আবাহনী কেন পারছে না?
২০০৭ সালে পেশাদার ফুটবল লিগের প্রথম শিরোপাটাই জিতেছিল ঢাকা আবাহনী লিমিটেড। পেশাদার যুগে প্রবেশের পর প্রিমিয়ার লিগের সবচেয়ে বেশি শিরোপা এখনো পর্যন্ত আবাহনীরই—৬ বার।
কিন্তু সেই আবাহনীই লিগ শিরোপার দেখা পাচ্ছে না গত ৬ মৌসুম ধরে, যদিও করোনার কারণে ২০২০ সালে পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছিল লিগ। কিন্তু তারপরেও তো ৫ মৌসুম কেটে গেল। ২০১৮ সালে বসুন্ধরা কিংসের আবির্ভাবের পর থেকেই আসলে পথহারা আবাহনী। ফেডারেশন কাপও সর্বশেষ জিতেছিল ২০১৭–১৮ মৌসুমে। এর আগের দুটি ফেডারেশন কাপের চ্যাম্পিয়নও আবাহনীই। ২০১৮ সালের পর আবাহনীর একমাত্র সাফল্য বলতে ২০২১ সালে স্বাধীনতা কাপ জয়।
কিন্তু এমন কেন হচ্ছে? কাগজে–কলমে বসুন্ধরা কিংসের বড় প্রতিদ্বন্দ্বীই তারা। অর্থেরও কোনো সমস্যা নেই দেশের কিছু দিন আগেই সূবর্ণ জয়ন্তী উদ্যাপন করা এই ক্লাবটির। দেশের অন্যতম দর্শকপ্রিয় ক্লাব আবাহনীর হালের পারফরম্যান্স মনোঃকষ্টেরই কারণ হয়েছে সমর্থকদের। ভালো মানের দল গড়ে, টাকা খরচ করে ব্রাজিল, সেন্ট ভিনসেন্ট কিংবা ইরানের মতো দেশ থেকে বিদেশি ফুটবলার এনেও চলমান মৌসুমেও সাফল্য–শূন্যই থাকতে হচ্ছে তাদের।
কোচ, ম্যানেজার কী করেছে এতদিন? খেলোয়াড়েরা যেন ভালো খেলতে পারে, সেই দায়িত্ব তো তাদেরই
স্বাধীনতা কাপ, ফেডারেশন কাপের ফাইনাল খেলা হয়নি, লিগেও শিরোপার লড়াই থেকে ছিটকে পড়েছে অনেক আগেই। প্রিমিয়ার লিগের শেষ পর্যায়ে এসে আবাহনীর লক্ষ্য এখন দ্বিতীয় স্থান। কাল প্রিমিয়ার লিগে ব্রাদার্স ইউনিয়নকে ৭-১ গোলে হারিয়ে রানার্সআপের সম্ভাবনা তৈরি করেছে তারা। সেটিও সম্ভব হয়েছে কালই প্রায় পুরো লিগজুড়ে দ্বিতীয় স্থানে থাকা মোহামেডান রহমতগঞ্জের সঙ্গে ৩-৩ গোলে ড্র করায়। যে ক্লাবের কাছে এক সময় রানার্সআপ হওয়াটা ছিল ব্যর্থতা, তারা এখন দ্বিতীয় হলেই বর্তে যায়। প্রিয় ক্লাবের এই অবস্থাটা কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না সমর্থকেরা।
আবাহনী এই অবস্থার কারণ অনেক। তবে ক্লাব–সংশ্লিষ্ট কেউই এ ব্যাপারে মুখ খুলতে চাচ্ছেন না। অধিনায়ক রহমত মিয়াকে জিজ্ঞেস করা হলে তাঁর গলায় ছিল কিছুটা ঝাঁজই, ‘আমরা আমাদের খেলাটা খেলতে পারছি না, নিজেদের সামর্থ্যের পুরোটা দিতে পারিনি বলেই এই অবস্থা।’ তবে তাঁর কথায় এতটুকু না বোঝার কোনো কারণ নেই যে দলে অভ্যন্তরীণ সমস্যা আছে। ফুটবল পাড়ায় এ নিয়ে নানা কানাঘুষাও আছে। দেশের ঐতিহ্যবাহী ক্লাবটির ফুটবল দল নাকি ভেতরে ভেতরে নানা সমস্যায় জর্জরিত।
আর্জেন্টাইন কোচ ডিয়েগো ক্রুসিয়ানিও মুখে এঁটেছেন কুলুপ। দল কেন খারাপ করল এ ব্যাপারে জানতে চাইলে এ ব্যাপারে ‘মৌসুম শেষে’ কথা বলবেন বলেই জানালেন।
দীর্ঘ দিন আবাহনীর ফুটবল দলের হাল ধরে ছিলেন সত্যজিৎ দাস রুপু। এ মৌসুমে তাঁকে বাদ দিয়ে ম্যানেজার করা হয় আবাহনীরই আরেক সাবেক ফুটবলার নজরুল ইসলামকে। মৌসুমজুড়ে আবাহনীর ব্যর্থতা নিয়ে তাঁর কথা, ‘আমি জানি না দলটা কেন ভালো করতে পারছে না।’ তবে একটা বিষয়ে খেলোয়াড়দের বিরুদ্ধে অভিযোগই আনলেন তিনি, ‘খেলা শুরুর আগে কোচ যেভাবে ব্রিফ করে দেন, মাঠে গিয়ে ওরা সেটা প্রয়োগ ঘটাতে পারছে না। আমি জানি না এটাই ওদের সর্বোচ্চ সামর্থ্য কিনা।’
ম্যানেজারের এমন কথা মানতে পারছেন না আবাহনীর সাবেক তারকা আশরাফউদ্দিন চুন্নু, ‘খেলোয়াড়েরা যদি মাঠে নির্দেশনার বাস্তবায়ন ঘটাতে না পারে, সেই ব্যর্থতা তো ম্যানেজমেন্টেরই। কোচ, ম্যানেজার কী করেছে এতদিন? খেলোয়াড়েরা যেন ভালো খেলতে পারে, সেই দায়িত্ব তো তাদেরই।’
আশরাফউদ্দিন আবাহনীতে সাংগঠনিক সমস্যাই দেখেন, ‘আবাহনীর অর্থ কোনো সমস্যা না। কিন্তু আমার মনে হয় তারা সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না। আগামীতে ব্যর্থতা কাটিয়ে উঠতে সাংগঠনিক সংস্কার জরুরি।’