বার্নাব্যুতে রিয়ালের আধিপত্য, নাকি সিটির রূপকথা

‘রিয়াল মাদ্রিদ-ম্যানচেস্টার সিটির ম্যাচ আধুনিক ফুটবলের ক্লাসিকো’—গত বছরের এপ্রিলে রিয়াল-সিটির কোয়ার্টার ফাইনাল সামনে রেখে কথাটা বলেছিলেন সাবেক রিয়াল কোচ হোর্হে ভালদানো। কদিন আগে সিটির বিপক্ষে প্লে-অফের প্রথম লেগের আগে একই কথা বলেছিলেন কার্লো আনচেলত্তিও। এই দশকের অন্যতম সফল দুই দলের লড়াইয়ের উত্তাপ বুঝতে এর চেয়ে বেশি সাক্ষ্যপ্রমাণের প্রয়োজন আছে কি!

আরও পড়ুন

আগামী দিনগুলোয় আধুনিক ফুটবলে ধ্রুপদি লড়াইয়ের কথা বললে রিয়াল-সিটির লেখা রূপকথাগুলোর স্থান ওপরের দিকেই থাকবে। এর মধ্যে কোনো কোনো ম্যাচ সময়ের ব্যাপ্তি পেরিয়ে চিরকালীনও হয়ে গেছে। আজ রাতে সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে কি তেমন কোনো ম্যাচই অপেক্ষা করছে? কবীর সুমনের গানের কথায় বললে, ‘প্রশ্নগুলো সহজ, আর উত্তরও তো জানা।’

তবে ম্যাচের আগে রিয়াল মাদ্রিদ কোচ কার্লো আনচেলত্তির খোঁচাতেই বোঝা যাচ্ছে, পেপ গার্দিওলার সঙ্গে তাঁর পুরোনো হিসাব-নিকাশগুলো চুকানো বাকি, ‘রেফারি ম্যাচ শুরুর বাঁশি বাজানোর আগে আমি তাকে (গার্দিওলা) জিজ্ঞেস করব—তোমাদের (ম্যান সিটির) পরের রাউন্ডে যাওয়ার ১ শতাংশও কি সম্ভাবনা আছে? সে কিন্তু আরও বেশি সম্ভাবনার কথাই জোর দিয়ে বলবে...কিন্তু এই পর্যায়ে দাঁড়িয়েও আমরা বলতে চাচ্ছি না, আমাদের ৯৯ শতাংশ সুযোগ রয়েছে।’

বার্নাব্যুতে অনুশীলনে রিয়াল মাদ্রিদ
এএফপি

এরপর অবশ্য নিজেদের হোম ভেন্যুর সুবিধার কথাটাই জানিয়ে রাখলেন এই ইতালিয়ান কোচ। পাশাপাশি প্রথম লেগের মতো আরেকটা চমক দেখানোর কথাই বললেন, ‘আমরা মনে করি, অবশ্যই বার্নাব্যুতে কিছুটা বাড়তি সুবিধা পাব। আমাদের চেষ্টা থাকবে প্রথম লেগের মতোই একটা ইতিবাচক পারফর্ম করা।’

আরও পড়ুন

পরিসংখ্যানও সিটির পক্ষে নেই। ঘরের মাঠে রিয়ালের কাছে প্রথম লেগে ৩-২ গোলে হারা দলটি নিজেদের সাম্প্রতিক ইতিহাসে সবচেয়ে বাজে সময় পার করছে। এর আগে বার্নাব্যুতে ছয় ম্যাচ খেলে মাত্র একবারই জিতেছে সিটি—২০২০ সালে শেষ ষোলো প্রথম লেগে ২-১ গোলে। হেরেছে ৩ ম্যাচ, ২ ম্যাচ ড্র করেছে।

তবে কার্লো আনচেলত্তি নিশ্চয় ভাবছেন, গার্দিওলার সময়টা যতই খারাপ যাক, আহত বাঘ যেকোনো সময় ভয়ংকর হয়ে উঠতে পারে। তাই তো প্রথম লেগের আগে রিয়াল কোচ বলেছিলেন, ‘আমি এখনো মনে করি, সিটি ইউরোপের সেরা দলগুলোর একটি।’

রিয়ালের মুখোমুখি হওয়ার আগে অনুশীলনে সিটি
এএফপি

আনচেলত্তির এই উপলব্ধির সঙ্গে চলতি মৌসুমে রিয়ালের পারফরম্যান্সকেও বিবেচনায় নিতে হয়। এ মৌসুমে ইউরোপের সফলতম দলটির যাচ্ছে উত্থান-পতনের ভেতর দিয়ে। বিশেষ করে বড় ম্যাচে প্রায়ই পথ হারিয়েছে তারা। সম্প্রতি লা লিগায় হারিয়েছে শীর্ষ স্থানও। রক্ষণে দলটির দুর্বলতা তো দিনের আলোর মতো স্পষ্ট। পাশাপাশি এমন ম্যাচে ১ গোলের ব্যবধানে এগিয়ে থাকা বরাবরই ঝুঁকিপূর্ণ। দারুণ কোনো আক্রমণেই এলোমেলো হয়ে যেতে পারে সব স্বপ্ন।

সব মিলিয়ে প্রতিপক্ষের কথার ফাঁদে পা না দিয়েই হয়তো নিজেদের রণকৌশল সাজাবেন আনচেলত্তি। আর সিটি কোচের হাতে তো ১ শতাংশ সম্ভাবনা আছেই। একটি গোলেই যা মুহূর্তের মধ্যে হয়ে যেতে পারে এক শ। শেষ পর্যন্ত তেমন কিছু হলে বার্নাব্যুতে আরেকটি রূপকথার গল্প মোটেই অসম্ভব কিছু নয়।