শিরোপা, গোল ও ‘সীমাহীন’ প্রত্যাশায় রিয়ালে এমবাপ্পে–যুগ শুরু

রিয়ালে অভিষেক ম্যাচেই গোল করে উদ্‌যাপন এমবাপ্পেররয়টার্স

রিয়াল মাদ্রিদের এমবাপ্পে-যুগ শুরু হলো।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে কেউ কেউ লিখেছেন, রিয়ালে অভিষেকের পর এমবাপ্পে যা-ই করুন, সেটাই ইতিহাস হবে। মানে ভালো খেললেও ইতিহাস, খারাপ খেললেও ইতিহাস। এ কথা সম্ভবত তাঁর রিয়ালে যোগ দেওয়ার দীর্ঘ প্রক্রিয়ার জন্য বলা হয়েছে। প্রায় পাঁচ বছর ধরে এই দলবদল নিয়ে গুঞ্জন চলেছে।

শেষ পর্যন্ত দুই পক্ষের ব্যাটে-বলে মিলেছে গত জুনে। পিএসজি থেকে এমবাপ্পেকে ফ্রি ট্রান্সফারে পেয়েছে রিয়াল। তার আগে এই দলবদল নিয়ে যে পরিমাণ আলোচনা হয়েছে, সেসব বিচারে বলা যায়, এমবাপ্পে রিয়ালে ভালো করতে না পারলেও তো সেটি অন্য রকম ইতিহাসই হবে। অনেকটাই ‘পর্বতের মূষিক প্রসবের’ মতো। কিন্তু সেই ফয়সালা করবে সময়। আপাতত রিয়ালে এমবাপ্পের শুরুটা হলো দুর্দান্ত।

আরও পড়ুন

উয়েফা সুপার কাপে গতকাল রাতে আতালান্তাকে ২-০ গোলে হারিয়ে শিরোপা জিতেছে রিয়াল। এই ম্যাচে রিয়ালের জার্সিতে অভিষেকেই গোল করেছেন এমবাপ্পে। ফুটবলের তথ্য-পরিসংখ্যানবিষয়ক এক্স হ্যান্ডল ‘মিস্টারচিপ’ জানিয়েছে, রিয়ালের ইতিহাসে দ্বিতীয় খেলোয়াড় হিসেবে ক্লাবটির হয়ে অভিষেক ম্যাচে গোল করার পাশাপাশি শিরোপা জিতলেন এমবাপ্পে। প্রথম এই কীর্তি মার্কো আসেনসিওর। সেটাও এই (২০১৬) উয়েফা সুপার কাপেই।

রিয়ালে অভিষেকেই শিরোপা জিতে এমবাপ্পে কতটা উচ্ছ্বসিত, সেটি তাঁর এক্সে করা পোস্টেই বোঝা যায়, ‘বিশ্বের সেরা ক্লাবের হয়ে প্রথম শিরোপা জয়। চলো আরও জিতি। আলা মাদ্রিদ।’

এনদ্রিকের অভিষেক না হলেও তাঁকে নিয়েই শিরোপা জয় উদ্‌যাপন করেন এমবাপ্পে
রয়টার্স

রিয়ালে শিরোপা জিতে মৌসুম শুরুর পর এমবাপ্পের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, মৌসুমে ৫০ গোল তাঁর জন্য বাস্তবসম্মত লক্ষ্য কি না? উত্তরে রিয়ালের বিশালতাই তুলে ধরেছেন এমবাপ্পে। বুঝিয়েছেন, এই ক্লাবে খেললে প্রত্যাশার কোনো সীমানা থাকে না, ‘আমরা রিয়াল মাদ্রিদের। আমাদের কোনো সীমা নেই। আমারও নেই।’ এরপর অবশ্য বলেছেন, ‘৫০ গোল করলে সেটাই। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হলো দল হিসেবে জেতা ও উন্নতি করা। কারণ, আমরা দল হিসেবে জিততে যাচ্ছি।’

আরও পড়ুন

এমবাপ্পে কোন পজিশনে খেলবেন রিয়ালে, তা নিয়ে অনেক আলোচনা হয়েছে এর আগে। কিন্তু খেলোয়াড় ব্যবস্থাপনায় বিশ্বের অন্যতম সেরা হিসেবে স্বীকৃত রিয়াল কোচ কার্লো আনচেলত্তি আগেই সমাধান বের করে রেখেছিলেন। ডান উইংয়ে রদ্রিগো ও বাঁ উইংয়ে ভিনিসিয়ুসকে রেখে ৯ নম্বর জার্সির এমবাপ্পেকে সেন্টার ফরোয়ার্ড হিসেবে খেলান আনচেলত্তি। তাতে একটু পেছনে খেলতে হয়েছে মিডফিল্ডার জুড বেলিংহামকে।

ভিনিসিয়ুস ভেতরে ঢুকলে কখনো কখনো বাঁ উইংয়েও চলে এসেছেন এমবাপ্পে। তাঁর হাসিমুখ দেখে আন্দাজ করে নেওয়া গেছে, রিয়ালে অভিষেকের মুহূর্তটা উপভোগ করছেন। জয়ের পর সেটাই বলেছেন এমবাপ্পে, ‘দারুণ এক রাত। এই জার্সি, এই ব্যাজ ও এই সমর্থকদের জন্য খেলতে দীর্ঘদিন আমি এই মহূর্তটির অপেক্ষায় ছিলাম।’

এমবাপ্পে রিয়ালে কতটা এবং কত দ্রুত মানিয়ে নিতে পারবেন, সে প্রশ্নও ছিল। বেলিংহামের কথা শুনলে মনে হবে, অভিষেক ম্যাচেই সে প্রশ্নের উত্তর মিলিয়ে ফেলেছেন এমবাপ্পে। ফ্রান্সের এই তারকা ফরোয়ার্ডের সতীর্থ হিসেবে খেলা নিয়ে ম্যাচ শেষে বেলিংহাম বলেছেন, ‘আগে ভেবেছিলাম এমবাপ্পে দুর্দান্ত। এখন তার সঙ্গে খেলার অভিজ্ঞতা হলো এবং তাকে আরেকটু ভালো করে দেখলাম; তার গতি, খেলার মান, বল ছাড়া মুভমেন্ট, নেতৃত্বগুণ এবং যেভাবে সে (সতীর্থের সঙ্গে) যোগাযোগ করে। লোকে অনেক দিন ধরেই এখানে (রিয়াল) তার আসার ব্যাপারে কথা বলছে। মনে হচ্ছে, সে অনেক দিন ধরেই এখানে আছে। এসেই মানিয়ে নিয়েছে।’

আনচেলত্তিও মনে করেন, মানিয়ে নেওয়ার পাশাপাশি অভিষেক ম্যাচে ভালো খেলেছেন এমবাপ্পে।

টিএনটি স্পোর্টসকে রিয়াল কোচ বলছেন, ‘এমবাপ্পে আসলেই ভালো করেছে। দলের সঙ্গে সে ভালোভাবে মানিয়ে নিয়েছে। ভিনিসিয়ুস জুনিয়র ও জুড বেলিংহামের সঙ্গে ভালো সমন্বয় করেছে। হ্যাঁ, অবশ্যই দলে আমাদের ভালো ভালো খেলোয়াড় আছে। কিন্তু আমাদের একসঙ্গে খেলতে হবে, যেটা আজ (গতকাল) রাতে আমরা পেরেছি।’