লিভারপুলের প্রতি এই রেফারি কেন ক্ষুব্ধ, জানা নেই ক্লপের
সাত গোলের ‘থ্রিলার’ জিতলে যেকোনো কোচের মন-মেজাজ এমনিতেই ভালো থাকার কথা। আর সেটাও যদি হয় ম্যাচের প্রথম ১৫ মিনিটের মধ্যে ৩-০ গোলে এগিয়ে যাওয়ার পর সমতায় ফিরতে বাধ্য হয়ে একদম শেষ মুহূর্তে করা গোলে তুলে নেওয়া জয়—তাহলে তো কথাই নেই! মেজাজ চনমনে থাকার কথা। ইয়ুর্গেন ক্লপ কাল এমন ফুরফুরে মেজাজের মধ্যেই অভিযোগের আঙুল তুলেছেন একজনের প্রতি, ম্যাচের রেফারি পল টিয়ের্নি!
টটেনহাম হটস্পার্সের বিপক্ষে কাল ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে ৪-৩ গোলে জয়ের ‘থ্রিলার’ জয়ে লিভারপুল কোচ আবেগ ধরে রাখতে পারেননি। অতিরিক্ত সময়ে (৯০+৪) ডিয়েগো জোতার জয়সূচক গোলের পর দৌড়ে ম্যাচের চতুর্থ অফিশিয়ালের কাছে গিয়ে চিৎকার করেছেন ক্লপ। এই গোলের ৯৯ সেকেন্ড আগে ফ্রি কিক থেকে হেডে করা গোলে টটেনহামকে ৩-৩ ব্যবধানে সমতায় ফেরান রিচার্লিসন।
ওই ফ্রি কিক মেনে নিতে পারেননি ক্লপ। তখনই মেজাজ দেখিয়েছিলেন। আর জয়ের পর চতুর্থ অফিশিয়াল জন ব্রুকসের প্রতি তেড়ে গিয়ে চিৎকার করাটা তাঁর সেই মেজাজেরই প্রতিফলন। রেফারি পল টিয়ের্নি এ জন্য তাঁকে হলুদ কার্ডও দেখান। এই আবেগ দেখানোর সময় টটেনহাম বেঞ্চের সামনে ক্লপ পায়ে আঘাতও পেয়েছেন। এখানেই শেষ নয়। ক্লপ নিজের ক্ষোভটা স্পষ্ট করে ঝেড়েছেন ম্যাচ শেষে স্কাই স্পোর্টসের সঙ্গে কথা বলার সময়।
ম্যাচের রেফারি পল টিয়ের্নির প্রতি আঙুল তুলে লিভারপুল কোচ বলেন, ‘টিয়ের্নির সঙ্গে আমাদের অতীত ইতিহাস আছে। আমাদের প্রতি তার কিসের ক্ষোভ জানা নেই। সে দাবি করে কোনো সমস্যা নেই, কিন্তু তা সত্যি হতে পারে না। সে আমাকে যে চোখে দেখে সেটাই বুঝতে পারি না। হ্যাঁ, আমি অমন উদ্যাপন না করলেও পারতাম। কিন্তু আমাকে হলুদ কার্ড দেখানোর সময় সে যা বলেছে, তা ঠিক হয়নি।’
জার্মান এই কোচের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, টিয়ের্নি তাঁকে কী বলেছেন। উত্তরে পাল্টা খোঁচা মেরেছেন ক্লপ, ‘আমি এ নিয়ে কিছু বলব না। যা কথা হয়, রেফারিরা তো সেসব বলে না, তাই আমিও বলব না।’ গত মৌসুমে টটেনহামের মাঠে ২-২ গোলে ড্র ম্যাচের উদাহরণ টেনে টিয়ের্নির প্রতি ক্ষোভটা আরও স্পষ্ট করেছেন লিভারপুলের এই কোচ, ‘পল টিয়ের্নি কিন্তু (সে ম্যাচে) হ্যারি কেইনকে লাল কার্ড দেখায়নি। কিন্তু রোবো (অ্যান্ডি রবার্টসন) লাল কার্ড দেখেছিল। এটাই প্রথমবার নয়, এমন ঘটনা আরও আছে।’
চতুর্থ অফিশিয়ালের প্রতি তেড়েফুড়ে গেলেও তাঁকে নাকি কিছুই বলেননি, এমন দাবি ক্লপের। ম্যাচের উত্তেজনা বিচারে তখন আবেগটা ধরে রাখতে পারেনি, তা স্বীকার করেছেন ক্লপ। তবে এ নিয়ে মজাও করেছেন, ‘চতুর্থ অফিশিয়ালকে আমি একটি বাজে কথাও বলিনি। কিন্তু তখন সম্ভবত হ্যামস্ট্রিংয়ে টান লেগেছে, শাস্তিটা তো পেয়েছি।’
ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে রেফারিরা যে সংগঠনের অধীন কাজ করেন সেই ‘প্রফেশনাল গেম ম্যাচ অফিশিয়াল’ (পিজিএমওএল)–এর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ‘ইয়ুর্গেন ক্লপের বলা কথাগুলো আমরা শুনেছি। ম্যাচে পল টিয়ের্নির পুরো অডিও যাচাই করে আমরা নিশ্চিত করে বলতে পারি, লিভারপুল কোচকে শাস্তি দেওয়ার সময় পেশাদার আচরণই করেছেন টিয়ের্নি। তাই টিয়ের্নির সঠিক আচরণ করেননি এমন অভিযোগ আমরা প্রত্যাখ্যান করছি।’ রেফারিকে সরাসরি দোষারোপ করায় ক্লপ শাস্তি পাবেন কি না, তা এখনো জানা যায়নি।
তবে ক্লপের সঙ্গে টিয়ের্নির ঝামেলা আজকের নয়। বিবিসি জানিয়েছে, ২০২০ সালে অ্যাস্টন ভিলার বিপক্ষে লিভারপুলের ম্যাচে রেফারি ছিলেন টিয়ের্নি। সে ম্যাচে লিভারপুল ২-০ গোলে জিতলেও ক্লপকে খোঁচা মেরেছিলেন টিয়ের্নি। লিভারপুলের খেলোয়াড় জর্জিনিও ভাইনালডাম ম্যাচের একটি মূহূর্তে ফাউল করলেও তা ধরতে পারেননি টিয়ের্নি।
এই উদাহরণ টেনে ক্লপকে টিয়ের্নি বলেছিলেন, ‘আমিও ভুল করি ইয়ুর্গেন। খেলোয়াড়দের মতোই ভুল করি। এটা মেনে নাও।’ এই ঘটনার এক বছর পর টটেনহামের বিপক্ষে ২-২ গোলে ড্রয়ের সেই ম্যাচে কেইন লাল কার্ড দেখা থেকে বেঁচে যাওয়ার পর টিয়ের্নিকে ক্লপ বলেছিলেন, ‘শুধু তুমি ছাড়া আমার সঙ্গে আর কোনো রেফারির কোনো ঝামেলা নেই।’