অভিষেক হলো এলিটা কিংসলির, জিতল বাংলাদেশও
লড়াইটা ছিল একদল পেশাদার ফুটবলারের সঙ্গে একদল অপেশাদার ফুটবলারের। সামর্থ্য অনুযায়ী খেলতে পারলে পেশাদার ফুটবলারদেরই জেতার কথা। শেষ পর্যন্ত ব্যতিক্রম কিছু ঘটেনি। সিলেট জেলা স্টেডিয়ামে ফিফা প্রীতি ম্যাচে আজ বাংলাদেশই জিতেছে ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে ১৯৯-এ থাকা সেশেলসের বিপক্ষে। জয়ের ব্যবধান বড় হয়নি,১-০।
অবশ্য ব্যবধান নিয়ে ভাবছেন না বলে ম্যাচের আগের দিনই সংবাদ সম্মেলনে জানিয়ে দিয়েছিলেন বাংলাদেশ কোচ হাভিয়ের কাবরেরা। জয়টাই যেখানেই আসল, ব্যবধান নিয়ে ভাবার প্রয়োজনও দেখেননি তিনি। পূরণ হয়েছে কাবরেরার জয়ের লক্ষ্য। কিন্তু কোচ আগের দিন এও বলেছিলেন, ‘জয়ের পাশাপাশি আমরা এমন ফুটবল খেলতে চাই যাতে মনে হয় আমরা উন্নতি করেছি। আমাদের দেখে গর্ব হয়।’
কিন্তু গর্ব করার মতো ফুটবল খেলতে পারেনি বাংলাদেশ। খুব দৃষ্টিকাড়া কিছু চোখে পড়েনি। নিজেদের চেয়ে ৭ ধাপ পেছনে থাকা দলের সঙ্গে ২০২১ সালের শ্রীলঙ্কার চার জাতি টুর্নামেন্টে ১-১ করলেও আজ জিতেছে। হারলেও প্রতি আক্রমণ নির্ভর সেশেলস ভালো লড়াই করেছে।
অপেশাদার ফুটবলার হওয়ায় তাঁরা যে নিয়মিত অনুশীলন করতে পারেন না, সেটা বোঝা গেছে খেলায়। তবে স্কিল ভালো দলটির ফুটবলারদের। দ্বিতীয়ার্ধে বদলি ডিফেন্ডার ডন মেক্সিমের ফ্রি-কিক বাংলাদেশের ক্রসবারে লেগে ফিরে আসে। বাংলাদেশে বেঁচে যায় ভাগ্যের জোরে। ভুটানি রেফারি শেষ বাঁশি বাজাতেই বাংলাদেশ হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছে। তবে এই হারে সেশেলসের কোনো গ্লানি নেই।
সেশেলসের দুই সেন্টার ব্যাকের একজন মিচেল মানসিয়ানে এক সময় ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে চেলসির মূল দলে কয়েকটি ম্যাচ খেলেছেন। সেই তিনি সেশেলসের রক্ষণকে অনেকটা সময় ভরসা দিয়ে যান। অধিনায়ক স্টেনিয়ো মারি খেলেন ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার হিসেবে। ঠিক বাংলাদেশ অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়ার মতো। দুজনের জার্সি নম্বর ৬। স্টেনিয়ো চাইছিলেন তাঁর ফরোয়ার্ডদের বল জোগান দিতে। কয়েকবার দিয়েছেনও। কিন্তু গোল করাতে পারেননি, যেটা করেছেন জামাল ভূঁইয়া।
৪২ মিনিটে জামাল ভূঁইয়ার ফ্রি-কিকে সেশেলস ফরোয়ার্ড ব্র্যান্ডনের হেডে বল ক্লিয়ার হয়নি। সেই বল বাতাসে থাকতেই হেডে জালে পাঠান বাংলাদেশের সেন্টারব্যাক ফিনল্যান্ড প্রবাসী তারিক কাজী, জাতীয় দলের জার্সিতে যেটি তাঁর প্রথম গোল। ২০২১ সালের ৩ জুন বাংলাদেশের জার্সিতে আফগানিস্তানের বিপক্ষে বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে অভিষেক হয়েছিল তারিকের।
সেই থেকেই রক্ষণে নিয়মিতই তিনি খেলছেন বাংলাদেশ দলে। আজ হয়ে উঠেছেন জয়ের নায়কও। সেই তারিকের গোলে প্রথমার্থে এগিয়ে থাকার স্বস্তিতে দ্বিতয়ার্ধের শুরুতে তৈরি হলো ইতিহাস। বাংলাদেশের জার্সিতে আন্তর্জাতিক অভিষেক হলো ২০২১ সালে নাইজেরিয়ার নাগরিকত্ব ছেড়ে বাংলাদেশি হওয়া এলিটা কিংসলির।
৭ বছর পর জাতীয় দলের সুযোগ পেয়ে একাদশে নামা স্ট্রাইকার আমিনুর রহমানকে তুলে এলিটাকে নামান কোচ। এলিটাই একমাত্র ফুটবলার, যিনি বাংলাদেশে খেলতে এসে এদেশের নাগরিকত্ব নিয়েছেন। অবশেষে পূরণ হয়েছে বাংলাদেশি হিসেবে তাঁর আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলার স্বপ্নও। স্বপ্ন পূরণের পর গোল করার সুযোগও আসে তাঁর সামনে। কিন্তু তাঁর শট চলে যায় পোস্টের ওপর দিয়ে।
শেষ দিকে নষ্ট করেছেন আরেকটি সুযোগ। বাংলাদেশ কোচ কাবরেরা একাদশ সাজিয়েছেন মূলত চেনা ফুটবলারদের নিয়েই। যেখানে ৮ জনই বসুন্ধরা কিংসের।
বাংলাদেশের একাদশ: আনিসুর রহমান, তপু বর্মণ, তারিক কাজী, সাদ উদ্দিন, রিমন হোসেন, জামাল ভূঁইয়া, মাসুক মিয়া, সোহেল রানা, সোহেল রানা (জুনিয়র), রাকিব হোসেন, আমিনুর রহমান