ডর্টমুন্ডে আগামীকাল রাতে ইউরোর দ্বিতীয় সেমিফাইনালে মুখোমুখি হবে ইংল্যান্ড ও নেদারল্যান্ডস। এই ম্যাচে রেফারির দায়িত্বে জার্মানির ফেলিক্স সভায়ের। গতকাল তাঁকে সেমিফাইনালে রেফারির দায়িত্ব দেওয়ার কথা জানিয়েছে উয়েফা ও জার্মান ফুটবল ফেডারেশন (ডিএফবি)। উয়েফার এলিট ক্যাটাগরিভুক্ত এই রেফারির বিরুদ্ধে অতীতে ম্যাচ পাতানোর অভিযোগ উঠেছে এবং তিনি এই অপকর্ম স্বীকারও করেছিলেন। ইংল্যান্ডের তারকা জুড বেলিংহাম ফেলিক্সের নৈতিকতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছিলেন।
ফেলিক্স ব্যক্তিগত জীবনে রিয়েল এস্টেট ব্রোকার। জার্মান ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনে (ডিএফবি) বিভিন্ন পর্যায়ে ২০০৪ সালে রেফারির দায়িত্ব পালন শুরু করেন। ৪৩ বছর বয়সী এই রেফারির বিরুদ্ধে পরের বছরই (২০০৫) ম্যাচ পাতানোর অভিযোগ ওঠে। জার্মান ফুটবলে দ্বিতীয় বিভাগে ২০০৪ সালে মে মাসে ভেরডার ব্রেমেন অ্যামেচার-ভুপারটালার এসভি ম্যাচে আরেক অফিশিয়াল রবার্ট হয়সারের কাছ থেকে ৩০০ ইউরো উৎকোচ নিয়েছিলেন ফেলিক্স।
ম্যাচে ভুপারটালারের পক্ষে সিদ্ধান্ত দেওয়ার জন্য এই অর্থ নিয়েছিলেন তিনি। ২০০৫ সালে শুরু হওয়া তদন্তে ব্যাপারটি জানা যায় এবং ফেলিক্স ৬ মাস নিষিদ্ধও হয়েছিলেন। সাবেক রেফারি হয়সার সে মৌসুমে বেশ কয়েকটি ম্যাচ পাতানোর জন্য অর্থ নিয়েছিলেন। ভেরডার ব্রেমেন অ্যামেচার-ভুপারটালার ম্যাচে হয়সারের সহকারী রেফারির দায়িত্বে ছিলেন ফেলিক্স।
২০০৫ সালেই হয়সারকে আজীবনের জন্য ফুটবল থেকে নিষিদ্ধ করে ডিএফবি। বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (এপি) ম্যাচ পাতানোর সেই ঘটনা নিয়ে আরও জানিয়েছে, জার্মান সংবাদমাধ্যম ২০১৪ সালে এ ঘটনার মামলার রায় প্রকাশ করেছিল। সেখানে বলা হয়, ফেলিক্স ম্যাচের আগে হয়সারের কাছ থেকে ৩০০ ইউরো নেন কিন্তু ঘটনাটা তৎক্ষণাৎ কর্তৃপক্ষকে জানাননি। তবে ফেলিক্স ম্যাচটি পাতিয়েছিলেন—এর পক্ষে সরাসরি কোনো প্রমাণ মেলেনি। আদালতকে গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণও সরবরাহ করেছিলেন তিনি।
২০২১ সালে বুন্দেসলিগার ‘ক্লাসিকো’য় বায়ার্ন মিউনিখের কাছে ৩-২ গোলে হারের পর এই ম্যাচে রেফারির দায়িত্ব পালন করা ফেলিক্সের ম্যাচ পাতানোর সেই ঘটনার উদাহরণ টেনেছিলেন ডর্টমুন্ডের তখনকার মিডফিল্ডার বেলিংহাম। বর্তমানে রিয়াল মাদ্রিদে খেলা এই তারকা তখন বলেছিলেন, ‘এই ম্যাচের অনেক সিদ্ধান্তে তাকাতে পারেন। জার্মানিতে সবচেয়ে বড় ম্যাচে এমন একজনকে রেফারির দায়িত্ব দেওয়া হলো, যে এর আগে ম্যাচ পাতিয়েছে। আর কী প্রত্যাশা করা যায়?’
বেলিংহামকে এমন মন্তব্যের জন্য ৪০ হাজার ইউরো জরিমানা দিতে হয়েছিল। ডর্টমুন্ডের প্রধান নির্বাহী হ্যান্স জোয়াকিম ওয়াটৎজ তখন বেলিংহামের পাশে দাঁড়িয়ে বলেছিলেন, ‘জুড মিথ্যা বলেনি, যা অতীতে ঘটেছে, সেটাই বলেছে। কথাটা বলা তার উচিত হয়নি কিন্তু মিথ্যাও তো বলেনি। এ জন্য জুডকে কোনো ফল ভোগ করতে হবে, সেটা আমি প্রত্যাশা করি না।’
চলতি ইউরোয় এ পর্যন্ত তিনটি ম্যাচ পরিচালনা করেছেন ফেলিক্স। এর আগে শেষ ষোলোয় নেদারল্যান্ডসের জয়ের ম্যাচেও রেফারির দায়িত্বে ছিলেন তিনি। রোমানিয়ার বিপক্ষে ৩-০ গোলে জিতেছিল ডাচরা।
সেমিফাইনাল ম্যাচে ফেলিক্সের দায়িত্ব পাওয়ার ব্যাপারে মন্তব্য জানতে ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের (এফএ) সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল ইএসপিএন। ইংল্যান্ড ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা এ ব্যাপারে মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।
তবে গতকাল সংবাদ সম্মেলনে ইংল্যান্ড ডিফেন্ডার লুক শর কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, ফেলিক্সের সেমিফাইনাল ম্যাচ পরিচালনার দায়িত্ব পাওয়া নিয়ে ইংল্যান্ডের কোনো অস্বস্তি আছে কি না? শ বলেছেন, ‘না, একদমই নয়। উয়েফা যাকেই রেফারি হিসেবে বেছে নিক, আমাদের সম্মান করতে হবে। আমরা ম্যাচটা নিয়েই ভাবছি। রেফারি কিংবা অন্য কিছু নিয়ে নয়।’