জানুয়ারির সেরা দলবদলের গল্পে শিরোনাম চেলসি

জানুয়ারির দলবদলের বাজার কাঁপিয়েছেন এই পাঁচ ফুটবলার—কোডি গাকপো, অ্যান্থনি গর্ডন, এনজো ফার্নান্দেজ, মিখাইল মুদরিক ও বেনোয়া বাদিয়াশিলছবি: টুইটার

মৌসুমের মধ্যে কেই–বা দল ছাড়তে চায়! ক্লাবও বেশির ভাগ সময়েই মৌসুমের মাঝে খেলোয়াড় ছাড়তে অনিচ্ছুক থাকে। জানুয়ারির ট্রান্সফার উইন্ডোতে তাই এমনিতেও দলবদল কম হয়। তবে এবারের জানুয়ারির ট্রান্সফার উইন্ডো অবশ্য সেই প্রথা মেনে চলেনি। এর বড় কারণ হতে পারে কাতার বিশ্বকাপের অনেক তরুণ ফুটবলারের দুর্দান্ত পারফরম্যান্স কিংবা ফুটবলারদের চোট।

কারণটা যা–ই হোক, প্রথা ভাঙার কাজটা সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে করেছে ইংলিশ জায়ান্ট চেলসি। জানুয়ারির এই মধ্যবর্তী দলবদলে সাতজন খেলোয়াড় কিনেছে দলটি। সব মিলিয়ে খরচ করেছে ৩২ কোটি ৬৫ লাখ ইউরো। ইউরোপিয়ান শীর্ষ লিগগুলোর অন্য ক্লাবগুলোও প্রয়োজন অনুযায়ী ফুটবলারদের দলে ভিড়িয়েছে।

আরও পড়ুন

দলবদলের এই সময়ে মুদরিক, অ্যান্থনি গর্ডনের মতো অখ্যাত ফুটবলার চড়া দামে বিক্রি হয়েছেন। আবার কেইলর নাভাস, জর্জিনো, মেমফিস ডিপাইদের মতো তারকারাও তুলনামূলক কম দামেও ক্লাব বদল করেছেন। তবে দলবদলের বাজারে হাকিম জিয়েশের গল্পটা একটু ভিন্ন। মরক্কোর এই ফুটবলার ঠিক কোন দলের হয়ে খেলবেন, সেটা এখনো নিশ্চিত নয়। দেখে নেওয়া কী কী গুরুত্বপূর্ণ দলবদল হয়েছে এই মাসে—

শীর্ষ পাঁচ দলবদল:

এনজো ফার্নান্দেজ (বেনফিকা থেকে চেলসি): ১০ কোটি ৬০ লাখ পাউন্ড

এনজোকে নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছিল মাসের শুরুতেই; যদিও মধ্যে গুঞ্জনটা একবারেই থেমে গিয়েছিল। বেনফিকার কোচ রজার শ্মিট জানিয়েছিলে, চেলসির সঙ্গে এনজোর দলবদলের যে কথাবার্তা শুরু হয়েছিল, সেটি বন্ধ হয়ে গেছে। ভেঙে যাওয়া আলোচনা জানুয়ারির উইন্ডোর শেষ দিনে জমিয়ে তোলে চেলসি।

ডেডলাইন শেষ হওয়ার ঘণ্টাখানেক আগে বেনফিকার সঙ্গে সমঝোতায় পৌঁছে ১০ কোটি ৬ লাখ পাউন্ডে তাঁকে দলে ভিড়িয়েছে চেলসি। ২২ বছর বয়সী এনজোর সঙ্গে চেলসির চুক্তি ৮ বছরের জন্য। ২০৩১ সালে শেষ হবে চুক্তির মেয়াদ। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের ইতিহাসে এনজোই এখন সবচেয়ে দামি খেলোয়াড়। আর্জেন্টাইন খেলোয়াড়দের মধ্যেও এনজো সবচেয়ে দামি।

আরও পড়ুন
আরও পড়ুন

মিখাইল মুদরিক (শাখতার থেকে চেলসি): ৮ কোটি ৮০ লাখ পাউন্ড

মুদরিককে বলা হয় ‘ইউক্রেনের নেইমার’। শাখতারের সাবেক কোচ মিরসেয়া লুসেস্কু আবার তাঁর মধ্যে দেখেন কিলিয়ান এমবাপ্পের ছায়া। ড্রিবলিং, গতি আর ফিনিশিংয়ে প্রতিপক্ষকে গুঁড়িয়ে দেওয়ার সামর্থ্য আছে তাঁর। শাখতার দেনেৎস্ক থেকে ইউক্রেনের এই ফুটবলারকে দলে ভিড়িয়েছে চেলসি। সাড়ে ৮ বছরের জন্য স্ট্যামফোর্ড ব্রিজের ক্লাবটিতে চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন ইউক্রেনের এই ফুটবলার। টানা দুই বছর শাখতারের বর্ষসেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হয়েছেন মুদরিক। চলতি মৌসুমে চ্যাম্পিয়নস লিগের গ্রুপ পর্বে দারুণ খেলে আলোচনায় আসেন তিনি। গ্রুপ পর্বে তিনটি গোল ও দুটি অ্যাসিস্ট ছিল মুদরিকের।

অ্যান্থনি গর্ডন (এভারটন থেকে নিউক্যাসল): ৪ কোটি পাউন্ড

এভারটনের এই উইঙ্গারের দিকেও চোখ ছিল চেলসির; যদিও শেষমেশ গর্ডনকে দলে ভিড়িয়েছে নিউক্যাসল ইউনাইটেড। ২০১৭ সালে এভারটন মূল দলের হয়ে মাত্র ১৬ বছর বয়সে অভিষেক হয় এই ফুটবলারের। যদিও এভারটনের সঙ্গে তাঁর সম্পর্কটা আরও পুরোনো; ১১ বছর বয়স থেকেই এভারটন ক্লাবের হয়ে খেলছেন গর্ডন। এভারটনের মূল দলে ৭৮টি ম্যাচ খেলেছেন এই উইঙ্গার। গোল করেছেন ৭টি।

কোডি গাকপো (পিএসভি থেকে লিভারপুল): ৩ কোটি ৫০ লাখ পাউন্ড

বিশ্বকাপে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স করার ফল পেয়েছেন গাকপো। নেদারল্যান্ডসকে শেষ আটে তোলার পথে বড় অবদান রেখেছিলেন গাকপো। করেছিলেন তিন গোল। বিশ্বকাপে গাকপোর এই পারফরম্যান্স দেখে তাঁকে দলে ভেড়াতে চেয়েছিল ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। দলবদলের এই লড়াইয়ে টেন হাগের ইউনাইটেড হেরেছে ধুঁকতে থাকা লিভারপুলের কাছে। পিএসভির মূল দলের হয়ে ১৫৯টি ম্যাচ খেলেছেন গাকপো। করেছেন ৫৫টি গোল, করিয়েছেন আরও ৫০টি।

বেনোয়া বাদিয়াশিল (মোনাকো থেকে চেলসি): ৩ কোটি ৩০ লাখ  পাউন্ড

টাকার অঙ্কে শীর্ষ পাঁচ দলবদলের মধ্যে বাদিয়াশিলই একমাত্র ডিফেন্ডার। চেলসির হয়ে এরই মধ্যে দুই ম্যাচে খেলেছেন তরুণ এই ফরাসি ডিফেন্ডার। এর আগে মোনাকোর মূল দলের হয়ে ১৩৫ ম্যাচ খেলেছেন বাদিয়াশিল। গোল ঠেকানো তাঁর প্রধান কাজ হলেও মোনাকোর হয়ে ৬ বার প্রতিপক্ষের জালে বল জড়ানোর অভিজ্ঞতা আছে এই ফুটবলারের।

আরও পড়ুন

অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ দলবদল

লিয়ান্দ্রো ট্রসার (ব্রাইটন থেকে আর্সেনাল): ২ কোটি ১০ লাখ পাউন্ড
আক্রমণভাগের গভীরতা আরও বাড়াতে ব্রাইটন থেকে ট্রসারকে দলে নিয়েছেন আর্সেনাল। বোঝাই যাচ্ছে, শীর্ষে থাকলেও বাকি অর্ধেক মৌসুমের জন্য কোনো ঝুঁকি নিতে চাচ্ছেন না মিকেল আরতেতা।

জোয়াও ফেলিক্স (আতলেতিকো মাদ্রিদ থেকে চেলসি): ৯৬ লাখ ৯০ হাজার পাউন্ড

ছয় মাসের ধারে আনতে ৯ দশমিক ৬৯ মিলিয়ন পাউন্ড ফি দিয়েছে চেলসি। যদিও চেলসির হয়ে শুরুটা ভালো হয়নি এই পর্তুগিজের। চেলসির হয়ে প্রথম ম্যাচেই দেখেছেন লালকার্ড।

মেম্ফিস ডিপাই (বার্সেলোনা থেকে আতলেতিকো মাদ্রিদ): ২৬ লাখ পাউন্ড (ধার)
জোয়াও ফেলিক্সের বিদায়ের পর টালমাটাল আক্রমণভাগে স্থিতি ফেরাতে মেমফিস ডিপাইকে দলে নিয়েছেন আতলেতিাকো মাদ্রিদ।

জোয়াও ক্যানসেলো (ম্যান সিটি থেকে বায়ার্ন মিউনিখ): ধার
কোচ পেপ গার্দিওলার সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়ানোয় ম্যানচেস্টার সিটি ছাড়তে হয়েছে পর্তুগিজ তারকা জোয়াও কানসেলো। ম্যান সিটি ছেড়ে কানসেলো এখন ধারে যোগ দিয়েছেন জার্মান ক্লাব বায়ার্ন মিউনিখে। আপাতত ধারে গেলেও মৌসুম শেষে ৬ লাখ ১০ হাজার পাউন্ডে কানসেলোকে পাকাপাকিভাবে কিনে নেওয়ার সুযোগ আছে বায়ার্নের।

জর্জিনহো (চেলসি থেকে আর্সেনাল): ১২ মিলিয়ন পাউন্ড
একসময় চেলসির নিয়মিত মুখ ছিলেন জর্জিনহো। চেলসির হয়ে খেলেছেন ২২৩ ম্যাচ। তবে চেলসি কোচের নতুন পরিকল্পনায় না থাকায় ১২ মিলিয়ন পাউন্ডে আর্সেনালের কাছে এই ডিফেন্ডার বিক্রি করেছে চেলসি।

ভাউগ ভেগহোর্স্ট (বার্নলি থেকে ইউনাইটেড): ধার
ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড কোচ টেন হাগ স্বদেশি গাকপোকে দলে ভেড়াতে চেয়েছিলেন। লিভারপুলের সঙ্গে সেই লড়াইয়ে পিছিয়ে পড়ার পর গাকপোর সতীর্থ ভট ভেগহর্স্টকে ধারে দলে নিয়েছে তারা। ২ দশমিক ৫ মিলিয়ন পাউন্ডে তাঁকে পেয়েছে ইউনাইটেড। মৌসুম শেষে ২০ মিলিয়ন পাউন্ডে তাঁকে পাকাপাকিভাবে কিনে নেওয়ার সুযোগ আছে ইউনাইটেডের সামনে।

কেইলর নাভাস (পিএসজি থেকে নটিংহাম ফরেস্ট): ধার
বয়সটা ৩৬। আগের সেই ধার আর নেই। পিএসজিতেও কোচ ক্রিস্তফ গালতিয়েরের প্রথম পছন্দ ছিলেন না নাভাস। কোস্টারিকার এই গোলরক্ষককে বাকি অর্ধেক মৌসুমের জন্য দলে নিয়েছে নটিংহাম ফরেস্ট।

এ ছাড়াও যাঁরা দলবদল করেছেন

ইয়ান সোমার (ম’গ্লাডবাখ থেকে বায়ার্ন মিউনিখ): ৭ মিলিয়ন পাউন্ড
মার্সেল সাবিতজার (বায়ার্ন মিউনিখ থেকে ম্যান ইউনাইটেড): লোন
আরনট দানজুমা (ভিয়ারিয়াল থেকে টটেনহাম): লোন
ডেলি ব্লিন্ড (আয়াক্স থেকে বায়ার্ন মিউনিখ): ফ্রি
মার্সেল সাবিতজার (বায়ার্ন মিউনিখ থেকে ম্যান ইউনাইটেড): লোন
পেদ্রো পোররো (স্পোর্টিং থেকে স্পার্স): লোন