২০৩০ বিশ্বকাপে ৬৪ দলকে খেলানোর প্রস্তাব, বিবেচনা করছে ফিফা
১৯৯৮ সালে ফ্রান্স বিশ্বকাপ থেকে শুরু হওয়ার পর ২০২২ কাতার বিশ্বকাপ দিয়ে শেষ হয়েছে ৩২ দলের বিশ্বকাপ অধ্যায়। ২০২৬ বিশ্বকাপে খেলবে ৪৮ দল। তবে পরের বিশ্বকাপে, অর্থাৎ ২০৩০ সালে বদলে যেতে পারে দলের সংখ্যা। ফিফা এখন বিশ্বকাপের শতবর্ষপূর্তি উপলক্ষে ৪৮ দলের পরিবর্তে ৬৪ দল খেলানোর প্রস্তাব যাচাই-বাছাই করে দেখছে।
২০৩০ বিশ্বকাপ আয়োজনের পরিকল্পনা এরই মধ্যে জটিলতা তৈরি করেছে। সেবারের বিশ্বকাপ খেলা হবে তিনটি ভিন্ন মহাদেশে। যেখানে মূল আয়োজক হিসেবে আছে স্পেন, পর্তুগাল ও মরোক্কা। আর বিশ্বকাপ আয়োজনের শতবছর পূর্তি উপলক্ষে উরুগুয়ে, আর্জেন্টিনা ও প্যারাগুয়েতে খেলা হবে একটি একটি করে ম্যাচ।
১৯৩০ সালে প্রথম বিশ্বকাপ আয়োজন করা হয়েছিল উরুগুয়েতে। তবে এসব নিয়ে আলোচনার মধ্যেই নতুন করে দাবি উঠেছে টুর্নামেন্টে দলসংখ্যা বাড়িয়ে ৬৪ করতে।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ‘দ্য টাইমস’ জানিয়েছে, উরুগুয়ের ফিফা কাউন্সিল সদস্য ইগানাসিও আলোনসো গত বুধবার ফিফার বৈঠকে এই প্রস্তাব দেন। সেখানে ফুটবল-সংশ্লিষ্ট সিনিয়র ব্যক্তিত্বরা এ নিয়ে শঙ্কার কথাও জানান। তবে ফিফা প্রেসিডেন্ট গিয়ানন্নি ইনফান্তিনো নাকি এই প্রস্তাব বিবেচনা করে দেখার কথা বলেছেন।
২০৩০ বিশ্বকাপ আয়োজন নিয়ে অবশ্য আগে থেকেই সমালোচনা ছিল। বলা হচ্ছিল, বিভিন্ন দেশে আয়োজনের কারণে পরিবেশের ওপর এর বিরূপ প্রভাব পড়বে। কারণ, এক দেশ থেকে অন্য দেশে যেতে দলগুলো এবং সমর্থকদের প্রচুর বিমান ভ্রমণ করতে হবে। এই অবস্থায় দলের সংখ্যা যদি আরও বাড়ানো হয়, তবে সেটি পরিবেশের ওপর নেতিবাচক প্রভাবকে আরও বাড়িয়ে দেবে।
এদিকে বিশ্বকাপে দলের সংখ্যা ৬৪ করার প্রস্তাবকে ‘পাগলামি’ বলেছেন ফুটবল-সংশ্লিষ্ট এক সিনিয়র অফিশিয়াল। তাঁর আশা, ‘যত দ্রুত সম্ভব’এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করা হবে। তবে ধারণা করা হচ্ছে, এই প্রস্তাব ফিফার কাউন্সিলে উপস্থাপনের ব্যাপারে ভেতর থেকে বেশ উৎসাহই পেয়েছেন আলোনসো। এমনকি অন্য এক সূত্রের দাবি, ইনফান্তিনো আগে থেকে জানতেন, ৬৪ দল নিয়ে ২০৩০ বিশ্বকাপ আয়োজনের প্রস্তাব দেবেন আলোনসো।
প্রস্তাবিত ৬৪ দলের বিশ্বকাপ নিয়ে একটি বিবৃতিও দিয়েছে ফিফা, ‘২০৩০ সালে শতবর্ষ উদ্যাপন উপলক্ষে ৬৪ দল নিয়ে বিশ্বকাপ আয়োজনের প্রস্তাবটি যাচাই করা হচ্ছে। ৫ মার্চ ফিফা কাউন্সিল মিটিংয়ের শেষ দিকে ফিফার একজন কাউন্সিল সদস্য বিবিধ এজেন্ডার আলোচনায় স্বতঃস্ফূর্তভাবে এ প্রস্তাব দেন। ফিফার দায়িত্ব হচ্ছে কাউন্সিল সদস্যদের যেকোনো প্রস্তাবকে আমলে নিয়ে যাচাই করে দেখা।’
এখন দলের সংখ্যা যদি বাড়ানো হয়, তবে সেটি প্রতিযোগিতার বাছাইপর্বকেও জটিল করে তুলতে পারে, যা কিনা অনেক দেশের আয়ের উৎসও বটে
এখন দলের সংখ্যা যদি বাড়ানো হয়, তবে সেটি প্রতিযোগিতার বাছাইপর্বকেও জটিল করে তুলতে পারে, যা কিনা অনেক দেশের আয়ের উৎসও বটে। পাশাপাশি এত বেশি দল নিয়ে বিশ্বকাপ আয়োজন মানে বাছাইপর্বের গুরুত্ব তলানিতে নেমে যাওয়া।
যার ফলে ভক্ত ও সম্প্রচারকদের কাছেও টুর্নামেন্টের আকর্ষণ অনেকাংশে কমে যাবে। ধারণা করা হচ্ছে, এই প্রস্তাব অনেক মহলে বিরোধিতার মুখে পড়তে পারে। যেমনটি এর আগে ৪ বছরের জায়গায় ২ বছর পরপর বিশ্বকাপ আয়োজনে সৌদি আরবের দেওয়া প্রস্তাবের সময় হয়েছিল।
৪৮ দলের কারণে এরই মধ্যে ৬৪ থেকে ম্যাচ বেড়ে ১০৪–এ গিয়ে দাঁড়িয়েছে। এখন দলের সংখ্যা বেড়ে যদি ৬৪ হয়, তবে ম্যাচ বেড়ে অন্তত ১২৮ হবে, যা কারিগরি দিকসহ অন্যান্য কাজকে অনেক কঠিন করে তুলবে। এখন সামনের দিনগুলোয় ৬৪ দল নিয়ে বিশ্বকাপ আয়োজনের প্রস্তাব কোন দিকে বাঁক নেয়, সেটাই দেখার অপেক্ষা।