‘অপয়া’ কেইনে শুকিয়ে যাচ্ছে ‘বায়ার্ন–সাগর’

বায়ার্নেও কি ট্রফিহীন মৌসুম কাটতে যাচ্ছে হ্যারি কেইনের?এএফপি

‘অভাগা যেদিকে চায়, সাগর শুকায়ে যায়’।

বহুল প্রচলিত বাংলা প্রবাদটা হ্যারি কেইনের জানার কথা নয়। কিন্তু বায়ার্ন মিউনিখের ৩০ বছর বয়সী ফরোয়ার্ডের এখনকার অনুভূতি হয়তো অনেকটা এরকমই। চ্যাম্পিয়ন হওয়ার স্বাদ পেতে জার্মানিতে যাওয়া ইংলিশ তারকার সামনে থেকে আবারও এক এক করে সব ট্রফি দূরে সরে যাচ্ছে, যেমনটা এক দশকের বেশি সময় ধরে হয়েছে টটেনহামে। কেইনের ‘চেনা’ এই দৃশ্যে সবশেষ সংযোজন চ্যাম্পিয়নস লিগ শেষ ষোলো প্রথম লেগে লাৎসিওর কাছে বায়ার্নের হার।

পরশু রোমের অলিম্পিক স্টেডিয়ামে ইতালিয়ান ক্লাবটির কাছে ১-০ ব্যবধানে হেরেছে বায়ার্ন। জার্মান ক্লাবটির চ্যাম্পিয়নস লিগ ইতিহাস বলছে, সবশেষ যে সাত আসরে দলটি নকআউটের প্রথম লেগে হেরেছে, ছয়টিতেই পরের লেগে আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। আগামী ৫ মার্চ মিউনিখের ফিরতি লেগ তাই বাভারিয়ানদের জন্য হাজির হচ্ছে পাহাড়জয়ের চ্যালেঞ্জ নিয়ে। যে চ্যালেঞ্জ কেইনের জন্য সম্ভবত আরও বেশি।

গত গ্রীষ্মে টটেনহাম থেকে বায়ার্নে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত জানানোর সময় স্পষ্ট করেই বলেছিলেন, ট্রফি জিততে চান। যে ট্রফি জিততে পারতেন ১২ আগস্ট বায়ার্নে নাম লেখানোর ১২ ঘণ্টার মধ্যেই। সে দিন ছিল জার্মান সুপার কাপের ফাইনাল, যে ট্রফি সবশেষ সাত বছরের ছয়বারই জিতেছে বায়ার্ন। কিন্তু কেইন নামতে না নামতেই জার্মান সুপার কাপে বায়ার্ন-রাজত্ব শেষ! আলিয়াঞ্জ অ্যারেনায় লাইপজিগের কাছে বায়ার্ন হেরে বসে ৩-০ ব্যবধানে

সেই যে প্রথম দিনেই ‘কুফা’টা লাগল, গত ছয় মাসে তা শুধু বেড়েই চলেছে। নভেম্বরে জার্মানির কাপ প্রতিযোগিতা ডিএফবি-পোকাল থেকেও ছিটকে যায় বায়ার্ন।

আরও পড়ুন

প্রতিযোগিতাটিতে রেকর্ড ২০ বারের চ্যাম্পিয়নরা দ্বিতীয় রাউন্ডেই হারে তৃতীয় স্তরের দল সারব্রাকেনের কাছে। এর মধ্যেও অবশ্য কেইনের পারফরম্যান্স ছিল ঊর্ধ্বমুখী। দলের হয়ে প্রথম ১৬ ম্যাচেই করেন ২২ গোল, গড়েন একাধিক ক্লাব রেকর্ড। কিন্তু বড়দিনের বিরতির পর কেইনের গোলেও ভাটার টান পড়ে। সবশেষ ১২ ম্যাচে তাঁর কাছ থেকে গোল এসেছে মাত্র ৬টি। এর মধ্যে গত শনিবার বুন্দেসলিগায় লেভারকুসেন আর বুধবার চ্যাম্পিয়নস লিগে লাৎসিওর বিপক্ষে কোনো গোল তো পানইনি, দুই ম্যাচ মিলিয়ে লক্ষ্যে শটই রাখতে পেরেছেন মাত্র একটি।

গুরুত্বপূর্ণ দুটি ম্যাচে নিজের ছায়া হয়ে থেকেছেন হ্যারি কেইন
রয়টার্স

পাঁচ দিনের ব্যবধানে খেলা ম্যাচ দুটির মাধ্যমে মৌসুমে সবচেয়ে বড় দুটি আসরে ধাক্কা খেয়েছে বায়ার্ন। শীর্ষস্থানে থাকা লেভারকুসেনের কাছে ৩-০ ব্যবধানে হারায় বায়ার্ন এখন লিগে ৫ পয়েন্ট পিছিয়ে। সেই ধাক্কার ক্ষত মুছতে না মুছতেই রোমে হোঁচট চ্যাম্পিয়নস লিগে। ম্যাচে লাৎসিওর একমাত্র গোলটি এসেছে ৬৯তম মিনিটে চিরো ইম্মোবিলের পেনাল্টি থেকে, বায়ার্নের দায়ত উপামেকানো লাল কার্ড দেখার জেরে। ১০ জনের বায়ার্ন পরে সেই গোল শোধ দিতে পারেনি। পারেননি কেইনও।

আরও পড়ুন

রোমের রাতটিতে ইংল্যান্ড অধিনায়ক একটাই বলার মতো সুযোগ পেয়েছিলেন। সপ্তম মিনিটের সেই সুযোগ নষ্ট করেছেন বল বারের ওপর দিয়ে মেরে। কেইনের এমন হতশ্রী পারফরম্যান্সকে তাঁর নিজেরই ছায়া বলে বিবিসি ফাইভ লাইভে মন্তব্য করেছেন ফুটবল বিশ্লেষক রাফায়েল হোনস্টেইন, ‘মৌসুমের শুরুর দিকে যেমনটা প্রভাব ফেলেছিলেন, কয়েক সপ্তাহ ধরে ততটা পারছেন না। মনে হচ্ছে সে তাঁর নিজেরই ছায়া হয়ে গেছে।’

লেভারকুসেনের পর লাৎসিওর বিপক্ষেও হতাশায় ম্যাচ শেষ করেছেন হ্যারি কেইন
এএফপি

টিএনটি স্পোর্টসের আলোচনায় বায়ার্নের বর্তমান বেহাল পরিস্থিতির পেছনে কেইনকে পরোক্ষে দুষেছেন সাবেক বায়ার্ন মিডফিল্ডার ওয়েন হারগ্রিভস, ‘ম্যাচে কেইনকে বলতে গেলে পাওয়াই যায়নি। লেভারকুসেনের বিপক্ষেও খেলতে পারেনি, লাৎসিওর বিপক্ষেও নয়। বায়ার্নকে আক্রমণভাগে আরও গতি বাড়াতে হবে। তারা সুন্দর ফুটবলও খেলছে না।’ তবে জার্মান সাংবাদিক কনস্টান্টিন একনারের কথায় আবার কেইনের প্রতিই সহমর্মিতা আছে। বিবিসি রেডিও ফাইভের লাইভে তিনি দায় দিয়েছেন অন্যদের, ‘বায়ার্ন কেইনের একার কারণে ভুগছে না। ওরা ব্যাকলাইন ধরে খেলতে পারে, কিন্তু কেইন সেখান থেকে বল পাচ্ছে না। মনে হচ্ছে সে দ্বীপে বিচ্ছিন্ন হয়ে আছে। সে যদি বলই না পায়, সে কী করবে?’

আরও পড়ুন

শেষ পর্যন্ত দায় কেইনের হোক বা অন্য কারও, বাস্তবতাটা হচ্ছে কেইন আবারও শূন্য হাতে মৌসুম শেষের শঙ্কায়। টটেনহামে এক যুগের ক্যারিয়ারে ৪৩৫ ম্যাচ খেলে ২৮০টি গোল তাঁর। ইংল্যান্ডের জাতীয় দলেও ৮৯ ম্যাচে আছে ৬২ গোল। এর মধ্যে বিশ্বকাপে একবার আর প্রিমিয়ার লিগে তিনবার জিতেছেন গোল্ডেন বুটের পুরস্কার। কিন্তু দলগতভাবে একটা ট্রফি নেই কোথাও। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকে এটিকে নাম দিয়েছেন ‘কেইন-কার্স’ বা কেইন-অভিশাপ। মানে টটেনহাম ও ইংল্যান্ড যে গত এক দশকে কিছু জিততে পারেনি, তার পেছনে ‘অপয়া’ কেইনই দায়ী!

বায়ার্নেও ‘কেইন–কার্স’?
এএফপি

এবার বায়ার্ন মিউনিখের ট্রফি-শূন্য মৌসুমের শঙ্কা দেখা দেওয়ায় আবারও আলোচনায় কেইন-কার্স। এক এক্স ব্যবহারকারী যেমন লাৎসিওর কাছে বায়ার্নের হারের পর কেইনকে ‘অপয়া’-ই বুঝিয়েছেন নিজের পোস্টে, ‘হ্যারি কেইনের অভিশাপ আস্তে আস্তে বায়ার্ন মিউনিখকেও অনুসরণ করতে শুরু করেছে।’

ছয়বারের ইউরোপীয় চ্যাম্পিয়ন যদি একযুগ পর কোনো ইতালিয়ান দলের কাছে শেষ ষোলোর প্রথম ম্যাচে হেরে বসে, সবশেষ এগার বছরে লিগকে নিজেদের সম্পত্তি বানিয়ে ফেলা ক্লাব যদি কখনো বুন্দেসলিগা না জেতা ক্লাবের কাছে বড় ব্যবধানে পিছিয়ে থাকে, তারও আগে শূন্য হাতে বিদায় নেয় পরপর দুটি প্রতিযোগিতা থেকে, তবে অভিশাপের কথা উঠবে না কেন!

আরও পড়ুন