হামজাকে কেমন দেখলেন বাংলাদেশের সাবেকরা

ভারতের খেলোয়াড়দের কঠিন পরীক্ষাই নিয়েছেন হামজাহামজার ফেসবুক পেজ

লাল-সবুজের জার্সিতে অভিষেক ম্যাচেই নিজেকে নিংড়ে দিয়েছেন হামজা চৌধুরী। পুরো ৯০ মিনিট তাঁকে কখনো দেখা গেছে মিডফিল্ড জেনারেলের ভূমিকায়, আবার কখনো রক্ষণভাগের অতন্দ্রপ্রহরী হিসেবে। প্রতিপক্ষের আক্রমণ ঠেকানো, নিজ দলের গোলের সুযোগ তৈরি, কী না করেছেন ইংলিশ লিগে খেলা এই ফুটবলার।

এককথায় গতকাল এশিয়ান কাপের বাছাইয়ে ভারতের বিপক্ষে ম্যাচের পুরোটা সময় রাজত্ব করেছেন হামজা। তাঁর এমন নৈপুণ্যে মুগ্ধ বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের সাবেক খেলোয়াড়েরাও। তাঁদের চোখে ‘এ‍+’ পারফরম্যান্সই ছিল হামজার।

আরও পড়ুন

সাবেক অধিনায়ক বিপ্লব ভট্টাচার্য তো বলেই দিলেন, হামজা মাঠে থাকাতেই বাংলাদেশ দলের চেহারা পাল্টে গেছে। প্রতিপক্ষের আক্রমণ ঠেকাতে হামজার বুদ্ধিদীপ্ত রণকৌশলের প্রশংসা করে বিপ্লব আজ প্রথম আলোকে বলেন, ‘হামজা থাকাতে দলের যে ডিফেন্ডিং শেড, সেটা পুরোপুরি ঠিক ছিল। কারণ, সে নেতৃত্ব দিয়েছে। তার উপস্থিতি বাংলাদেশ দলের চেহারাই পুরোপুরি বদলে দেয়। খেলোয়াড়দের প্রেরণা, নেতৃত্ব, একটা দলে এসব দরকার। হামজা কখনো মিডফিল্ডে গিয়ে নেতৃত্ব দিয়েছে, কখনো আবার ডিফেন্সে নেতৃত্ব দিয়েছে। আসলে বাংলাদেশ দলে তার মতো একজন নেতার দরকার ছিল। গত ম্যাচে সেই অভাবটাই যেন সে পূরণ করেছে।’

রক্ষণ থেকে আক্রমণ—সব জায়গাতেই ছিলেন হামজা
হামজার ফেসবুক পেজ

দেশের ইতিহাসে অন্যতম সেরা ফরোয়ার্ড জাহিদ হাসান এমিলিও হামজার পারফরম্যান্স দেখে উচ্ছ্বসিত। জওহরলাল নেহরু স্টেডিয়ামে ভারতের বিপক্ষে একাধিকবার গোলের সুযোগ তৈরি করার পাশাপাশি ছেত্রীদের আক্রমণ রুখে দেওয়ার গুরুদায়িত্ব ঠিকঠাকভাবে পালন করেছেন শেফিল্ড ইউনাইটেডে খেলা এই মিডফিল্ডার। সে জন্য এমিলির চোখে হামজাই ম্যাচসেরা, ‘আমার দৃষ্টিতে হামজা এই ম্যাচের ম্যান অব দ্য ম্যাচ। সে সবার চেয়ে আলাদা ছিল। দুই দলের ২২ জন খেলোয়াড়ের মধ্য থেকেও যদি বলেন, আমি বলল, হামজা অন্যদের চেয়ে পুরোপুরি আলাদা ছিল। আসলে সে যে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে খেলা ফুটবলার, সেটা মাঠে প্রমাণ করেছে। সে রাইটব্যাকে, লেফটব্যাকে গিয়েও বল ট্যাকল করেছে। প্রতিপক্ষের উইং ব্লক করেছে। আবার তাদের বক্সেও ভয় ধরিয়েছে।’

আরও পড়ুন

তবে রাকিব-মোরছালিনদের সঙ্গে হামজার একটা বড় পার্থক্যও ফুটবলবোদ্ধাদের নজরে এসেছে। ম্যাচের পুরো সময় তাঁদের মনোবল কিংবা টিকে থাকার ক্ষমতা এক রকম ছিল না। শুরুর ২৫ থেকে ৩০ মিনিট ম্যাচে যে গতি ছিল, সময় গড়ানোর সঙ্গে সেখানে অনেকটা হেরফের লক্ষ করা যায়। কিন্তু হামজা শেষ মিনিট পর্যন্ত নিজের কাজটাই করে গেছেন।

ম্যাচের শেষ পর্যন্ত নিজের দায়িত্ব পালন করে গেছেন হামজা
হামজার ফেসবুক পেজ

অবশ্য এই ব্যবধান এখন আর কমানো যাবে না বলে মনে করছেন ২০০৩ সাফজয়ী বাংলাদেশ দলের ফুটবলার আমিনুল হক। দেশের হয়ে পঞ্চাশের বেশি ম্যাচ খেলা সাবেক এই গোলকিপার প্রথম আলোকে বলেন, ‘এ পর্যায়ে এসে এটা (খেলোয়াড়দের গুণমানের পার্থক্য) কমানো সম্ভব নয়। আসলে গ্রাসরুট থেকে ফুটবলারকে সেভাবে তৈরি করতে হয়। আমাদের তো গ্রাসরুট পর্যায়ে সেই মানের ফুডিং, অনুশীলন, পরিচর্যা—এসব হয় না।’

আরও পড়ুন

ম্যাচের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত এক রকম পারফর্ম করতে না পারাও বাংলাদেশ দলের ফুটবলারদের আরেক দুর্বলতা। সেখানে হামজা হতে পারে নতুনদের জন্য প্রেরণা। তাঁর খেলার ধরন, পেশাদারি বা মাঠে প্রাণপণে লড়াইয়ের মনোভাবকে দেশের ফুটবলের জন্য ইতিবাচক দেখছেন আমিনুল, ‘সে প্রথম থেকেই ম্যাচটা আগলে রেখেছে। তার যে শক্তি-দক্ষতা, সেটা দেখে বোঝাই যায়, আমাদের খেলোয়াড়দের সঙ্গে পার্থক্যটা কোথায়। তার থেকে আমাদের অনেক কিছু শেখার আছে।’

বাংলাদেশ জাতীয় দলের হয়ে কালই অভিষেক হলো হামজার
হামজার ফেসবুক পেজ

আরেক সাবেক ফুটবলার শেখ মোহাম্মদ আসলাম বললেন, ‘হামজা থাকলে আমাদের রক্ষণ নিয়ে আর চিন্তা করতে হবে না।’ এদিকে মোহামেডান মাতানো একসময়কার তারকা গোলকিপার ছাইদ হাসান কাননও হামজার এমন মাস্টারক্লাস পারফরম্যান্সে খুশি, ‘প্রথম দিকে তার মানিয়ে নিতে কিছুক্ষণ সময় লেগেছিল। এরপর তো দেখলাম মাঠে খেলোয়াড় একজনই, সেটা হামজা!’