নারী বিশ্বকাপে যৌন হয়রানির অভিযোগ, তদন্তের ঘোষণা ফিফার
অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডে চলমান নারী বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় নিয়েছে জাম্বিয়া। তবে মাঠের ফুটবল শেষ হয়ে গেলেও আলোচনায় থেকে যাচ্ছে আফ্রিকান দলটি। আর সেটি বিতর্কিত এক ঘটনায়। আজ ফিফা জানিয়েছে, জাম্বিয়া নারী জাতীয় দলের এক ফুটবলারকে যৌন হয়রানির অভিযোগে তদন্ত শুরু হয়েছে। কার বিরুদ্ধে অভিযোগ কিংবা এ বিষয়ে আর কিছুই জানায়নি ফুটবলের নিয়ন্ত্রক এই সংস্থা। তবে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ান এর আগে জানিয়েছিল, জাম্বিয়ার কোচ ব্রুস মোয়াপি জাতীয় দলের এক খেলোয়াড়ের বুকে হাত দিয়েছেন, এমন অভিযোগ উঠেছে।
সংবাদ সংস্থা রয়টার্স ও এএফপি এ বিষয়ে ফিফার মুখপাত্রের উদ্ধৃতি প্রকাশ করেছে, ‘আমরা নিশ্চিত করছি, জাম্বিয়া জাতীয় দল নিয়ে একটি অভিযোগ এসেছে এবং তার তদন্ত করা হচ্ছে। ফিফা যেকোনো অসদাচরণের বিরুদ্ধে খুব কঠোর এবং কেউ যদি এ নিয়ে কোনো অভিযোগ করতে চান, সেটারও সহজ প্রক্রিয়া আছে।’
জাম্বিয়া নারী জাতীয় দলে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ নতুন নয়। গত বছর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেই এ নিয়ে বিস্তর আলোচনা–সমালোচনা হয়েছে। তখন জাম্বিয়ার ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনও এ নিয়ে তদন্ত করেছিল। তখন অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, ‘যৌন নিপীড়ন নিয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো অভিযোগ নেই। তবে আমরা এসব অভিযোগ খুব গুরুত্ব দিই।’
২০১৮ সালে জাম্বিয়া নারী জাতীয় দলের দায়িত্ব পান মোয়াপে। এএফপি জানিয়েছে, নারী বিশ্বকাপ চলাকালে তাঁকে যৌন নিপীড়ন নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। মোয়াপে তাঁর বিরুদ্ধে এ অভিযোগ ‘মিথ্যা’ হিসেবে দাবি করে পদত্যাগের সম্ভাবনা উড়িয়ে দেন। স্পেনের বিপক্ষে জাম্বিয়ার ৫–০ গোলে হারের আগে মোয়াপেকে এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হয়েছিল।
পাল্টা প্রশ্নে জাম্বিয়া কোচ বলেছিলেন, ‘দলের পারফরম্যান্সে প্রভাব রাখছে, এমন কোনো পরিবেশের কথা বলা হচ্ছে? কী বিষয়ে জানতে চান? সেটা আমার জানা প্রয়োজন। কারণ আমার সরে দাঁড়ানোর কোনো সম্ভাবনা নেই। আপনারা সম্ভবত সংবাদমাধ্যমের কারণে এসব নিয়ে কথা বলছেন। কিন্তু গুঞ্জনের ওপর নির্ভর না করে সত্যটা জানা প্রয়োজন।’
জাম্বিয়া দলের মুখপাত্র এ নিয়ে সংবাদ সংস্থা এএফপিকে কিছু বলেননি। নারী বিশ্বকাপে নিউজিল্যান্ডে অবস্থান করেছে জাম্বিয়া দল। সেখানকার পুলিশও জানিয়েছে, জাম্বিয়া নারী দলের পক্ষ থেকে তারা যৌন নিপীড়নের কোনো অভিযোগ পায়নি। তবে এএফপি পুলিশের এক মুখপাত্রের উদ্ধৃতি প্রকাশ করেছে, ‘নারী বিশ্বকাপে একটি ঘটনা নিয়ে অভিযোগ আমরা পেয়েছিলাম। কিন্তু প্রাথমিক তদন্তের পর আর আগোনোর প্রয়োজন হয়নি।’
ফিফা ও পুলিশি তৎপরতার পরও জাম্বিয়া ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন জানিয়েছে, তারা সাম্প্রতিক সময়ে যৌন নিপীড়নের কোনো অভিযোগ পায়নি। সংস্থাটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ‘কোচের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ ওঠায় আমরা বিস্মিত।’ আর ফুটবলারদের অনুশীলনে অ্যাসোসিয়েশনের মিডিয়া বিভাগ ও ফিফার প্রতিনিধিরা ভিডিও করে থাকেন। ফুটেজেও এমন কোনো কিছু পাওয়া যায়নি বলে দাবি করেছে জাম্বিয়া ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন। তবে গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছিল, যৌন হয়রানির ঘটনাটি ঘটেছে বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বের জাম্বিয়া–কোস্টারিকা ম্যাচের অনুশীলনে।
সাম্প্রতিক সময়ে মেয়েদের ফুটবলে যৌন নিপীড়নের একাধিক অভিযোগ উঠেছে। গ্যাবন, হাইতি ও যুক্তরাষ্ট্রের নারী ফুটবল ঘিরে এ অভিযোগ রয়েছে। ফিফা আইন সংশোধন করে নারী ফুটবলে যৌন নিপীড়নের বিরুদ্ধে আরও কঠোরও হয়েছে। অভিযোগকারীর বিষয়ে গোপনীয়তাও রক্ষা করা হয়। ফিফার বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘দোষী প্রমাণিত হলে ফিফা খুব কঠোর ব্যবস্থাই নিয়ে থাকে। খেলা থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কারও করা হয়। আমাদের পূর্ববর্তী ঘটনাগুলো দেখলেই তা বোঝা যায়।’