সবেধন নীলমণি ২০০৩ সালের শিরোপা। সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে আরও দুবার খেললেও বাংলাদেশের সাফল্য ওই একটাই। বেঙ্গালুরুতে কাল শুরু হতে চলা আরেকটি সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের আগে তাই প্রশ্নটা আসছেই—এবার কি বাংলাদেশ পারবে শিরোপার দীর্ঘ খরা ঘোচাতে? প্রত্যাশা ও বাস্তবতার ব্যবধান খোঁজার চেষ্টা—
আশা নেই। আবার আছেও। সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ নিয়ে দুটোরই উপস্থিতি এখন বাংলাদেশ ফুটবল দলে।
দেশ ছাড়ার আগে বাংলাদেশ কোচ বা অধিনায়কের মুখে অনেক চেষ্টা করেও ‘আমরা সাফ জিততে চাই’ কথাটি বের করা যায়নি। সংবাদ সম্মেলন বা অনুশীলন শেষে যখনই কথা বলেছেন হাভিয়ের কাবরেরা বা জামাল ভূঁইয়া, কৌশলে এড়িয়ে যান তাঁরা প্রসঙ্গটা। সামনে আনেন একটাই কথা, ‘আমরা ম্যাচ ধরে ধরে এগোব। তারপর দেখা যাক, কত দূর যেতে পারি। আমরা মনে করি, সেমিফাইনাল খেলা সম্ভব।’
কিন্তু সেমিফাইনালে উঠতে চাইলে লেবানন বা মালদ্বীপের মতো একটি দলকে পেছনে ঠেলে গ্রুপে অন্তত দ্বিতীয় হওয়া চাই। সেটা সম্ভব, আবার সম্ভব নয়ও। লেবাননকে রুখে পরের ম্যাচে মালদ্বীপকে হারাতে পারলে বেঙ্গালুরু সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের শেষ চারের দৌড়ে টিকে থাকবে বাংলাদেশ। শেষ গ্রুপ ম্যাচে ভুটানের বিপক্ষে জয় পাওয়া খুব কঠিন হওয়ার কথা নয়। এভাবে অঙ্ক মেলালে বাংলাদেশের সেমিফাইনালে ওঠার সম্ভাবনা থাকেই।
শর্ত হলো লেবানন আর মালদ্বীপের বিপক্ষে দারুণ কিছু করতে হবে। কিন্তু শক্তিতে প্রতিপক্ষ দল দুটি এগিয়ে। প্রথম ম্যাচে লেবাননের কাছে বাংলাদশ হারলে সেটাই হবে স্বাভাবিক ফল। বাংলাদেশ দল মালদ্বীপকে হারাতে পারবে, সেই নিশ্চয়তাও নেই। ফলে বাস্তবতা মেনে সাফ নিয়ে আশার লাগাম টেনে ধরাই ভালো বাংলাদেশের।
তবু আশার সলতে জ্বলছে বেঙ্গালুরুতে। ১৫ জুন ফিফা প্রীতি ম্যাচে ভালো না খেলেও কম্বোডিয়ার বিপক্ষে তাদেরই মাঠে এসেছে ১-০ গোলে জয়। ১২ জুন নমপেনের প্রিমিয়ার লিগের একটি দলকে বাংলাদেশ হারিয়েছে একই ব্যবধানে।
এই দুটি জয় নিয়ে নমপেন থেকে ১৬ জুন বেঙ্গালুরুর বিমানে ওঠার আগে বাংলাদেশ অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়া বলেছেন, ‘প্রীতি ম্যাচ দুটি জেতায় আমাদের আত্মবিশ্বাস বেড়েছে। আমাদের প্রথম লক্ষ্য হচ্ছে লেবানন। এই ম্যাচ থেকে ১ নয়তো ৩ পয়েন্ট নিতে পারলে ভালো। আমরা ম্যাচ ধরে ধরে এগোব। তবে অবশ্যই আমাদের মূল লক্ষ্য চ্যাম্পিয়নশিপ।’
চ্যাম্পিয়ন হওয়ার মতো শক্তি যে এই বাংলাদেশ দলের নেই, অধিনায়কের তা ভালোই জানা। লেবানন, ভারত বা ১৯৮২ বিশ্বকাপে খেলা কুয়েত আছে যে টুর্নামেন্টে, বাংলাদেশ তাতে চ্যাম্পিয়ন হয়ে গেলে সেটাই হবে বিশাল এক চমক। তবে বদলে যাওয়া ‘দক্ষিণ এশিয়ার বিশ্বকাপে’ এই বাংলাদেশ চমক দেওয়ার মতো সামর্থ্য রাখে কি না, সেটাই বড় প্রশ্ন।
বাংলাদেশ অবশ্য অত দূর ভাবছে না। আপাতত ভাবছে শুধু সেমিফাইনালে ওঠা নিয়ে। বাংলাদেশ দলের ফরোয়ার্ড মোহাম্মদ ইব্রাহিম যেমন বলেছেন, ‘আমাদের প্রথম লক্ষ্য সেমিফাইনাল। তবে কাজটা সহজ হবে না। কারণ, গ্রুপে আছে লেবানন ও মালদ্বীপ।’ বাংলাদেশ দলের অন্দরে এ কথাই শোনা যাচ্ছে বেশি। সবাই বলছেন, সেমিফাইনাল পর্যন্ত যেতে পারাই বিরাট চ্যালেঞ্জ।
ফলে জামাল ভূঁইয়া চ্যাম্পিয়ন হওয়ার কথা বললেও অন্যরা মুখ ফুটে কিছু বলছেন না। ডিফেন্ডার তপু বর্মণ যেমন বলেছেন, ‘সেমিফাইনালে চোখ রেখেই টুর্নামেন্টটা আমরা শুরু করব। আপাতত ওটাই ভাবছি। ফাইনালে উঠে চ্যাম্পিয়ন হতে পারলে সেটা হবে বড় অর্জন।’
সেমিফাইনালে উঠতে বড় অবদান রাখতে হবে গোলকিপার আনিসুর রহমানকে। আনিসুর বলছেন, ‘কম্বোডিয়ায় দুটি প্রীতি ম্যাচে আমরা কোনো গোল খাইনি। এটা ইতিবাচক দিক। আমি মনে করি, সবাই সেরাটা দিতে পারলে আমরা সেমিফাইনালে যেতে পারি।’
সেমিফাইনালের লক্ষ্যে মাঠে ফুটবলাররা নিজেদের সেরাটা দিতে প্রস্তুত বলেই মনে করেন দলের ম্যানেজার আমের খান। গত কদিন দলের সঙ্গে থেকে সাবেক এই ফুটবলারের মনে হয়েছে, সবাই চাইছেন কিছু একটা করতে। আমের সেটাই বলছিলেন, ‘সবাইকে বলেছি, মাঠে উজাড় করে দেবে নিজেকে। ট্রফির স্বপ্ন দেখতে হবে। কোচ যে টিমটা এনেছেন, তাতে ক্ষিপ্রতা আছে। জুনিয়রদের সুযোগ দিচ্ছেন কোচ। ওরা চেষ্টা করছে। সিনিয়ররা চেষ্টা করছে। এটা প্লাস পয়েন্ট।’
বাংলাদেশ দলের সহকারী কোচ হাসান আল মামুন পেয়েছেন সাফ জয়ের স্বাদ। ২০০৩ সালে বাংলাদেশের সাফজয়ী দলের লেফটব্যাক ছিলেন তিনি। দলের মানসিক অবস্থা দেখে ভালো লাগছে জানিয়ে বেঙ্গালুরু থেকে বললেন, ‘আমাদের মাথায় এখন শুধু লেবানন। আমরা সেমিফাইনালে ওঠাকেই পাখির চোখ করেছি। সেমিফাইনালে উঠলে তারপর লক্ষ্য ফাইনাল, তারপর চ্যাম্পিয়ন।’
বাংলাদেশ দল এই স্বপ্ন বাস্তবে রূপ দিতে পারলে তো ভালোই।
এবারের সাফে যে ৮টি দল অংশ নিচ্ছে, সংক্ষেপে তাদের শক্তি আর সামর্থ্যের হিসাব মিলিয়ে দেখা যেতে পারে। এই হিসাব মেলাতে গিয়ে বাংলাদেশকেই বা কোথায় পাওয়া যাচ্ছে, দেখে নেওয়া যেতে পারে সেটাও।