হেঁটে বিশ্বকাপ দেখতে যাওয়ার পথে ইরানে আটক স্প্যানিশ পর্যটকের মুক্তি
দূরদিগন্তে চোখ রেখে হেঁটে মাইলের পর মাইল পাড়ি দেওয়া তাঁর নেশা। সময় পেলেই প্রকৃতির সান্নিধ্য পেতে ছুটে যেতেন স্প্যানিশ নাগরিক সান্তিয়াগো সানচেজ। ২০২২ সালের অক্টোবরে তেমনই এক যাত্রায় নামেন সানচেজ। গন্তব্য ছিল কাতার। উদ্দেশ্য বিশ্বকাপ ফুটবল উপভোগ করা। কিন্তু বিপত্তি বাধে ২ অক্টোবর।
ভিসা না থাকায় সেদিন তাঁকে আটক করে হাজতে পাঠায় ইরান প্রশাসন। হেঁটে পৃথিবী দেখার নেশায় মত্ত সানচেজ এক বছরের বেশি সময় ধরে বন্দী ছিলেন ইরানের কারাগারে। তবে সানচেজের দুর্দিনের অবসান ঘটল অবশেষে। তাঁকে মুক্তি দিয়েছে ইরান সরকার। স্পেনের ইরান দূতাবাস রোববার জানিয়েছে, তাদের দেশে আটক সর্বশেষ স্প্যানিশ নাগরিককে মুক্তি দিয়েছে তারা।
২০২২ সালের অক্টোবরে ইরানে প্রবেশের পর এই পর্যটককে আটক করা হয়েছিল। সানচেজকে যখন আটক করা হয়, তখন ইরানে মাসা আমিনির পুলিশি হেফাজতে মৃত্যুর ঘটনায় বিক্ষোভ চলছিল। হিজাব নিয়ে প্রতিবাদ করে আটক হয়েছিলেন ২২ বছর বয়সী মাসা আমিনি। সে সময় স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যম জানিয়েছিল, মাসা আমিনির কবরস্থান দেখতে যাওয়ার পরই মূলত আটক করা হয় সানচেজকে।
তাঁর মুক্তির ঘোষণায় স্পেনে ইরান দূতাবাস সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া এক বিবৃতিতে জানায়, ‘ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের দূতাবাস আনন্দের সঙ্গে সান্তিয়াগো সানচেজ কোগেদোরের মুক্তি ঘোষণা করছে। তিনিই একমাত্র স্প্যানিশ নাগরিক হিসেবে ইরানে আটক ছিলেন।’
দূবাবাস এ সময় আরও জানায়, ‘দুই দেশের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ এবং ঐতিহাসিক সম্পর্কের কারণে আইনের মধ্যে থেকে তাঁকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে।’ স্পেনের রয়েল হাউস সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট দিয়ে জানায়, ‘ইরানে সান্তিয়াগো সানচেজ মুক্তি পেয়েছেন। নতুন বছরে তাঁর স্পেনে ফিরে আসাকে আমরা উদ্যাপন করব।’
এর আগে ২০২২ সালের শুরুতে সান্তিয়াগোর হেঁটে কাতার যাওয়া নিয়ে বেশ আলোড়ন তৈরি হয়। রিয়াল মাদ্রিদের ভক্ত হিসেবে পরিচিত এই পর্যটককে সবাই শুভকামনাও জানায়। ৬ হাজার ৮০০ কিলোমিটার দীর্ঘ যাত্রাপথের খবরাখবর ইনস্টাগ্রামের মাধ্যমে দিয়ে যাচ্ছিলেন সানচেজ। এ নিয়ে সে সময় বেশ কিছু ছবি ও ভিডিও আপলোড করেন। তাঁর শেষ পোস্টটিতে লেখা ছিল, ‘ইরানে একটু বেশিই গরম। তবে ভালো আছি।’
২ অক্টোবর ৪১ বছর বয়সী সান্তিয়াগো পৌঁছান ইরানের সীমান্তবর্তী প্রদেশ কুর্দিস্তানে। সেদিনই পরিবারের সঙ্গে তাঁর শেষবারের মতো যোগাযোগ হয়। এরপর থেকে তাঁর আর কোনো সন্ধান পাওয়া যাচ্ছিল না। অবশেষে ১৭ অক্টোবর সান্তিয়াগোর নিখোঁজ হওয়ার বিজ্ঞাপন দেয় তাঁর পরিবার। বিজ্ঞাপন দেখে এগিয়ে আসেন তেহরানে নিযুক্ত স্প্যানিশ রাষ্ট্রদূত। তিনিই মূলত সান্তিয়াগোর সন্ধান বের করেন।