১৬ মাস পর শুরু হওয়া মেয়েদের ফুটবল লিগের প্রথম দিনেই চমক। গত দুবারের রানার্সআপ আতাউর রহমান ভূঁইয়া কলেজ স্পোর্টিং ক্লাবকে ১-০ গোলে হারিয়ে দিয়েছে নবাগত বাংলাদেশ আর্মি স্পোর্টিং ক্লাব লিমিটেড। অনূর্ধ্ব–১৯ জাতীয় দলের খেলা ফরোয়ার্ড মোসাম্মৎ সুলতানা ৩৭ মিনিটে দারুণ নৈপুণ্যে করেছেন ম্যাচের একমাত্র গোলটি।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী দলের জয়ের নেপথ্য নায়ক কোচ গোলাম রব্বানী। বাফুফের চাকরি ছেড়ে গত বছর তিনি বাংলাদেশ সেনাবাহিনী নারী দলের দায়িত্ব নেন। আজই প্রথমবার ঢাকার নারী ফুটবল লিগে কোনো দলের ডাগআউটে ছিলেন। এর আগে দীর্ঘদিন ছিলেন বাংলাদেশ জাতীয় নারী দলের ডাগআউটে। সেই অধ্যায় পেরিয়ে গোলাম রব্বানী নতুন এক অধ্যায়েই ঢুকলেন। তবে সব ছাপিয়ে এই জয়ের অনুভূতি তাঁর কাছে অন্যরকম। জয়টা পেয়েছেন যে ছোট ভাই গোলাম রায়হানের বিপক্ষে। গোলাম রায়হান আতাউর রহমান ভূইয়া দলের কোচ।
জয় দিয়ে নারী ফুটবলে কোচ হিসেবে দারুণ শুরু। তারওপর জয়টা ছোট ভাইয়ের দলের বিপক্ষে এসেছে বলে ম্যাচ শেষ সব আলো গিয়ে পড়ল গোলাম রব্বানীর ওপর। খেলা দেখতে আসা নাসরিন একাডেমিতে নাম লেখানো জাতীয় দলের সানজিদা আক্তার, কৃষ্ণা রানী সরকাররা তাঁদের স্যারকে অভিনন্দন জানান। অনেক দিন পর সাবেক শিষ্যদের সঙ্গে তাঁর দেখা হয়ে যায়। মনে হচ্ছিল যেন এক পুনর্মিলনী।
গোলাম রব্বানী এর আগে এক প্রীতি ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছিলেন ছোট ভাইয়ের। সেনাবাহিনীর হয়ে গোলাম রব্বানী ও আর তাঁদের বাবার নামের প্রতিষ্ঠিত টাঙ্গাইলের ফরহাদ হোসেন ফুটবল একাডেমির কোচ গোলাম রায়হান। সেটিতে বড় ভাইয়ের দল জেতে ৪-০ গোলে।
তবে আজকের দিনটা গোলাম রব্বানীর কাছে বিশেষ কিছু। প্রথমেই সেনাপ্রধানকে ধন্যবাদ জানিয়ে বললেন, ‘মাননীয় সেনাপ্রধানের আগ্রহেই এই দলটা হয়েছে। মহিলা ফুটবলে অবদানের জন্য এটা এক বিরাট প্ল্যাটফর্ম। আমাদের অনেক মেয়ে উপকৃত হয়েছে। কয়েক দিন আগে আমরা উত্তরার সঙ্গে খেলেছি, সেখানেও সেনাপ্রধান আশাবাদ ব্যক্ত করেন মেয়েদের ফুটবলে অনেক সম্ভাবনাময় খেলোয়াড় আছে, তারা ভালো খেলবে। সেটার প্রতিফলন দেখেছেন আপনারা।’
সেনাবাহিনী দলটা যে ভালো করবে লিগে সেই আত্মবিশ্বাস আছে গোলাম রব্বানীর। কিন্তু তাই বলে তারকা খচিত আতাউর রহমান ভূঁইয়া কলেজ দলকে হারিয়ে দেবে! এই দলে খেলেছেন জাতীয় ও বয়ভিত্তিক দলে নজরকাড়া ৪ স্ট্রাইকার! অধিনায়ক তহুরা খাতুন মেয়েদের ফুটবলে দেশের হয়ে সর্বোচ্চ ৫০ গোল করেছেন। শাহেদা আক্তার, সাগরিকা অনূর্ধ্ব-১৯ সাফে সর্বোচ্চ গোলদাতা ও সেরা খেলোয়াড়। সৌরভী আকন্দ সম্প্রতি নেপালে সাফ অনূর্ধ্ব-১৬ টুর্নামেন্টে সর্বোচ্চ গোলদাতা ও সেরা খেলোয়াড়। এই দলের বিপক্ষে জয়ের রহস্য হিসেবে গোলাম রব্বানী বললেন, ‘কঠিন পরিশ্রম , কঠিন পরিশ্রম এবং কঠিন পরিশ্রম।’
রব্বানী বলেন, ‘আমি যেখানেই থাকি সেরাটা দিই। যাতে উন্নতিটা চোখে পড়ে।’ ভাইকে হারানোর প্রতিক্রিয়াও দিলেন এই ফাঁকে, ‘ভাই পরিচয় ঘরে। আমরা পেশাদার কোচ। ও তার মেধা দিয়ে কাজ করেছে, আমি আমারটা। তার টিমও ভালো খেলেছে। তবে আজ তাদের খারাপ দিন গেছে। প্রতিপক্ষ দলকে আমি বিশ্লেষণ করতে পেরেছি। জয় পেতে এটাও কাজে এসেছে।’
বড় ভাইকে নিয়ে গোলাম রায়হান বলেন, ‘বাসায় আমরা ভাই। কিন্তু পেশাদারি জীবনে যে যার কাজ করছে। মেয়েদের নিয়ে ২০০৯ থেকে তিনি কাজ করছেন, অবশ্যই তার মেধা কাজে এসেছে। তবে আমি আশাবাদী ছিলাম আমরা জিতব। কিন্তু দুর্ভাগ্য বা মেয়েরা গরমে স্বাভাবিক খেলা খেলতে পারিনি।’
প্রথম দিনে নজরকাড়া রংপুরের মেয়ে সুলতানা সেনাবাহিনীতে যোগ দেন গত বছর। এর আগে জাতীয় অনূর্ধ্ব-১৬, ১৯, ২০ দলে খেলেন। সর্বশেষ খেলেন অনূর্ধ্ব-১৯ সাফে। পারফরম্যান্স খারাপ হয়ে যাওয়ায় বাফুফের ক্যাম্প থেকে বাদ পড়েন। তারপর গোলাম রব্বানীর সঙ্গে যোগাযোগ করে সেনাবাহিনী দলে আসেন। এ নিয়ে চতুর্থবার লিগ খেলছেন। খেলেছেন কিংসের হয়েও। নতুন দলকে প্রথম ম্যাচে জিতিয়ে সুলতানা বললেন , ‘আমরা জানতাম আতাউর রহমান ভূঁইয়া কলেজ দলটির সবাই ঈদের ছুটিতে গিয়ে আনফিট হয়ে আছে। আমাদের কোচ বলেন, তোমরা ভালোভাবে খেললে জিততে পারব। আমরা জিততে পেরেছি। তবে ভাবতেই পারিনি ওই দলের সুপারস্টারদের হারিয়ে আমি গোল করব। এত ভালো লাগছে গোল করে বলার মতো নয়।’