ছাত্র–জনতার আন্দোলনে নিহত ও বন্যার্তদের শিরোপা উৎসর্গ অনূর্ধ্ব–২০ দলের
ম্যাচ শেষে আবেগাপ্লুত মিরাজুল ইসলাম কথাই বলতে পারছিলেন না। নেপালকে ৪-১ গোলে হারিয়ে প্রথমবারের মতো সাফ অনূর্ধ্ব-২০ চ্যাম্পিয়নশিপ জেতার পর মিরাজুল স্মরণ করলেন সৃষ্টিকর্তাকে, ‘মহান আল্লাহপাক আজ আমাদের সঙ্গে ছিলেন, আমরা কিছুই করিনি, সব মহান আল্লাহর জন্যই।’
নেপালের এই টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ গোলদাতা মিরাজুলই। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে গোল করেছিলেন। এরপর গোল করেন গ্রুপের দ্বিতীয় ম্যাচে নেপালের বিপক্ষে। আর আজ ফাইনালে করেছেন দুই গোল। মোট ৪ গোল করে টুর্নামেন্ট-সর্বোচ্চ গোলদাতা হওয়া মিরাজুল অর্জনের দিনে স্মরণ করেছেন বন্যায় দুর্গত মানুষদের, ‘দেশে বন্যা হচ্ছে। অনেক মানুষ আক্রান্ত। আমাদের এই শিরোপা তাদের জন্যই। ফ্রি কিকে যে গোলটি করেছি, সেটি আমি করতে পারতাম না যদি না আল্লাহপাক আমাকে সাহায্য করতেন।’
ফাইনালে মিরাজুলদের শুধু নেপালের ১১ জনকেই নয়, ‘সামলাতে’ হয়েছে আনফা কমপ্লেক্সের গ্যালারিভরা স্থানীয় সমর্থকদেরও। দর্শকদের গগনবিদারী চিৎকার চাপে ফেলে দিতেই পারত বাংলাদেশকে। কিন্তু দর্শকদের সেই চিৎকারে উল্টো নেপালের খেলোয়াড়েরাই চাপে পড়ে গিয়েছিলেন। পুরো ম্যাচে প্রাধান্য বিস্তার করে খেলেও বাংলাদেশের কৌশলের কাছে পরাস্ত হতে হয় নেপালকে। ৪-১ গোলের জয়ে অনূর্ধ্ব-২০ সাফের ট্রফি প্রথমবারের মতো নিজেদের করে নেওয়ার পর কোচ মারুফুল হকের মুখে উঠে এসেছে তাঁর কৌশলের কথা, ‘সেমিফাইনালের পর মাত্র এক দিন সময় পেয়েছিলাম। এ সময়ে ফাইনালের জন্য খেলোয়াড়দের পুরোপুরি ফিট করে তুলতে চেষ্টা করেছি। তবে আজকের ম্যাচে শুরুতে আমি খেলোয়াড়দের বলেছিলাম ধীরে-সুস্থে খেলতে। লক্ষ্য ছিল প্রতি-আক্রমণে খেলার। কিন্তু কিছুক্ষণ পর দেখলাম, নিজেদের মাঠে খেললেও দর্শকদের প্রত্যাশা নেপালের ওপর চাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ওই সময় কৌশল বদল করে আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলতে বলি খেলোয়াড়দের। আমি শুরু থেকে যে পাসিং ফুটবলটা খেলাতে চেয়েছি, আজ ফাইনালে দল সেই ফুটবল খেলেই চ্যাম্পিয়ন।’ কোচ মারুফুল হক শিরোপা উৎসর্গ করেছেন জুলাই-আগস্টের আন্দোলনে নিহত ব্যক্তিদের, ‘আমি এই ট্রফি, এই গৌরব উৎসর্গ করছি জুলাই ও এ মাসের শুরুতে নতুন বাংলাদেশ গড়ার জন্য ছাত্র-জনতার আন্দোলনের শহীদদের প্রতি।’
দেশের বিস্ফোরণোন্মুখ রাজনৈতিক পরিস্থিতির মধ্যেই শুরু হয়েছিল অনূর্ধ্ব-২০ দলের প্রস্তুতি। সহিংসতার কারণে বেশ কয়েক দিন অনুশীলনও সম্ভব হয়নি। নেপাল যাওয়ার আগে প্রস্তুতির ঘাটতির কথা জানিয়েছিলেন কোচ মারুফুল। সাহস করে শিরোপা জেতার কথাও বলেননি। যদিও ফাইনালে খেলবেন, এমন প্রত্যাশা তাঁর ছিল। শেষ পর্যন্ত সব বাধাবিপত্তি অতিক্রম করে শিরোপাই জিতেছে বাংলাদেশ।