রেকর্ড ছোঁয়ার ম্যাচে ৯২ বছর আগের কীর্তিও ফেরালেন হলান্ড
ক্রাভেন কটেজের গ্যালারিতে দর্শক ধাতস্থ হয়ে বসতে না বসতেই আর্লিং হলান্ডের গোল!
ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে হলান্ডের গোল করা এই মৌসুমে খুব পরিচিত দৃশ্যগুলোর একটি। তবে ফুলহামের মাঠে সেই দৃশ্যেরই পুনরাবৃত্তি ঘটল একটু আগেভাগেই, ম্যাচের ৩ মিনিটে। পার্থক্যটা হলো, যে চিরাচরিত দৃশ্যে হলান্ডকে দেখা যায়—প্রতিপক্ষের বক্সে দাপুটে ফুটবল খেলে গোল আদায় করে নেওয়া, গোলটা সেভাবে করেননি নরওয়েজীয় এই তারকা।
২ মিনিটে ফুলহামের সেন্টারব্যাক টিম রিয়াম বক্সের মধ্যে ম্যানচেস্টার সিটি স্ট্রাইকার হুলিয়ান আলভারেজকে ফেলে দেওয়ায় পেনাল্টি পায় পেপ গার্দিওলার দল। স্পটকিক থেকে বাঁ পায়ের শটে হলান্ডের গোলটি কিন্তু রেকর্ডছোঁয়া—অনেকেই হয়তো বলতে পারেন এ আর নতুন কী! এই মৌসুমে সিটি তারকা মাঠে নামলেই তো রেকর্ড হচ্ছে! আজকের গোলে অবশ্য একক কোনো রেকর্ড গড়েননি হলান্ড। কোলে ও শিয়ারারের রেকর্ড ছুঁয়েছেন।
ম্যানচেস্টারের আরেক দল ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড মাঠে নেমে অ্যাস্টন ভিলাকে ১-০ গোলে হারিয়েছে। গোলটি ব্রুনো ফার্নান্দেজের।
ফুলহামের বিপক্ষে সিটির ২-১ ব্যবধানে জয়ের ম্যাচে সেরা গোলটি কিন্তু হলান্ডের নয়। রিয়াদ মাহরেজের পাস থেকে ৩৬ মিনিটে ফুলহাম বক্সের বাইরে এক ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে একটু ফাঁকা জায়গা পেয়েছিলেন আর্জেন্টাইন এ স্ট্রাইকার। ডান পায়ের চোখ ধাঁধানো শটে বল জড়িয়েছেন জালে। বলটা বাতাসে ভাসতে ভাসতে ফুলহাম গোলকিপার বার্নড লেনোকে ডান দিকে ঝাঁপিয়ে ঠেকাতে প্রলুব্ধ করেছিল, লেনো ডাইভও দিয়েছিলেন কিন্তু মাপা শট ছিল। অসাধারণ একটি গোল করে আলভারেজের আনন্দ দেখে কে!
তবে সিটি কিন্তু প্রথমার্ধে আনন্দ নিয়ে মাঠ ছাড়তে পারেনি। ম্যাচের ৩ মিনিটে এগিয়ে যাওয়ার পর ১২ মিনিট লিড ধরে রাখতে পেরেছিল গার্দিওলার দল। টিম রিয়ামের দূরপাল্লার পাস পেয়ে ফুলহামের ফরোয়ার্ড কার্লোস ভিনিসিয়ুসকে বল বাড়ান উইলসন। রিয়াল মাদ্রিদের উইঙ্গার ভিনিসিয়ুসের মতো ফুলহামের এই ভিনিসিয়ুসও ব্রাজিলিয়ান, দুর্দান্ত ভলিতে ফিনিশ করতে তাঁর ভুল হয়নি। এমন দুটি দুর্দান্ত গোলের পরও কিন্তু হলান্ডের করা গোলটি নিয়ে বেশি আলোচনা হতে পারে।
কারণ ওই যে রেকর্ড—ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের এ মৌসুমে এটি হলান্ডের ৩৪তম গোল। এর মধ্য দিয়ে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ যুগে এক মৌসুমে অ্যালান শিয়ারার ও অ্যান্ড্রু কোলের সর্বোচ্চ গোলের রেকর্ড ছুঁলেন হলান্ড। ১৯৯৩-৯৪ মৌসুমে নিউক্যাসল ইউনাইটেডের হয়ে ৩৪ গোল করেছিলেন কোল। পরের মৌসুমেই রেকর্ডটি ছুঁয়ে ফেলেন সে সময়ে ব্ল্যাকবার্ন রোভার্সে খেলা ইংলিশ কিংবদন্তি শিয়ারার। তবে এ দুটি মৌসুমই ছিল ৪২ ম্যাচের। আর হলান্ড এখন প্রিমিয়ার লিগে খেলছেন ৩৮ ম্যাচের মৌসুমে।
এ হিসেব অনুযায়ী ৩৮ ম্যাচের মৌসুমে প্রিমিয়ার লিগে সর্বোচ্চ গোলের রেকর্ড আর্সেনালের বিপক্ষে ম্যাচেই ভেঙেছেন হলান্ড। সে ম্যাচে একটি গোল করে লিগে নিজের গোলসংখ্যা ৩৩-এ উন্নীত করে মোহাম্মদ সালাহর কীর্তিকে পেছনে ফেলেন হলান্ড। ২০১৭-১৮ মৌসুমে লিভারপুলের হয়ে অভিষেক মৌসুমেই ৩২ গোল করে প্রিমিয়ার লিগে ৩৮ ম্যাচের মৌসুমে সর্বোচ্চ গোলের রেকর্ডটি গড়েছিলেন সালাহ। সেটি আগের ম্যাচেই নিজের দখলে নেওয়ার পর আজ কোল ও শিয়ারারকেও ছুঁয়ে ফেললেন সিটি তারকা।
হলান্ডের আজকের গোলে কীর্তি রচিত হয়েছে আরও। এই মৌসুমে সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে হলান্ডের মোট গোলসংখ্যা দাঁড়াল ৫০। ইংল্যান্ডের শীর্ষ লিগের খেলোয়াড় হিসেবে এক মৌসুমে ৫০ গোলের নজির সর্বশেষ নজির এর আগে দেখা গিয়েছিল ১৯৩০-৩১ মৌসুমে। অ্যাস্টন ভিলার কিংবদন্তি টম ওয়ারিং লিগে করেছিলেন ৪৯ গোল এবং সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে করেছিলেন ৫০ গোল। তবে ইংল্যান্ডের শীর্ষ লিগের খেলোয়াড় হিসেবে সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে এক মৌসুমে সর্বোচ্চ গোলের রেকর্ড এভারটন কিংবদন্তি ডিক্সি ডিনের। ১৯২৭-২৮ মৌসুমে ৬৩ গোল করেছিলেন ডিক্সি ডিন।
ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ১-০ অ্যাস্টন ভিলা
ওল্ড ট্রাফোর্ডে পর্তুগিজ মিডফিল্ডার ব্রুনো ফার্নান্দেজের ১০০তম ক্যারিয়ার লিগ গোলে জয় তুলে নিয়েছে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। এ জয়ের মধ্য দিয়ে অ্যাস্টন ভিলার টানা ১০ ম্যাচ অপরাজিত থাকার ধারায় ছেদ ফেলে চ্যাম্পিয়নস লিগের আগামী মৌসুমে খেলার আশাও জিইয়ে রাখল এরিক টেন হাগের দল।
৩৯ মিনিটে ইউনাইটেড তারকা মার্কাস রাশফোর্ডের শট ভিলা গোলকিপার এমিলিয়ানো মার্তিনেজ রুখে দিলে ফিরতি শটে গোল করেন ফার্নান্দেজ। বিরতির পর বল পোস্টে মারেন ইউনাইটেডের ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার কাসেমিরো। বিবিসি জানিয়েছে ১৭৮ ম্যাচের ক্লাব ক্যারিয়ারে ১০০তম গোলের দেখা পেলেন ফার্নান্দেজ।
এই জয়ে ৩২ ম্যাচে ৬৩ পয়েন্ট নিয়ে প্রিমিয়ার লিগ টেবিলে চতুর্থস্থান ধরে রাখল ইউনাইটেড। তাদের চেয়ে এক ম্যাচ বেশি খেলে ২ পয়েন্ট ব্যবধানে এগিয়ে তৃতীয় নিউক্যাসল ইউনাইটেড। ৩৩ ম্যাচে ৭৫ পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় আর্সেনাল এবং ৩২ ম্যাচে ৭৬ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে ম্যানচেস্টার সিটি।