জাতীয় দলের খেলা এড়াতে ফুটবলাররা কি চোটের অভিনয় করছেন
অদ্ভুত এক সংকটকাল পার করছে ইউরোপিয়ান ফুটবল। প্রতিপক্ষের কৌশল এবং নিজেদের পাল্টা রণকৌশলের চেয়ে ক্লাবগুলোকে এখন বেশি ভাবতে হচ্ছে চোট নিয়ে। টানা ম্যাচ খেলার চাপে চোট ও ক্লান্তি ফুটবলারদের রীতমতো ধসিয়ে দিচ্ছে।
বিশেষত চলতি মৌসুমের শুরু থেকেই চোট সমস্যা প্রকট হতে শুরু করে, যা এখন ‘মহামারি’ আকার ধারণ করেছে। এরই মধ্যে অনেক তারকা ফুটবলার লম্বা সময়ের জন্য মাঠের বাইরে ছিটকে গেছেন। যে তালিকায় রদ্রি, মিলিতাও ও আন্দ্রে টের-স্টেগেনের মতো বেশ কিছু বড় নামও আছে।
ফুটবলারদের চোটে পড়ার ক্ষেত্রে বড় কারণগুলোর একটি ভাবা হয় আন্তর্জাতিক বিরতিতে জাতীয় দলের ম্যাচগুলোকে। সমন্বয়ের অভাব এবং অনভ্যাসের কারণে এই ম্যাচগুলো অনেক সময় বড় ধরনের চোটের কারণ হয়।
এ কারণেই আন্তজার্তিক বিরতির সময় কোচরা খেলোয়াড়দের নিয়ে বেশ দুশ্চিন্তায় থাকেন। কদিন আগেই যেমন আর্সেনাল কোচ মিকেল আরতেতা অসহায় কণ্ঠে বলেন, ‘আমি যেটা প্রার্থনা করছি, সেটা হলো আন্তর্জাতিক বিরতির পর আমরা যেন পুরোপুরিভাবে শারীরিকভাবে সক্ষম দলটিকে ফিরে পাই।’
অবশ্য আন্তর্জাতিক বিরতি শুরুর আগেই এবার চোট সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে। অনেক ফুটবলারই চোটে পড়েছেন বিরতি শুরুর আগমুহূর্তে। লুকাস ভাসকেজ, মিলিতাও, রদ্রি রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে একই দিনে চোটে পড়েন।
একইভাবে বার্সেলোনার হয়ে চোটে পড়েছেন লামিনে ইয়ামাল ও রবার্ট লেভানডফস্কি। তাঁদের মধ্যে ইয়ামাল ২-৩ সপ্তাহের জন্য এবং লেভা ছিটকে গেছেন ১০ দিনের জন্য। তবে সাম্প্রতিক সময়ে যাঁরা চোটে পড়েছেন, তাঁদের মধ্যে আলাদাভাবে বলা যায় ইয়ামালের কথা।
রিয়াল সোসিয়েদারের বিপক্ষে বার্সেলোনার হারা ম্যাচে স্কোয়াডেই ছিলেন না তিনি। চোটের পর বার্সেলোনা নাকি ইয়ামালকে আন্তার্জাতিক বিরতিতে জাতীয় দলের হয়ে না খেলার অনুরোধ জানায়। পরে সেই ধারাবাহিকতায় স্পেন দল থেকে সরিয়ে নেওয়া হয় এই স্প্যানিশ উইঙ্গারকে। এর আগেও আন্তজার্তিক বিরতির মাঝপথেই জাতীয় দল ছাড়ার ইতিহাস আছে ইয়ামালের।
জাতীয় দলের খেলার আগে ফুটবলারদের এমন চোটে পড়াকে সন্দেহের চোখে দেখছেন অনেকে। সামাজিক যোগাযোগামাধ্যমে কেউ কেউ সরাসরি বিষয়টি নিয়ে কথাও বলেছেন। লেভার চোটের খবরের নিচে একজন লিখেছেন, ‘জাতীয় দলের খেলা এড়াতে এটাকে বিশ্রাম বলা উচিত, চোট নয়।’
আরেকজন লিখেছেন, ‘বার্সেলোনা তাদের খেলোয়াড়দের আন্তর্জাতিক ম্যাচ থেকে বাঁচানোর চেষ্টা করছে। আমরা এটা বুঝি, আমাদের বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করা উচিত নয়।’
এর আগে গত সেপ্টেম্বরে আন্তজার্তিক বিরতির আগমুহূর্তে প্রিমিয়ার লিগের ফুটবলারদের চোটের কারণ দেখিয়ে সরে যাওয়াকে ‘ষড়যন্ত্র’ বলে উল্লেখ করেছিল ক্রীড়া সংবাদমাধ্যম দ্য অ্যাথলেটিক। এবার সরাসরি না বললেও পরোক্ষভাবে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন ইংল্যান্ড অধিনায়ক হ্যারি কেইন।
ছোটখাটো চোটে ফুটবলারদের জাতীয় দল থেকে সরে যাওয়া নিয়ে বিরক্তি আড়াল করেননি এই স্ট্রাইকার। এরই মধ্যে ম্যানচেস্টার সিটির জ্যাক গ্রিলিশ ও ফিল ফোডেন, আর্সেনালের বুকায়ো সাকা ও ডেকলান রাইস, চেলসির কোল পালমার ও লেভি কোলউইল, লিভারপুলের ট্রেন্ট আলেক্সান্দার আরনল্ড, সাউদাম্পটনের অ্যারন রামসডেল এবং এভারটনের জারাড ব্র্যানথওয়েট নিজেদের জাতীয় দল থেকে সরিয়ে নিয়েছেন।
ফুটবলারদের এভাবে জাতীয় দল থেকে সরে দাঁড়ানো নিয়ে কেইন বলেছেন, ‘আমার মনে হয় মৌসুমের এই সময়টা বেশ কঠিন। সম্ভবত এর কিছুটা সুবিধাও নেওয়া হচ্ছে। কেউ যদি সৎ হন, তবে এমন কিছু করাকে পছন্দ করবে না। আমার ধারণা (খেলোয়াড়দের জন্য) ইংল্যান্ডের অবস্থান যেকোনো কিছুর ঊর্ধ্বে, ক্লাবেরও আগে।’