পাগলাটে-রুদ্ধশ্বাস লড়াইয়ে রিয়াল-সিটির ড্র
রিয়াল মাদ্রিদ ৩ : ৩ ম্যানচেস্টার সিটি
পাগলাটে, অবিশ্বাস্য, রোমাঞ্চকর!
রিয়াল মাদ্রিদ-ম্যানচেস্টার সিটি ম্যাচের উত্তেজনাকে বোধহয় এই শব্দগুলোও ঠিকঠাক বোঝাতে পারছে না। চ্যাম্পিয়নস লিগের কোয়ার্টার ফাইনালের প্রথম লেগে যা ঘটেছে, ফুটবলে রোমান্টিকদের মনে তা রয়ে যাবে আরও অনেক দিন! সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে প্রথম ১৪ মিনিটে দেখা মিলেছে অবিশ্বাস্য এক ঝড়ের। যার রেশ ছিল ম্যাচের শেষ পর্যন্ত।
উত্তপ্ত এ লড়াইয়ে প্রথমার্ধে ২-১ গোলে এগিয়ে যায় স্বাগতিক রিয়াল। দ্বিতীয়ার্ধে ফিল ফোডেন জাদুতে সমতায় ফেরার পর সিটিকে দুর্দান্ত এক গোলে এগিয়ে দেন ইওস্কো গাভারদিওল। এরপর ঝিমিয়ে পড়া বার্নাব্যুকে মাতিয়ে তোলেন ফেদে ভালভের্দে। ৩-৩ গোলে সমতায় ফেরে রিয়াল। শেষ পর্যন্ত এ ফলেই শেষ হয়েছে ম্যাচটি।
রিয়ালের মাঠে ম্যাচের প্রথম মিনিট থেকেই ছড়িয়ে পড়ে উত্তেজনা। ঘড়ির কাঁটা মিনিট পেরোনোর আগেই দুই দলই একটি করে আক্রমণ শানায় এবং জ্যাক গ্রিলিশকে ফাউল করে হলুদ কার্ড দেখেন অরলিয়েঁ চুয়েমেনি। আর সেই ফাউল থেকে পাওয়া ফ্রি কিকেই বাজিমাত করেন বের্নার্দো সিলভা। ২৫ গজ দূর থেকে বাঁ পায়ে বুদ্ধিদীপ্ত এক শটে বল জালে জড়ান এ পর্তুগিজ মিডফিল্ডার। বার্নাব্যুকে স্তব্ধ করে শুরু করা ম্যাচে ৭ মিনিটের মাথায় ব্যবধান দ্বিগুণ করতে পারত সিটি। যদিও কাছাকাছি গিয়ে সামান্যের জন্য গোল পাওয়া হয়নি হালান্ড-ফোডেনদের।
শুরুতে গোল খেয়ে রিয়াল তখন এক রকম ছন্নছাড়া হয়ে পড়ে। মিডফিল্ডের দখল নিয়ে রিয়াল রক্ষণের আশপাশে বারবার ভীতি ছড়াতে থাকেন সিলভা-ফোডেনরা। তবে আচমকা এক আক্রমণে গোল পেয়ে ১২ মিনিটের মাথায় ম্যাচে সমতা ফিরিয়ে আনে রিয়াল। বক্সের বাইরে থেকে শট নেন কামাভিঙ্গা। কিন্তু তাঁর শট রুবেন দিয়াজের পায়ে লেগে দিক বদলে জড়ায় জালে।
পাগলাটে ম্যাচে দুর্দান্ত এক প্রতি-আক্রমণ থেকে দুই মিনিট পর রিয়ালকে এগিয়ে দেন রদ্রিগো। ভিনিসিয়ুসের কাছ থেকে নিজ অর্ধে বল পেয়ে দারুণ রানিংয়ে প্রতিপক্ষ বক্সে ঢুকে পড়েন ব্রাজিলিয়ান তারকা। তাঁর আলতো করে বাড়ানো বল ম্যানুয়াল আকাঞ্জির পায়ে লেগে ফের দিক বদলে জালে জড়ালে ২-১ ব্যবধানে এগিয়ে যায় রিয়াল। প্রথম ১৪ মিনিটের পাগলাটে ঝড়ের পর দুই দলই চেষ্টা করে থিতু হওয়ার।
আক্রমণাত্মক ফুটবল খেললেও এ সময় আক্রমণগুলো ছিল যথেষ্ট পরিণত। এরপর ম্যাচ যতই সামনে এগিয়েছে আক্রমণ ও পাল্টা আক্রমণের ধারা বার্নাব্যুর সবুজ দিগন্তে সৌন্দর্যের আভা ছড়িয়েছে। সুযোগ এ সময় কমবেশি দুই দলের সামনেই এসছে, যদিও সেগুলো গোলে রূপান্তরিত হয়নি। শেষ পর্যন্ত এগিয়ে থেকেই বিরতিতে যায় রিয়াল।
বিরতির পর আক্রমণের ধার বাড়ায় সিটি। কয়েকবার রিয়ালের রক্ষণে হানাও দেয় তারা। যদিও আসেনি কাঙ্ক্ষিত গোলটি। এর মধ্যে অবশ্য সিটি ডিফেন্সের ভুলে বল পেয়ে তৃতীয় গোলটা প্রায় পেয়েই গিয়েছিল রিয়াল। তবে বেলিংহামের শট যায় পোস্টের বাইরে দিয়ে। ৫৬ মিনিটে দারুণ এক সুযোগ পেয়েও কাজে লাগাতে পারেননি ভিনি। এরপর দ্রুত কয়েকবার আক্রমণে যায় সিটি। কিন্তু মেলেনি সমতা সূচক গোলটি।
তবে কয়েক দফায় ব্যর্থ হওয়ার পর শেষ পর্যন্ত ৬৬ মিনিটে দেখা মেলে ফোডেন-জাদুর। বক্সের বাইরে থেকে তাঁর ট্রেডমার্ক শটটি থামানোর কোনো উপায় ছিল না রিয়াল গোলরক্ষক আন্দ্রি লুনিনের। ৭১ মিনিটে ফোডেনের সেই গোলটিই যেন আরেকবার ফিরিয়ে আনেন গাভারদিওল। অসাধারণ এক শটে বার্নাব্যুকে শোকে ভাসিয়ে সিটিকে এগিয়ে দেন এ ক্রোয়াট ডিফেন্ডার। রিয়াল অবশ্য এরপরও হাল ছাড়েনি। ম্যাচের ৭৯ মিনিটে ভিনিসিয়ুসের মাপা ক্রসে দুর্দান্ত ভলিতে বল জালে জড়িয়ে রিয়ালকে ফের ম্যাচে ফেরান ভালভের্দে।
এরপর উভয়ই চেষ্টা করেছে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়তে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত চতুর্থ গোলের দেখা পায়নি কোনো দল। এরপরও পেপ গার্দিওলা হয়তো এ ড্রয়েই স্বস্তি খুঁজে নেবেন। পরের লেগের ম্যাচটি যে তাঁদেরই মাঠে। ১৭ এপ্রিল রাতে সেই ম্যাচে রিয়ালকে আতিথ্য দেবে সিটি। যে ম্যাচে আত্মবিশ্বাসী থাকার কথা আগেই জানিয়ে রেখেছেন গার্দিওলা।