্রাজিলের এই মিডফিল্ডারের বর্তমান বাজারমূল্য ৬ লাখ ইউরো (৭ কোটি ৫১ হাজার টাকা।)
ট্রান্সফারমার্কেটের হিসাবে ২০২৪–২৫ মৌসুমে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের ১০ ক্লাবে ৩৪৯ জন ফুটবলার খেলছেন। তাঁদের মধ্যে ৩১৩ জন বাংলাদেশি, ৩৬ জন বিদেশি। লিগের সব খেলোয়াড় মিলিয়ে বাজারমূল্য ১ কোটি ৭৯ লাখ ৯০ হাজার ইউরো (২২৫ কোটি ২৫ লাখ ২৭ হাজার টাকা)। প্রত্যেক খেলোয়াড়ের গড় বাজারমূল্য ৫২ হাজার ইউরো (৬৫ লাখ টাকার কাছাকাছি)। খেলোয়াড়দের গড় বয়স ২৬ বছর ৪ মাস।
বাংলাদেশের ফুটবলারদের মধ্যে সবচেয়ে দামি কে, তা বোধ হয় না বললেও চলত। হামজা চৌধুরী, যিনি গত ডিসেম্বরে বাংলাদেশের হয়ে খেলতে ফিফার ছাড়পত্র পেয়েছেন। লাল–সবুজের জার্সিতে অভিষেকের অপেক্ষায় থাকা হামজার বর্তমান বাজারমূল্য ৪৫ লাখ ইউরো (৫৬ কোটি ৩৪ লাখ টাকা)। ২৭ বছর বয়সী এই ফুটবলার বর্তমানে খেলছেন ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের ক্লাব লেস্টার সিটিতে।