হামজা চৌধুরীকেই দক্ষিণ এশিয়ার সেরা বললেন জামাল ভূঁইয়া
হামজা চৌধুরী যেদিন থেকে বাংলাদেশের হয়ে খেলতে ফিফার ছাড়পত্র পেয়েছেন, সেদিন থেকেই বাংলাদেশ দল–সংক্রান্ত যেকোনো আলোচনায় চলে আসে তাঁর নাম। আজ ভারত ম্যাচের প্রস্তুতি শুরুর দিনে বাংলাদেশের অনুশীলনে না থেকেও যেন ছিলেন ইংল্যান্ডের দ্বিতীয় স্তরের দল শেফিল্ড ইউনাইটেডের এই ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার। সাংবাদিকদের প্রশ্নের কেন্দ্রে হামজাই।
তেমনই এক প্রশ্নে অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়া বলেন, ‘হামজা এই গ্রুপের (বাংলাদেশের গ্রুপে) সেরা খেলোয়াড়। দক্ষিণ এশিয়ারই সেরা খেলোয়াড় সে। হামজা দলের জন্য অনেক বড় প্রেরণা।’ জামালের কথার সঙ্গে দ্বিমত করার আসলে কিছু নেই। দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে হাই প্রোফাইল ফুটবলার বাংলাদেশের হামজাই।
সেই হামজাকে নিয়ে ২৫ মার্চ এশিয়ান কাপের বাছাইয়ে প্রথম ম্যাচটা জিততে চায় বাংলাদেশ। কিন্তু ভারতের মাঠে ভারতকে হারিয়ে আসা সহজ নয়। ২০১৯ সালে বিশ্বকাপ বাছাইয়ে কলকাতার সল্টলেকে আগে গোল করে শেষ পর্যন্ত ড্র করেছিল বাংলাদেশ। এবার কী আশা? ‘ভালো ফল আশা করি। ভারতের খেলোয়াড়দের সঙ্গে আমাদের তুলনা করলে আমি মনে করি বিশাল কোনো পার্থক্য নেই। অবশ্যই ৩ পয়েন্ট নিতে চাই’—ভারত ম্যাচের প্রস্তুতি শুরুর দিনে আত্মবিশ্বাসী জামাল।
প্রস্তুতির মাঝপথে ইতালিপ্রবাসী ফাহামেদুল এসে যোগ দেবেন সৌদি আরবের ক্যাম্পে। জামালকে দিয়ে প্রবাসী ফুটবলার জাতীয় দলে ডাকার যে ধারা শুরু হয়েছে, তার সর্বশেষ নাম ইতালির চতুর্থ ডিভিশনে খেলা ফাহামেদুল।
এই ফাহামেদুলকে নিয়ে জামাল বলছেন, ‘আমি তাকে চিনি না। তাকে কোচ পছন্দ করেছেন। আমার ধারণা সে ভালো খেলোয়াড়।’ এরপর যোগ করেন, ‘সারা পৃথিবীতে অনেক বাংলাদেশি ফুটবলার আছে। তারা সবাই জাতীয় দলের হয়ে খেলতে চায়। আমাকে দিয়ে শুরু। এটা ইতিবাচক দিক। আমি চাই আরও আসুক।’ কেন চান সেটাও বলেন, ‘ফ্রান্স টিম সব বিদেশি নিয়েই বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে গেছে।’
কিন্তু জামালকে নিয়েই তো প্রশ্ন। এবারের প্রিমিয়ার লিগে প্রথম পর্বে কোনো দল পাননি। দ্বিতীয় পর্বে ফিরেছেন ব্রাদার্সের জার্সিতে। কিন্তু খেলার মধ্যে না থাকার পরও জামালকে দলে নেওয়ায় সমালোচনা আছে কোচ হাভিয়ের কাবরেরার বিরুদ্ধে। তবে কোচ আজ অনুশীলন শুরুর আগে জামালের হয়েই ব্যাট ধরেছেন, ‘লিগের দ্বিতীয় পর্বে ফিরেছে সে। এটা দেখে ভালো লেগেছে। আমার মনে হয় সে ঠিক আছে। সে অন্যদের প্রেরণা। বিশেষ করে তরুণদের জন্য।’
বাফুফের সঙ্গে নতুন চুক্তির পর ভারত ম্যাচ দিয়ে নতুন শুরু করবেন কাবরেরা। ‘অনেক আশা নিয়ে শুরু করছি’ জানিয়ে বাংলাদেশের স্প্যানিশ কোচ ভারত ম্যাচ নিয়ে আশার গানই গেয়েছেন। স্ট্রাইকার সংকটের মধ্যে নবাগত স্ট্রাইকার বাংলাদেশ পুলিশের আল-আমিনকে নিয়ে প্রকাশ করেন উচ্ছ্বাস। আর বলেছেন, ‘ভারত ম্যাচ আমাদের জন্য বিশেষ এক ম্যাচ। আমরা শারীরিক ও মানসিকভাবে উজ্জীবিত। ম্যাচটার জন্য উদ্গ্রীব হয়ে আছি। আমাদের কিছু অর্জনের খুব ভালো সম্ভাবনা আছে। আমরা খুবই আশাবাদী।’
সেই সম্ভাবনার দুয়ারে দাঁড়িয়ে লাল রঙের নতুন জার্সি পরে শুরু করলেন ফুটবলাররা। ফুটবলারদের বেশ উজ্জীবিত লাগল। আজই টিম মিটিংয়ে ফুটবলারদের করণীয় কী, তা জানিয়ে দিয়েছেন কোচ। আর সেটা সাংবাদিকদের কাছে বললেন ডিফেন্ডার রহমত মিয়া, ‘টিম মিটিংয়ে জানানো হয়েছে, আসলে আমাদের লক্ষ্য কী। যে পর্যায়ে খেলছি আমরা এখন, তার চেয়ে ওপরের দলের সঙ্গে উন্নতি করতে ফিটনেস আরও ভালো করতে হবে। ভারতের বিপক্ষে কীভাবে খেলব কোচ সে নিয়ে দিকনির্দেশনা দেবেন সামনে।’
শিলংয়ের প্রস্তুতি সৌদি আরবে কেন? কতটা ফলপ্রসূ হতে পারে তা? প্রশ্ন করলে রহমত যুক্তি দেন, ‘শিলংয়ে কখনো যাইনি আমি। সৌদির আবহ আর আমাদের আবহ প্রায় একই রকম। সৌদিতে ক্যাম্প করার কারণ আমার মনে হয় সবাই ফোকাসড থাকবে। দেশে পরিবারের একটা ব্যাপার থাকে। একটা আলাদা অবস্থায় থেকে সবার সঙ্গে দলীয় বন্ধন তৈরি করা...আমার মনে হয় এটা ভালো হবে।’
২০১৯ সালে সল্টলেকে ভারতের সঙ্গে সেই ম্যাচের প্রসঙ্গও টানেন রহমত, ‘ভারতের সঙ্গে সেই ম্যাচ ড্র হয়। ভারত র্যাঙ্কিংয়ে এগিয়ে। ওদের সঙ্গে আমাদের আলাদা স্পিড থাকে। ওদের বিরুদ্ধে ভালো খেলতে হবে।’
মুখে নয়, শিলংয়ের মাঠেই তা দেখাতে হবে রহমতদের।