বাঁয়ে এমবাপ্পে, ডানে ভিনিসিয়ুসকে রেখে এনদ্রিকের ‘আঠারোর দুঃসাহস’

গোল করে উদ্‌যাপন এনদ্রিকেরএএফপি

চ্যাম্পিয়নস লিগে গতকাল রাতে এনদ্রিকের গোলটি তো দেখেছেন? দেখে থাকলে ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতাটি কি মনে পড়েছে? অবশ্য মনে না পড়লেই বা কী! দূরপাল্লার শটে করা গোলটির সঙ্গে ওই কবিতার ছান্দসিক সৌন্দর্যের মিল খুঁজতে যাওয়া বোকামি। কিন্তু মিলটা অন্য জায়গায়।

কবিতায় সুকান্ত ভট্টাচার্যের সেই যে লাইন দুটি, ‘আঠারো বছর বয়সেই অহরহ/বিরাট দুঃসাহসেরা দেয় যে উঁকি।’ ১৮ বছর বয়সী এনদ্রিক তো তেমনই এক দুঃসাহসী। একে তো চ্যাম্পিয়নস লিগে অভিষেক ম্যাচ, তার ওপর বাঁয়ে কিলিয়ান এমবাপ্পে ও ডানে ভিনিসিয়ুস জুনিয়র। এনদ্রিক বল পায়ে ছুটছিলেন মাঝবরাবর। এসব ক্ষেত্রে বেশির ভাগ সময়ই বলটা সিনিয়রদের সামনে ঠেলে দেন জুনিয়ররা। আর সে মুহূর্তে ভিনিসিয়ুস ও এমবাপ্পে গোল করার মতো সুবিধাজনক অবস্থানেও ছিলেন। কিন্তু এনদ্রিককে তো এনদ্রিক হতে হবে! তাই বক্সের ঠিক সামনে থেকে নিলেন বাঁ পায়ের জোরালো শট। ততক্ষণে ‘রংফুটেড’ হওয়ার ভুল করে বসেছিলেন স্টুটগার্ট গোলকিপার আলেকসান্দার নুবেল। বাঁয়ে ঝাঁপ দিয়েও চ্যাম্পিয়নস লিগে এনদ্রিকের অভিষেক ম্যাচে গোল করা ঠেকাতে পারেননি।

ঠিক ওই মুহূর্তের ভিডিও রিপ্লে দেখলে কারও কারও চোখে হয়তো এমবাপ্পের হতাশাটা ধরা পড়তে পারে। রিয়াল মাদ্রিদের এই ফরাসি ফরোয়ার্ড আশা করেছিলেন, এনদ্রিক তাঁকে পাস দেবেন। কিন্তু তা না করায় কার্লো আনচেলত্তি নিশ্চয়ই খুশি হয়েছেন। অন্তত ছেলেটির ভেতরটা তো বেরিয়ে এসেছে! আর সেই ভেতরকার সাহসটুকুর সঙ্গেই মিলে যাচ্ছে সুকান্তের ওই লাইন। বিশ্বাস হচ্ছে না? ম্যাচ শেষে স্বয়ং রিয়াল কোচ আনচেলত্তি মুভিস্টারকে বলেছেন, ‘ছেলেটির সাহস আছে!’

সেই সাহসকে পুঁজি করেই এনদ্রিক এখন রিয়ালের চ্যাম্পিয়নস লিগ ইতিহাসে সর্বকনিষ্ঠ গোলদাতা। ১৮ বছর ৫৮ দিন বয়সে গোলটি করে পেছনে ফেলেছেন রিয়ালের ‘ঘরের ছেলে’ রাউল মাদ্রিদকে। দুঃখিত, রাউল গঞ্জালেস রিয়ালের সঙ্গে এতটাই ওতপ্রোতভাবে জড়িত যে অনেকে আদর করে তাঁকে এই নামে ডাকেন। ১৯৯৫ চ্যাম্পিয়নস লিগে হাঙ্গেরির ক্লাব ফেরেনৎসভারোসের বিপক্ষে ১৮ বছর ১১৩ দিন বয়সে গোল করেছিলেন রাউল। এনদ্রিক সেই রাউলকে পেছনে ফেলতে সময় নিয়েছেন মাত্র ১৫ মিনিট! ৮০ মিনিটে জুড বেলিংহামের বদলি হিসেবে নেমে যোগ করা সময়ের পঞ্চম মিনিটে গোল!

এনদ্রিকের এই গোল তাঁকে ইতিহাসের আরেকটি পাতায় জায়গা করে দিয়েছে। ফুটবলের তথ্য-পরিসংখ্যানভিত্তিক এক্স হ্যান্ডল ‘মিস্টার চিপ’ জানাচ্ছে, চ্যাম্পিয়নস লিগ অভিষেকে দ্বিতীয় সর্বকনিষ্ঠ অ-ইউরোপিয়ান খেলোয়াড় হিসেবে গোলটি করলেন ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড। ১৯৯৭ চ্যাম্পিয়নস লিগে গ্রিক ক্লাব অলিম্পিয়াকোসের হয়ে ১৭ বছর ১৯৪ দিন বয়সে গোল করেছিলেন ঘানার সাবেক স্ট্রাইকার পিটার ওফোরি-কুয়াইয়ি।

স্টুটগার্টকে ৩-১ গোলে হারিয়ে চ্যাম্পিয়নস লিগের নতুন মৌসুমে রিয়াল শুভসূচনা করেছে, অভিষিক্ত খেলোয়াড়ও গোল পেয়েছেন—এসব কারণে আনচেলত্তির খুশি না হওয়ার কোনো কারণ নেই। ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে তাই এনদ্রিকের প্রশংসায় কার্পণ্য করেননি আনচেলত্তি, ‘এনদ্রিকের সাহস আছে। এটা ছিল ম্যাচের শেষ মুভ। সে নিশ্চিত ছিল যে গোল করবে। সবচেয়ে কঠিন পথেই সে এগিয়েছে। তবে শেষটা ভালো হয়েছে।’ আনচেলত্তি তাঁর এই শিষ্যকে নিয়ে একটু মজাও করেছেন। এই সপ্তাহেই প্রেমিকা গাবরিয়েলি মিরান্দাকে বিয়ে করেছেন এনদ্রিক। আনচেলত্তি তাই মজা নেওয়ার লোভটা সামলাতে পারেননি, ‘এই দুই দিনে সে প্রতিটি দৃষ্টিকোণ থেকে নিজেকে সাহসী হিসেবে প্রমাণ করেছে।’

দ্বিতীয় মুভে আমার দুই পাশে এমবাপ্পে ও ভিনিসিয়ুস ছিলেন। কিন্তু সবচেয়ে ভালো উপায় ছিল শুট করা। মাঠে নামার আগে রুডিগার আমাকে বলেছেন, গোল করার জন্য প্রস্তুত থাকতে।
এনদ্রিক, রিয়াল মাদ্রিদ ফরোয়ার্ড

কিন্তু গোলটি যদি না করতে পারতেন, তখন কী হতো! সেটাই বলেছেন রিয়াল গোলকিপার থিবো কোর্তোয়া, ‘মিস করলে ওরা (ভিনিসিয়ুস ও এমবাপ্পে) ওকে মেরেই ফেলত!’ আর এনদ্রিক নিজে কী ভাবছেন গোলটি নিয়ে? শুনুন তাঁর মুখেই, ‘দ্বিতীয় মুভে আমার দুই পাশে এমবাপ্পে ও ভিনিসিয়ুস ছিলেন। কিন্তু সবচেয়ে ভালো উপায় ছিল শুট করা। মাঠে নামার আগে রুডিগার আমাকে বলেছেন, গোল করার জন্য প্রস্তুত থাকতে।’

গোল করার পর এমবাপ্পে
এএফপি

রাতটা এমবাপ্পের জন্যও স্মরণীয় ছিল। রিয়ালের হয়ে চ্যাম্পিয়নস লিগে অভিষেক ম্যাচে দ্বিতীয়ার্ধ শুরুর ২২ সেকেন্ডেই গোল পেয়েছেন। মানে কিক–অফের পর গোল! রিয়ালের হয়ে এ নিয়ে ৭ ম্যাচে ৫ গোল হলো এমবাপ্পের। সামনে কী করতে চান, সেটাও বলেছেন ফরাসি তারকা, ‘আমি আরও ভালো করতে পারি। আমি জানি, সেটা পারব। প্রতি ম্যাচেই নিজেকে আরও ভালো মনে হচ্ছে।’