সুতোয় ঝুলছিল মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়া চক্রের ভাগ্য। শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ থেকে অবনমিত হয়ে গেল একসময় ঢাকা লিগের চ্যাম্পিয়ন দলটি। এই প্রথম দেশের শীর্ষ লিগ থেকে ছিটকে গেল লাল জার্সিধারীরা।
অবনমন এড়ানোর আশা বাঁচিয়ে রাখতে আজ মুক্তিযোদ্ধার পয়েন্ট দরকার ছিল চট্টগ্রাম আবাহনীর বিপক্ষে ম্যাচে। কিন্তু গোপালগঞ্জে হোম ম্যাচে মুক্তিযোদ্ধা ২-১ গোলে হেরেছে অবনমনের শঙ্কায় থাকা আরেক দল চট্টগ্রাম আবাহনীর কাছে। চট্টগ্রাম আবাহনী ৬৫ মিনিট ১০ জন নিয়ে খেলেও জিতেছে ম্যাচটা।
অন্যদিকে মুন্সিগঞ্জে আজ শেখ রাসেলের সঙ্গে গোলশূন্য ড্র করে অবনমন থেকে বেঁচে গেছে রহমতগঞ্জ। ফলে শেষ ম্যাচে জিতলেও অবনমন এড়ানোর লড়াইয়ে নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী চট্টগ্রাম আবাহনী ও রহমতগঞ্জকে আর পেছনে ফেলতে পারবে না মুক্তিযোদ্ধা।
২০ ম্যাচের লিগে ১৯ ম্যাচ শেষে মুক্তিযোদ্ধার পয়েন্ট ১৫। সমান ম্যাচে চট্টগ্রাম আবাহনীর ২১। ১৯ ম্যাচে রহমতগঞ্জের পয়েন্ট ১৯।
মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের অধীনে পরিচালিত ক্লাবটি অনেক দিন ধরেই আর্থিক সংকটে ধুঁকছিল। তারপরও কোনোমতে দলটা টিকে ছিল এত দিন। কিন্তু শেষ রক্ষা হলো না।
১৯৭৮ সালে প্রতিষ্ঠিত ক্লাবটি ঢাকার প্রথম বিভাগ ফুটবলে এসেছে আশির দশকের শুরুর দিকে। সেই থেকে দেশের শীর্ষ লিগেই খেলে এসেছে তারা বরাবর। ২০০৭ সালে পেশাদার যুগে প্রবেশের পর সব কটি লিগই খেলেছে মুক্তিযোদ্ধা। পেশাদার লিগ জিততে না পারলেও জিতেছে ঢাকা লিগ, ফেডারেশন কাপ। খেলেছে এএফসি কাপেও।
১৯৯৪ সালে আবাহনী-মোহামেডান ভেঙে বড় দল গড়েছিল লাল জার্সিধারীরা। তখন তারা পরাশক্তি। কিন্তু সেসবই আজ অতীত। মুক্তিযোদ্ধার বর্তমান শুধুই ধূসর।
মুক্তিযোদ্ধার সাবেক কোচ শফিকুল ইসলাম মানিক এতে ব্যথিত। প্রথম আলোকে বলেন, ‘যত দূর মনে পড়ছে, ১৯৮৪ সালে মুক্তিযোদ্ধা নাম লেখায় ঢাকার প্রথম বিভাগ লিগে। আমি ১২ বছর কোচ ছিলাম দলটির। ১৯৯৭ ও ২০০০ মুক্তিযোদ্ধা লিগ চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। কখনোই চাইনি মুক্তিযোদ্ধা নেমে যাক। কিন্তু নেমে গেল। এটা দুঃখজনক অবশ্যই। ব্যক্তিগতভাবে আমি ভীষণ কষ্ট পেয়েছি খবরটা জেনে।’
নিয়ম অনুযায়ী মুক্তিযোদ্ধার এখন চ্যাম্পিয়নশিপ লিগে খেলার কথা। কিন্তু পেশাদার লিগের দ্বিতীয় স্তরে মুক্তিযোদ্ধা খেলবে না বলে জানিয়েছেন দলটির ম্যানেজার আরিফুল ইসলাম। গোপালগঞ্জ থেকে প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধাকে আর ফুটবলেই দেখা যাবে না। আমরা চ্যাম্পিয়নশিপ লিগে খেলব না।’
মুক্তিযোদ্ধা কেন আর খেলবে না, আরিফুল দিয়েছেন সেই ব্যাখ্যাও। তিনি ক্ষুব্ধ রেফারিং নিয়ে। ষড়যন্ত্র করে মুক্তিযোদ্ধাকে বিদায় করা হয়েছে দাবি তাঁর, ‘এবার লিগে রেফারিং হয়েছে আমাদের বিরুদ্ধে। ষড়যন্ত্র করে আমাদের বিদায় করা হয়েছে। যারা রেফারিংয়ের দায়িত্বে আছে, তারাই আমাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেছে। তারা ঠিকঠাক বাঁশি বাজায়নি। শুধু আজকের ম্যাচে নয়, আগেও। বাফুফেকে আমরা এসব অভিযোগ জানিয়েছি। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি।’
তবে কদিন আগেই মুক্তিযোদ্ধার পক্ষ থেকে বাফুফের সভাপতির কাছে আবেদন করা হয়, এবার যেন একটি দলকে অবনমিত করা হয়। তাহলে টিকে যাবে মুক্তিযোদ্ধা। এরই মধ্যে লিগ থেকে অবনমিত হয়েছে নবাগত আজমপুর উত্তরা ক্লাব। দ্বিতীয় দল হিসেবে আজ নামল মুক্তিযোদ্ধা।
আরিফুলের শেষ কথা, ‘প্রিমিয়ারে রাখলে আমরা খেলব। নইলে আর খেলব না।’ তিনি বলেন, ‘রেফারিং নিয়ে এসব কাণ্ড ফিফার নজরে নেব আমরা। ব্রাদার্স রেলিগেটেড হওয়ার পরও চ্যাম্পিয়নশিপ লিগ খেলেনি এক বছর। অথচ তাদের প্রথম বিভাগে নামানো হয়নি। উল্টো পরের বছর চ্যাম্পিয়নশিপ লিগে চ্যাম্পিয়ন হয়ে প্রিমিয়ারে উঠেছে। এসব অন্যায় আমরা ফিফার নজরে নেব।’