ভারতীয়দের সামনে ‘মার্তিনেজ’ হয়ে দাঁড়িয়েই আসিফের সাফল্য

বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব–২০ দলের গোলকিপার আসিফসংগৃহীত

ভারতের বিপক্ষে সাফ অনূর্ধ্ব–২০ চ্যাম্পিয়নশিপের সেমিফাইনালের ‘বীর’ গোলকিপার মোহাম্মদ আসিফ। অথচ ম্যাচের আগে হোটেল থেকে দল যখন কাঠমান্ডুর অদূরে আনফা কমপ্লেক্সে যাচ্ছিল, তখন তিনি ভাবেনইনি যে তাঁকে মাঠে নামতে হবে। এমনকি ম্যাচের বিরতির সময়ও আসিফকে মাঠে নামতে হবে—এমনটা ভাবার কোনো কারণ ছিল না।

আসিফকে দ্বিতীয়ার্ধের ৬৫ মিনিটের সময় গ্লাভস পরে মাঠে নামার জন্য তৈরি হতে হলো দুঃখজনক এক কারণে। অধিনায়ক ও ১ নম্বর গোলকিপার মেহেদী হাসান শ্রাবণ ভারতের একটি আক্রমণ ঠেকাতে গিয়ে মাথায় আঘাত পেলেন, হাসপাতালেও যেতে হয়েছে তাঁকে। তাঁর জায়গায় বদলি নামা আসিফই শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশের জয়ের নায়ক। টাইব্রেকারে গড়ানো ম্যাচে দুটি শট ঠেকিয়ে দেশকে সাফের ফাইনালে তুলেছেন তিনি।

আসিফ অবশ্য বলেছেন, বেঞ্চে থাকলেও তিনি মানসিকভাবে শতভাগ প্রস্তুতই ছিলেন, ‘আমরা ভারতের বিপক্ষে খেলতে নামার আগে মানসিকভাবে পুরোপুরি প্রস্তুত ছিলাম। যারা খেলবে বা যারা বেঞ্চে থাকবে, সবাই। মাঠে নামলেই যেন নিজেদের মেলে ধরতে পারি, প্রস্তুতিটা সে কারণেই। ম্যাচটা যেকোনো মূল্যে জিততে চেয়েছিলাম। তাই মাঠে ও বেঞ্চের সবাই দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিলাম।’

আরও পড়ুন
ভারতের বিপক্ষে টাইব্রেকারে দুটি পেনাল্টি ঠেকিয়ে দিয়েছেন আসিফ
সংগৃহীত

আগামীকাল সেমিফাইনালে ভারতের বিপক্ষে ৩৫ মিনিটে আসাদুল মোল্লার গোলে এগিয়ে যায় বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব–২০ দল। দ্বিতীয়ার্ধের ৭৪ মিনিটে ভারত সমতা ফেরায়। খেলা গড়ায় টাইব্রেকারে। মেহেদীর বদলি হিসেবে আসিফ মাঠে নামার পরই ভারত সমতা ফেরায়। তবে এতে নিজের মানসিক শক্তিতে কোনো চিড় ধরেনি বলেই জানিয়েছেন আসিফ, ‘আমি যখন মাঠে নামি, বাংলাদেশ এক গোলে এগিয়ে। ভারত সমতা ফেরায় আমি নামার পরই। কিন্তু আমি মানসিকভাবে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিলাম যে খেলাটা যদি টাইব্রেকারে গড়ায়, তাহলে নিজেকে উজাড় করে দেব। আমি আগেও এ ধরনের ম্যাচ খেলেছি, পরিস্থিতিটা আমার কাছে নতুন কিছু ছিল না। স্বাভাবিকভাবেই নিয়েছি সবকিছু।’

টাইব্রেকারে রীতিমতো ‘এমিলিও মার্তিনেজ’ হয়ে গিয়েছিলেন আসিফ। বিশেষ করে ভারতের শেষ শটটির আগে প্রতিপক্ষকে কথা দিয়েই নাকি ঘায়েল করতে চেয়েছিলেন তিনি, ‘দ্বিতীয় শটে ভারতের আকাশের শরীরী ভাষায় কিছুটা নার্ভাসনেস টের পাই। আমিও ওকে কথা দিয়ে কাবু করতে চেয়েছি। পরে দেখি সে আমার পায়ে মেরে দিয়েছে। প্রথম শটে বডি ডজ দিতে চেয়েছিলাম। বাঁদিকে ঝাঁপানোর ভান করে ডান দিকে ঝাঁপ দিই। ভারতের হয়ে টাইব্রেকার নিচ্ছিল যে সেও ডান দিকেই মারে।’

বাফুফের এলিট একাডেমির এই গোলকিপার গত বছরই খবরের শিরোনাম হয়েছিলেন। এলিট একাডেমির ১০ জন তরুণ, উদীয়মান ফুটবলারের জন্য যে নিলামের আয়োজন হয়েছিল, তাতে সর্বোচ্চ ১৩ লাখ টাকায় আসিফকে কিনে নিয়েছিল লিগ চ্যাম্পিয়ন বসুন্ধরা কিংস। কাল নেপালে সাফ অনূর্ধ্ব–২০ চ্যাম্পিয়নশিপের সেমিতে আসিফ প্রমাণ করে দিয়েছিলেন এক বছর আগে কিংস প্রতিভা চিনতে এতটুকু ভুল করেনি।

আগামীকাল টুর্নামেন্টের ফাইনালেও আসিফকেই একাদশে দেখা যাবে। গতকাল আহত হয়ে মাঠ ছাড়ার পরপরই মেহেদী হাসানকে হাসপাতালে নিতে হয়েছিল। সেখানে প্রয়োজনীয় ডাক্তারি পরীক্ষা হয়েছে তাঁর। গুরুতর আঘাতের জন্য তাঁর অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন। কাল রাতে মেহেদীকে কাঠমান্ডুর হাসপাতালেই রাখা হয়। দল কাল ফাইনালে খেললেও আজই মেহেদীর দেশে ফেরার কথা। প্রয়োজনীয় অস্ত্রোপচারটি দেশেই করার সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে দলীয় সূত্র জানিয়েছে।