সাগরিকা, ইয়ারজান, সৌরভী, মুনকিদের অন্য রকম আনন্দ
মোসাম্মাৎ সাগরিকা এবার মেয়েদের লিগে গোল করেছেন ১৫টি। তাঁর ক্লাব আতাউর রহমান ভূঁইয়া মানিক কলেজ ক্লাবের হয়ে নিয়মিত প্রথম একাদশে খেলার সুযোগ যে পেয়েছেন, ব্যাপারটি তা নয়। কিন্তু তারপরও যৌথভাবে লিগের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ গোলদাতা তিনি। জাতীয় দলের দরজায় কড়া নাড়া শুরু করেছিলেন আগেই।
ফেব্রুয়ারিতে সাফ অনূর্ধ্ব–১৯ চ্যাম্পিয়নশিপে সেরা গোলদাতা ও সেরা খেলোয়াড়ও ছিলেন সাগরিকা। তখনই বলে দিয়েছিলেন, তাঁর আদর্শ ‘সাবিনা আপু’র সঙ্গে খেলতে চান। তিন মাসের মধ্যেই লক্ষ্য পূরণের খুব কাছে চলে এসেছেন। বয়সভিত্তিক দুটি দলে (অনূর্ধ্ব–১৭ ও অনূর্ধ্ব–১৯) আলো ছড়িয়ে এবার জাতীয় দলে ডাক পেয়েছেন মেয়েদের ফুটবলের নতুন এই সেনসেশন।
কাল কিংস অ্যারেনায় চীনা তাইপের বিপক্ষে দুই প্রীতি ম্যাচের প্রথমটির আগে জাতীয় দলে সুযোগ পাওয়ার অনুভূতিটা অবশ্য প্রকাশ করলেন বেশ লাজুক ভঙ্গিতেই, ‘জাতীয় দলে খেলার সুযোগ পাওয়াটা আমার জন্য বড় ব্যাপার। স্বপ্ন দেখতাম, সাবিনা আপু–সানজিদা আপুদের সঙ্গে একই দলে খেলার, সেই সুযোগ পাওয়ার আনন্দ অন্য রকম।’ জাতীয় দলে ডাক পাওয়ার পর প্রথম ফোন দিয়েছিলেন বাবা লিটন আলীকে, ‘আব্বাকে ফোন করেছি। তখনই আম্মুর সঙ্গে কথা হয়েছে। ভাইয়ের সঙ্গে কথা হয়েছে, তারা সবাই খুব খুশি।’
দলে আসা আরেক নতুন ইয়ারজানও তাঁর জাতীয় দলে ডাক পাওয়ার খবর প্রথম দিয়েছেন অসুস্থ বাবাকে, ‘বাবা আমাকে ফুটবলার বানানোর স্বপ্ন দেখতেন। জাতীয় দলে প্রথম সুযোগ পাওয়ার খবরটা তো তাঁকেই দেব।’ ইয়ারজান বাংলাদেশের বয়সভিত্তিক ফুটবলের আরেক রত্ন। মার্চে নেপালে সাফ অনূর্ধ্ব–১৬ ফুটবলে ভারতের বিপক্ষে শ্বাসরূদ্ধকর ফাইনালে টাইব্রেকারে তিনটি শট ঠেকিয়ে দেন এই গোলকিপার। এ মুহূর্তে জাতীয় দলের গোলপোস্টে রুপনা চাকমার জায়গাটা পাকাই। ইয়ারজান সেটি জানেনও, ‘রুপনা আপু অনেক ভালো গোলকিপার। আমার এখনো শেখার আছে অনেক কিছু।’
সৌরভী আকন্দ নিজের দিকে মনোযোগ টেনে নিয়ে গিয়েছিলেন ২০২২ সালেই। তখন থেকেই মনে করা হচ্ছিল তাঁকে মেয়েদের ফুটবলের নতুন তারকা। ২০২২ সালে ঢাকায় সাফ অনূর্ধ্ব-১৫ টুর্নামেন্টে শিরোপা জিততে পারেনি বাংলাদেশ। কিন্তু পাওয়া গিয়েছিল সৌরভী নামের দারুণ এক স্ট্রাইকারকে। ওই টুর্নামেন্টে ভুটানের বিপক্ষে এক ম্যাচে ৬ গোলসহ সৌরভী করেন ৯ গোল। আরও নির্দিষ্ট করে বললে, দুই ম্যাচে তাঁর গোল ছিল ৯!
সেই সৌরভী নেপালে সাফ অনূর্ধ্ব–১৬ ফুটবলে শিরোপাজয়ী বাংলাদেশ দলের সেরা খেলোয়াড় ছিলেন। চার ম্যাচে ৫ গোল করে টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড়ও হয়েছিলেন তিনি। সর্বোচ্চ গোলদাতার পুরস্কারটাও সৌরভী পেতেন, ফাইনালে তাঁকে ছাড়িয়ে যান ভারতের আনুশকা কুমারী। সাফ জেতার পর সৌরভী সর্বোচ্চ গোলদাতা হতে না পারার আক্ষেপ উড়িয়ে দিয়ে বলেছিলেন, ‘সর্বোচ্চ গোলদাতা হতে পারিনি তো কী হয়েছে, দেশ তো চ্যাম্পিয়ন হয়েছে।’
সেই দেশের হয়েই এবার খেলতে যাচ্ছেন সৌরভী। চীনা তাইপের বিপক্ষে ম্যাচে সুযোগ পেয়ে অবশ্য সৌরভীর খুব যে অন্য রকম অনুভূতি হচ্ছে, ব্যাপারটা তা নয়। আসলে বাফুফে ক্যাম্পে সিনিয়র জাতীয় দলের খেলোয়াড়দের সঙ্গে অনেক দিন ধরে থাকার পর সবাইকে চেনা হয়ে গেছে তাঁর। তবু জাতীয় দলে খেলার অনুভূতি তো আলাদা হবেই, ‘আপুরা অনেক সাহায্য করে। কোনো ভুল করলেও সেভাবে বকাঝকা দেয় না, উৎসাহ দেয়। তাঁদের সঙ্গে অনুশীলন আগেও করেছি। তবে জাতীয় দলে প্রথমবার ডাক পেয়ে আমি খুশি।’
অনূর্ধ্ব–১৯ দলের আরেক ফুটবলার মুনকি আক্তারের উপলব্ধি একটু অন্য রকম, ‘অনেক পরিশ্রম করে জাতীয় দলে ডাক পেয়েছি। এখন এই পরিশ্রমের মাত্রাটা আরও বাড়িয়ে দিতে হবে।’ চার নতুনকে নিয়ে জাতীয় দলের ইংলিশ কোচ পিটার বাটলার বললেন, ‘আমি টিমের খেলোয়াড় তালিকার শোভা বাড়ানোর জন্য কাউকে দলে নিইনি। এই চার নতুন ফুটবলারের সেই যোগ্যতা আছে দেখেই নেওয়া হয়েছে। আশা করি ওরা নিজেদের জায়গাটা করে নেবে।’