জাকারিয়া পিন্টুর স্মৃতি কি সংরক্ষণ করবে বাফুফে
বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের মূল ভবনের প্রবেশপথে অনেক আগেই স্থাপন করা হয়েছিল স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের সদস্যদের নামের ফলক। কিছুদিন আগে বিদায়ী সভাপতি কাজী সালাহউদ্দীন নতুন করে আরেকটি ফলকের উদ্বোধন করেছিলেন। সেখানে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে ফুটবল পায়ে গৌরবময় অবদান রাখা স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের প্রত্যেক সদস্যের নাম আছে। অধিনায়ক হিসেবে জাকারিয়া পিন্টুর নাম সবচেয়ে ওপরেই। না–ফেরার দেশে চলে যাওয়া জাকারিয়া পিন্টুর মরদেহ আজ গিয়েছিল বাফুফে ভবনেও সেখানে হয়েছে তাঁর আরও একটি জানাজা। সভাপতি তাবিথ আউয়াল, সহসভাপতি ওয়াহিদউদ্দীন চৌধুরী, নাসের শাহরিয়ার জাহেদী, সাব্বির আহমেদ আরেফ, ফাহাদ মোহাম্মদ আহমেদ করিমসহ জানাজায় উপস্থিত ছিলেন বাফুফের নির্বাহী কমিটির সদস্য ছাইদ হাছান কানন, গোলাম গাউস, ইকবাল হোসেন, কামরুল ইসলাম হিল্টন প্রমুখ।
বাফুফেতে অনুষ্ঠিত জানাজায় যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার পক্ষ থেকে প্রয়াত জাকারিয়া পিন্টুর মরদেহে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান মন্ত্রণালয়ের সচিব রেজাউল মাকছুদ জাহেদী।
তিনি ফুটবলের কিংবদন্তি। তাঁর এবং স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের ছবি বাফুফেতে স্থাপনের ব্যাপারে আমরা নির্বাহী কমিটির সভায় আলোচনা করে একটা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করব।
জানাজা শেষে সংবাদমাধ্যমকে বাফুফে সভাপতি তাবিথ আউয়াল বলেন , ‘বাংলাদেশের ফুটবল কিংবদন্তির মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন এশিয়ান ফুটবল কনফেডারেশনের (এএফসি) শেখ সালমান বিন ইব্রাহিম আল খলিফা, স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল মুক্তিযুদ্ধের সময় দেশের বাইরে বাংলাদেশের পতাকা উড়িয়েছে। জাকারিয়া পিন্টু সেই দলের অধিনায়ক ও বাংলাদেশের প্রথম অধিনায়ক। তাঁর মৃত্যুতে আমরা এশিয়ান ফুটবল কনফেডারেশনের সভাপতি শেখ সালমান, বিভিন্ন দেশের ফেডারেশন ও ক্লাবের শোকবার্তা পেয়েছি গতকাল।’
বাফুফে ভবনে স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের সদস্যদের নামের ফলক থাকলেও দেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের এই অবিস্মরণীয় অধ্যায়ের কোনো ছবি নেই। এক প্রশ্নের জবাবে তাবিথ আউয়াল বলেন, ‘তিনি ফুটবলের কিংবদন্তি। তাঁর এবং স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের ছবি বাফুফেতে স্থাপনের ব্যাপারে আমরা নির্বাহী কমিটির সভায় আলোচনা করে একটা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করব।’
বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামের কোনো গ্যালারি বা কোনো স্টেডিয়ামের গ্যালারির নামকরণ স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের প্রয়াত অধিনায়কের নামে হবে কি না, এমন প্রশ্নের উত্তরে অবশ্য তাবিথ আউয়াল টেনেছেন সরকারি সিদ্ধান্তের ব্যাপারটি, ‘স্টেডিয়ামগুলোর সবই সরকারের। আমরা এ ব্যাপারে প্রস্তাব দিতে পারি সরকারকে।’
গত পরশু সন্ধ্যায় হৃদ্রোগে আক্রান্ত হন জাকারিয়া পিন্টু। তাঁকে ভর্তি করা হয় ধানমন্ডির ইবনে সিনা হাসপাতালে। ৮১ বছর বয়সী বাংলাদেশ ফুটবলের প্রথম অধিনায়ক অন্যান্য শারীরিক জটিলতাতেও আক্রান্ত হন। তাঁকে নেওয়া হয় সিসিইউতে। সেখানেই সোমবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ইন্তেকাল করেন তিনি।
মৃত্যুকালে জাকারিয়া পিন্টু এক ছেলে ও তিন মেয়ে রেখে গেছেন। তাঁর সহধর্মিণী দুনিয়া ছেড়েছেন বছর পাঁচেক আগে। তিন মেয়েই থাকেন দেশের বাইরে। বাফুফে ভবনের জানাজার পর তাঁর আরেকটি জানাজা অনুষ্ঠিত হয় জাতীয় প্রেসক্লাবে। সেখানে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. এ জেড জাহিদ হোসেনসহ অনেকেই।
১৯৯৩ সালে ঢাকায় অনুষ্ঠিত ষষ্ঠ সাফ গেমসে মশাল জ্বালিয়েছিলেন জাকারিয়া পিন্টু। ১৯৯৫ সালে তিনি পান দেশের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মাননা স্বাধীনতা পদক। তবে আমৃত্যু তাঁর আক্ষেপ ছিল মুক্তিযুদ্ধে ঐতিহাসিক অবদানের পরও দল হিসেবে স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের স্বাধীনতা পুরস্কার না পাওয়া নিয়ে। তিনি আজই চিরনিদ্রায় সমাহিত হবেন মিরপুরের শহীদ বুদ্ধিজীবী করস্থানে।