স্পেন ও ইতালির সুপার কাপ কেন সৌদি আরবে
বুধবার রাতে বার্সেলোনা–অ্যাথলেটিক বিলবাও ম্যাচ দিয়ে শুরু হয়েছে স্প্যানিশ সুপার কাপ। ভেন্যু ছিল সৌদি আরবের জেদ্দায় অবস্থিত কিং আবদুল্লাহ স্পোর্টস সিটি মাঠ। আজ টুর্নামেন্টের রিয়াল মাদ্রিদ–মায়োর্কা ম্যাচ এবং ১২ জানুয়ারির শিরোপা নির্ধারণী ফাইনালও হবে একই ভেন্যুতে।
এবারই প্রথম নয়, সর্বশেষ পাঁচ আসরের মধ্যে চারবারই স্পেনের ফুটবল টুর্নামেন্টটি অনুষ্ঠিত হয়েছে সৌদি আরবে। কখনো রাজধানী রিয়াদের কিং ফাহাদ ইন্টারন্যাশনাল স্টেডিয়ামে, কখনো জেদ্দার কিং আবদুল্লাহ স্পোর্টস সিটি মাঠে।
অনেকের কৌতূহল, টুর্নামেন্ট স্পেনের হলেও এটি সৌদি আরবে কেন হয়? একইভাবে ইতালিয়ান সুপার কাপও কেন সৌদি আয়োজন করে? ইউরোপ থেকে উড়ে এসে রিয়াল মাদ্রিদ, বার্সেলোনা, জুভেন্টাস, ইন্টার মিলানের দল কেন মধ্যপ্রাচ্যে এসে টুর্নামেন্ট খেলে?
১৯৮২ সালে চালু হওয়া স্প্যানিশ সুপার কাপ দীর্ঘদিন ধরে ছিল দুই দলের টুর্নামেন্ট। খেলত আগের বছরের লা লিগা ও কোপা দে রের চ্যাম্পিয়ন। ১৯৯৫ সালের আগপর্যন্ত একই ক্লাব দুটি প্রতিযোগিতায়ই চ্যাম্পিয়ন হলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ট্রফি দিয়ে দেওয়া হতো। পরে নিয়ম করা হয় লা লিগা ও কোপা দেল রের চ্যাম্পিয়ন একই দল হলে কোপার রানার্সআপ দল সুযোগ পাবে। শুরু থেকে ২০১৭ পর্যন্ত সব দুই লেগের ফাইনাল হয়েছিল স্পেনের মাটিতে।
২০১৮ সালে প্রথমবার স্পেনের বাইরে সুপার কাপ আয়োজন করা হয়। সেবার বার্সেলোনা–সেভিয়ার এক লেগের ফাইনাল অনুষ্ঠিত হয় স্পেনের পার্শ্ববর্তী দেশ মরক্কোর ইবনে বতুতা স্টেডিয়ামে। তবে এক বছর বিরতি দিয়ে ২০২০ সাল থেকে স্প্যানিশ সুপার কাপ হয়ে পড়ে সৌদি আরব–কেন্দ্রিক। মাঝে ২০২১ আসর বাদে সর্বশেষ ছয় আসরেরই আয়োজক সৌদি আরব।
ইউরোপের বড় দলগুলোর প্রাক্–মৌসুম পর্বে এশিয়াসহ বিভিন্ন দেশে ম্যাচ খেলতে যাওয়া নতুন নয়। কিন্তু একাধিক ম্যাচের টুর্নামেন্টই সরিয়ে ফেলাটা বিশেষ ঘটনা। স্প্যানিশ সুপার কাপ সৌদি আরবে চলে যাওয়ার পর টুর্নামেন্টটির অংশগ্রহণকারী দুই থেকে বেড়ে চারে পরিণত হয়।
লা লিগা ও কোপা দেল রের আগের মৌসুমের চ্যাম্পিয়ন ও রানার্সআপরা এতে অংশ নেয়। এবার যেমন রিয়াল মাদ্রিদ ও বার্সেলোনা খেলছে ২০২৩–২৪ লা লিগার চ্যাম্পিয়ন ও রানার্সআপ হিসেবে, আর বিলবাও ও মায়োর্কা কোপা দেল রের গতবারের ফাইনালিস্ট হিসেবে।
এভাবে প্রতিবছর স্পেনের চারটি করে দল সৌদি আরবে সুপার কাপ খেলতে যাচ্ছে একটি চুক্তির আওতায়। স্প্যানিশ দৈনিক এএসের খবরে বলা হয়, ২০১৯ সালে রয়্যাল স্প্যানিশ ফুটবল ফেডারেশন (আরএফইএফ) ও সৌদি সরকারের মধ্যে একটি চুক্তি সই হয়, যা ২০২১ সালে আরও ১০ বছরের জন্য নবায়িত হয়। এই চুক্তির আওতায় প্রতিবছর স্প্যানিশ সুপার কাপ আয়োজিত হবে সৌদি আরবের মাটিতে।
এ ক্ষেত্রে সৌদি আরবের লাভ বৈশ্বিকভাবে প্রচার পাওয়া। মোহাম্মদ বিন সালমানের নেতৃত্বাধীন সৌদি আরব সরকার বৈশ্বিক অঙ্গনে নিজেদের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করতে যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে, তার একটি ক্রীড়া খাতে বিনিয়োগ। ফুটবল, গলফ, বক্সিং, ফর্মুলা ওয়ানসহ বিভিন্ন খেলায় বিভিন্নভাবে যুক্ত হয়েছে সৌদি আরব। ফুটবলের প্রতি বিশেষ মনোযোগ দেওয়ার অন্যতম কারণ এর বৈশ্বিক প্রসার বেশি, ২০৩৪ বিশ্বকাপ আয়োজনে সুফলও পাওয়া যাবে। সমালোচকেরা সৌদি সরকারের এ ধরনের উদ্যোগকে ‘স্পোর্টসওয়াশিং’ বলে থাকেন।
মোটের ওপর, সৌদি আরব নিজেদের স্বার্থেই স্প্যানিশ সুপার কাপ আয়োজন করে। বিনিময়ে স্প্যানিশ ফুটবল কর্তৃপক্ষকে দেওয়া হয় মোটা অঙ্কের অর্থ। এএসের খবর অনুসারে, ২০১৯ সালের চুক্তি ছিল ১২ কোটি মার্কিন ডলারের। চুক্তি নবায়নের পর এখন প্রতিবছর আরএফইএফ সৌদি আরব থেকে পায় ৪ কোটি ১৩.৫০ লাখ মার্কিন ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ ৫০২ কোটি টাকার বেশি।
শুধু স্প্যানিশ সুপার কাপই নয়, সৌদি আরব এখন নিয়মিত ইতালিয়ান সুপার কাপও আয়োজন করে। ২০১৮ থেকে এখন পর্যন্ত হওয়া সাত আসরের পাঁচটিই হয়েছে সৌদি আরবের রিয়াদ বা জেদ্দায়। স্প্যানিশ সুপার কাপের মতো ইতালিয়ান সুপার কাপও সৌদি আরবে আয়োজন শুরুর পর দুই দল বাড়িয়ে চার দলের টুর্নামেন্টে পরিণত হয়েছে। সেখানেও যে অর্থযোগ আছে, তা তো সহজেই অনুমেয়।