ইগলসকে হারিয়ে এএফসি কাপের প্লে-অফে আবাহনী
প্রথমার্ধেই অন্তত তিন গোলে এগিয়ে যাওয়ার কথা আবাহনীর!
মালদ্বীপের ক্লাব ইগলসের বিপক্ষে তেড়েফুঁড়ে শুরু করা আকাশি-নীল শিবির প্রথমার্ধে এক গোলের বেশি দিতে পারেনি। একের পর এক গোলের সুযোগ মিস করেছেন আবাহনীর ফরোয়ার্ডরা।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে ইগলস গোল শোধ করে দিলে হতাশা গ্রাস করেছিল পুরো আবাহনী দলকে। কিন্তু ৮৮ মিনিটে ফর্টিস এফসি থেকে ধারে নিয়ে আসা ব্রাজিলিয়ান ডিফেন্ডার দানিলো আগুস্তো শেষ পর্যন্ত আবাহনীর ত্রাণকর্তা হয়েছেন। তাঁর গোলেই ইগলসকে ২-১ গোলে হারিয়ে এএফসি কাপের প্লে-অফে জায়গা করে নিয়েছে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের রানার্সআপরা।
আবাহনীকে ২১ মিনিটে এগিয়ে দিয়েছিলেন গ্রানাডিয়ান স্ট্রাইকার কর্নেলিয়াস স্টুয়ার্ট। মজার ব্যাপার, এই স্টুয়ার্টকেও শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব থেকে এএফসি কাপের জন্য ধারে এনেছে আবাহনী।
মাঠের অবস্থা খুব ভালো ছিল না। সিলেটে বৃষ্টি হয়নি। কিন্তু রৌদ্রকরোজ্জ্বল আবহাওয়ার মধ্যেও আগের কয়েক দিনের বৃষ্টির ছাপ ছিল মাঠে। বল পড়ে গড়াচ্ছিল না। খেলোয়াড়েরাও ঠিকমতো দৌড়াতে পারছিলেন না।
প্রথমার্ধেই অন্তত চারটি সহজ গোলের সুযোগ নষ্ট করেছেন আবাহনীর ফরোয়ার্ডরা। উজবেকিস্তানের মুজাফ্ফরজন মুজাফ্ফরভ, দুই নাইজেরিয়ান চুকুদিয়েবুবে এমেকা, ওজুকু ডেভিড আর কর্নেলিয়াস স্টুয়ার্ট প্রথমার্ধেই আবাহনীর লিডটাকে আরও বাড়াতে পারতেন। বাঁ প্রান্তে ফয়সাল আহমেদ ফাহিম আজ দারুণ খেলেছেন। নিজের গতি দিয়ে বেশ কয়েকটি সুযোগ তৈরি করেছিলেন। কিন্তু গোলের সংখ্যা বাড়ানো যায়নি।
ম্যাচের ২১ মিনিটে গোল করে এগিয়ে যায় আবাহনী। এর আগে বেশ কয়েকটি আক্রমণে ক্লাব ইগলসের রক্ষণভাগকে বেশ ব্যতিব্যস্ত রেখেছিলেন আবাহনীর ফরোয়ার্ডরা। এর মধ্যেই ওজুকু ডেভিডের ক্রস থেকে হেড করে ইগলসের গোলকিপার মোহাম্মদ শাফিউর পাশ দিয়ে গোল করেন স্টুয়ার্ট।
মালদ্বীপের ক্লাবটি যে খুব খারাপ খেলেছে, ব্যাপারটি এমন নয়। বাঁ দিক দিয়ে তাদের ফরোয়ার্ড ও অধিনায়ক আহমেদ রিজুয়ান, ডান দিক দিয়ে ইব্রাহিম মাহমুদ হাসানরা আবাহনীর রক্ষণভাগকে বিপদগ্রস্ত করেছেন। তবে আবাহনীর রক্ষণে দারুণ খেলেছেন জয়ের নায়ক দানিলো। ইরানি মিলাদ শেখও বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন ইগলসের সামনে। মিলোভান পিত্রোভিচ, আহমেদ হাসান, হিশাম সেলিমরা আক্রমণে উঠলেও কর্দমাক্ত মাঠে ইগলস ফুটবলারদের অনভ্যস্ততা বোঝা যাচ্ছিল।
আবাহনী রক্ষণে দুই দিকের দুই কান্ডারি ছিলেন অধিনায়ক রহমত মিয়া ও মোহাম্মদ মাসুদ রানা। এ দুজন দানিলো আর মিলাদকে ভালোই সহযোগিতা করেছেন। তবে মাসুদ রানার পা ফসকে একাধিকবার বিপদ তৈরি হয়েছিল। কিন্তু গোলরক্ষক মাহফুজ হাসান প্রিতম সতর্ক থাকায় প্রথমার্ধে সে ধরনের বিপদ ঘটেনি।
দ্বিতীয়ার্ধে আবাহনীকে বেশ খানিকটা পরিশ্রান্ত মনে হয়েছে। সে সুযোগের পুরো সদ্ব্যবহার করেছে ইগলস। একের পর এক আক্রমণও করে তারা। কিন্তু তাদের আক্রমণগুলো দানিলো আর মিলাদ শেখে আটকে যাচ্ছিল।
তবে শেষ পর্যন্ত গোল শোধ করতে সেট পিসই ব্যবহার করতে হয়েছে ইগলসকে। গোলটি হয়েছেও দারুণ। ৬৩ মিনিটে মিলোভান পিত্রোভিচের ফ্রি-কিক থেকে আসা বল বক্সে পেয়ে আবাহনীর রক্ষণভাগকে বোকা বানিয়ে জালে পাঠান ইগলস অধিনায়ক মোহাম্মদ রিজুয়ান।
১-১ সমতায় আবাহনী কিছুটা হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়ে। কিছুক্ষণ তারা খেলেছে এলোমেলো ফুটবল। তবে ভাগ্যও সঙ্গে ছিল আবাহনীর। ৮০ মিনিটে রিজুয়ানের ক্রস থেকে ইব্রাহিম মাহমুদ হাসানের হেড বারে লেগে প্রতিহত হলে বড় বাঁচা বেঁচে যায় আবাহনী।
তবে শেষ দিকে আবাহনীর আক্রমণগুলো বারবার ইগলসের রক্ষণে প্রতিহত হলেও ৮৮ মিনিটে মোজাফ্ফরভের কর্নার থেকে গোল করে দানিলো আবাহনীকে জয়ের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে দেন।
এএফসি কাপের প্লে-অফে আবাহনী ২২ আগস্ট নেপালি ক্লাব মাচিন্দ্রা ও ভারতের মোহনবাগান সুপারজায়ান্টসের মধ্যকার ম্যাচের বিজয়ী দলের সঙ্গে খেলবে।