মেসি–নেইমার নেই ব্রাজিল–আর্জেন্টিনা ম্যাচে, নায়ক হবেন কে
২০ বছর পর লিওনেল মেসি ও নেইমারের কোনো একজনকে ছাড়া মুখোমুখি হতে যাচ্ছে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা। দুই দলের দুই সেরা তারকা না থাকলেও এই ম্যাচ নিয়ে আগ্রহের একটুও কমতি নেই। এর মধ্যে রাফিনিয়ার আর্জেন্টিনাকে গোল করে হারানোর ঘোষণা পরিস্থিতিকে আরও জমজমাট করে তুলেছে।
আলোচনা চলছে মেসি-নেইমারের অনুপস্থিতিতে এই ম্যাচে কে নায়ক হতে পারেন, সেটা নিয়েও। সম্ভাব্য নায়কদের মধ্যে ব্রাজিলের হয়ে আলোচনায় আছেন ভিনিসিয়ুস, রাফিনিয়া ও ওয়েসলি। আর আর্জেন্টিনার হয়ে এই ম্যাচে নায়ক হয়ে উঠতে পারেন থিয়াগো আলমাদা, হুলিয়ান আলভারেজ ও এমিলিয়ানো মার্তিনেজদের কেউ একজন।
ভিনিসিয়ুস জুনিয়র
এই মুহূর্তে বিশ্বসেরা ফুটবলারদের একজন ভিনিসিয়ুস। রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে দারুণ ছন্দে থাকা এই ফরোয়ার্ড জিতেছেন ফিফা বর্ষসেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কারও। চলতি মৌসুমেও ভিনি আছেন দারুণ ছন্দে। ৩৯ ম্যাচে ১৮ গোলের সঙ্গে আছে ১১ অ্যাসিস্ট। তবে রিয়ালের হয়ে ভিনিসিয়ুস যতটা উজ্জ্বল, ব্রাজিলের হয়ে ততটাই নিষ্প্রভ।
সর্বশেষ ম্যাচে অবশ্য তাঁর গোলেই কলম্বিয়াকে হারিয়েছিল ব্রাজিল। কিন্তু ব্রাজিলের জার্সিতে সেরা ছন্দে তাঁকে পাওয়া গেছে সামান্যই। তবে দায়মোচনের সুযোগ এখন ভিনির সামনে। আর্জেন্টিনার বিপক্ষে নায়ক আবির্ভূত হতে পারলে মুছে যাবে অতীতের সব ব্যর্থতা। এখন ভিনি শেষ পর্যন্ত নায়ক হতে পারেন কি না, সেটাই দেখার অপেক্ষা
রাফিনিয়া
নিজের ক্যারিয়ারের সেরা ছন্দে আছেন রাফিনিয়া। বার্সেলোনার জার্সিতে চলতি মৌসুমে অসাধারণ নৈপুণ্য দেখিয়েছেন এই ফরোয়ার্ড। ৪২ ম্যাচে ২৭ গোলের সঙ্গে আছে ২০ অ্যাসিস্টও। ব্যালন ডি’অরের তালিকাতেও শোনা যাচ্ছে তাঁর নাম। তবে আর্জেন্টিনার বিপক্ষে আগামীকালের ম্যাচটি রাফিনিয়ার জন্য অন্য রকম এক চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এই ম্যাচে গোল করে আর্জেন্টিনাকে হারানোর আগাম বার্তা দিয়ে সব আলো নিজের দিকে টেনে নিয়েছেন তিনি, যা নিশ্চিতভাবে বাড়তি চাপেরও। এখন চাপ উতরে গোল করে দলকে শেষ পর্যন্ত জেতাতে পারলে সেটি বিশেষ কিছুই হয়ে থাকবে।
ওয়েসলি
কলম্বিয়ার বিপক্ষে আগের ম্যাচে রাইটব্যাক পজিশনে বেশ ধুঁকছিল ব্রাজিল। সেদিন ভেন্ডারসন বেশির ভাগ সময় ছিলেন নিষ্প্রভ। ৭৯ মিনিটে তাঁর বদলে মাঠে নামানো হয় ২১ বছর বয়সী অভিষিক্ত ফুটবলার ওয়েসলি ফ্রাঙ্কাকে। অল্প সময়ের জন্য মাঠে নেমেই ব্রাজিলের খেলায় গতি এনে দেন ফ্ল্যামেঙ্গোর এই তরুণ রাইটব্যাক।
পাসিংয়ে দক্ষতা দেখানোর পাশাপাশি তৈরি করেছেন একাধিক সুযোগও। সেই পারফরম্যান্সেই এবার আর্জেন্টিনার বিপক্ষে একাদশে সুযোগ করে দিতে যাচ্ছে তাঁকে। এখন সুযোগ কাজে লাগিয়ে ওয়েসলি যদি নিজের কাজটা ঠিকঠাক করতে পারেন, তবে নায়ক হয়ে উঠতে পারেনি তিনিও।
থিয়াগো আলমাদা
আর্জেন্টিনার হয়ে বিশ্বকাপ জিতলেও থিয়াগো আলমাদা সেভাবে আলোচিত নন। মেসি, লাওতারো মার্তিনেজ ও হুলিয়ান আলভারেজদের কারণে জাতীয় দলে সেভাবে সুযোগও পাননি। এরপরও যখনই নেমেছেন, চেষ্টা করেছেন নিজেকে প্রমাণের। সর্বশেষ উরুগুয়ের বিপক্ষে মেসি-মার্তিনেজের অনুপস্থিতিতে সুযোগ পেয়ে আর্জেন্টিনাকে ম্যাচ জিতিয়েছেন তিনি। এখন ব্রাজিলের মতো শক্তিশালী দলের বিপক্ষে নায়ক হওয়ার সুযোগ আলমাদার সামনে। সেটি হতে পারলে জাতীয় দলে সামনের রাস্তাটাও অনেক মসৃণ হয়ে যাবে তাঁর জন্য।
হুলিয়ান আলভারেজ
মেসি-মার্তিনেজের অনুপস্থিতিতে আর্জেন্টিনার আক্রমণভাগের কান্ডারি এখন আলভারেজ। আতলেতিকো মাদ্রিদের হয়ে দারুণ ছন্দে আছেন এই স্ট্রাইকার। ব্রাজিলের বিপক্ষে তাঁর জ্বলে ওঠার ওপর নির্ভর করছে অনেক কিছু। আলভারজের জন্য অবশ্য ম্যাচের মোড় ঘোরাতে একটি মুহূর্তই যথেষ্ট। আগামীকাল সেই মুহূর্তটি পেলে সুপার ক্ল্যাসিকোর নায়ক হিসেবে আবির্ভূত হতে পারেন আলভারেজও।
এমিলিয়ানো মার্তিনেজ
দুই দলের মিডফিল্ড ও আক্রমণভাগের সেরা সব তারকার ভিড়ে নায়ক হতে পারেন একজন গোলরক্ষক। হ্যাঁ, এমিলিয়ানো মার্তিনেজের কথাই বলা হচ্ছে। জাতীয় দলের জার্সিতে মার্তিনেজকে নতুন করে চেনানোর কিছু নেই। কাতার বিশ্বকাপের সেরা গোলরক্ষক এখনো ইস্পাত দৃঢ় হয়ে আগলে যাচ্ছেন আর্জেন্টিনার গোলপোস্ট। ব্রাজিলের পরাক্রমশালী আক্রমণভাগের সামনেও কাল আরেকবার দেয়াল হয়ে দাঁড়ানোর চ্যালেঞ্জ মার্তিনেজের সামনে। এই চ্যালেঞ্জ জিতে নায়ক হয়ে মাঠ ছাড়তে পারেন মার্তিনেজও।