বাংলাদেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তন হয়েছে। বাফুফের বেশির ভাগ নেতৃস্থানীয় কর্মকর্তা নিষ্ক্রিয়। বাংলাদেশে তো রাজনীতি ও খেলাধুলা ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এমন পরিস্থিতিতে দায়িত্ব পালনের অভিজ্ঞতা কেমন?
হাভিয়ের কাবরেরা: চারপাশে অনেক কিছুই ঘটছে। সবই রাজনৈতিক। তবে আমাদের মনোযোগ ফুটবলে। আমরা চেষ্টা করছি ফুটবলারদের সব মনোযোগ যেন খেলাতেই থাকে, আশপাশে কী ঘটছে, সেসব নিয়ে যেন তারা মাথা না ঘামায়। আগে যেভাবে কাজ করেছি, সেভাবেই কাজ করে যেতে চাই। তবে যা কিছু ঘটছে, তা থেকে মনোযোগ সরিয়ে রাখা কঠিন। এই যে প্রিমিয়ার লিগে দুটি ক্লাব খেলবে না বলে জানিয়েছে, সেটি তো রাজনৈতিক কারণেই।
সব সময়ই বলে আসছেন, বাংলাদেশ দলকে আপনি উন্নতির পরবর্তী ধাপে নিতে চান। সব সময়ই ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে এগিয়ে থাকা দলের বিপক্ষে খেলতে চান। ভুটানের বিপক্ষে ম্যাচ দুটি নিয়ে কী ভাবছেন?
কাবরেরা: দেখুন, আমরা বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে ছয়টি অত্যন্ত কঠিন ম্যাচ খেলেছি। এমনকি প্রাক–বাছাইপর্বে মালদ্বীপের বিপক্ষে দুটি, তার আগে আফগানিস্তানের বিপক্ষে দুটি ম্যাচও ছিল যথেষ্ট কঠিন। এই ম্যাচগুলো মোটামুটি ভালোই খেলেছি। ম্যাচগুলোতে খেলোয়াড়দের শতভাগের বেশি দিতে হয়েছে। মাঝেমধ্যে এমন কিছু ম্যাচও দরকার, যেগুলোতে জেতার যথেষ্ট সুযোগ থাকবে। সবকিছু চিন্তা করেই ভুটানকে প্রতিপক্ষ হিসেবে বেছে নেওয়া।
ভুটানে ভৌগোলিক দিক দিয়ে একধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে বাংলাদেশ দলকে। ভূপৃষ্ঠ থেকে বেশ উঁচুতে খেলতে হবে...
কাবরেরা: ভুটানের মাটিতে এর আগে বাংলাদেশ হেরেছিল, সেটি মাথায় আছে আমাদের। ভৌগোলিক কারণে ভুটানে খেলাটা চ্যালেঞ্জিং। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় আট হাজার ফুট উঁচুতে খেলা বেশ কঠিন। কৃত্রিম মাঠও একটা চ্যালেঞ্জ।
তিন মাস বিরতির পর খেলোয়াড়দের আন্তর্জাতিক ম্যাচের জন্য কীভাবে তৈরি করছেন?
কাবরেরা: খেলোয়াড়েরা খেলার মধ্যে ছিল না ঠিকই, কিন্তু নির্দিষ্ট কিছু শারীরিক অনুশীলন তাদের করতে হয়েছে। গত ১০ দিন বাড়িতেই নির্দিষ্ট অনুশীলন পরিকল্পনা অনুসরণ করতে হয়েছে তাদের। আমরা কোচিং স্টাফ সদস্যরা সেগুলো মনিটরিং করেছি। ভুটানের বিপক্ষে ম্যাচের আগে আট–দশটি অনুশীলন সেশন পাব। আশা করছি, খেলোয়াড়েরা আন্তর্জাতিক ম্যাচের জন্য প্রস্তুত হয়ে যাবে।
বাংলাদেশ দলের দায়িত্ব নিয়েছেন ২০২২ সালে। এই সময়ে বাংলাদেশ ফুটবল দলের পারফরম্যান্সে কতটা উন্নতি দেখছেন?
কাবরেরা: এটা দলের খেলা দেখলেই বুঝতে পারবেন। এই সময়ে আমরা কিছু তারকা তৈরি করতে পেরেছি। আন্তর্জাতিক ম্যাচে দল আগের চেয়ে অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসী এখন। আমরা ভালো ভালো দলের বিপক্ষে লড়াই করেছি। এই দুই বছরে আমরা প্রতিপক্ষের চোখে চোখ রাখতে শিখেছি। তবে আমরা বেশি ম্যাচ জিততে পারিনি, এটা একটা সমস্যা।
হামজা চৌধুরী বাংলাদেশের পাসপোর্ট পেয়েছেন। বাংলাদেশের হয়ে খেলতে চেয়ে তিনি বাফুফেকে চিঠিও দিয়েছেন। হামজা খেললে সেটি বাংলাদেশ দলকে কীভাবে উপকৃত করবে?
কাবরেরা: হামজা ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে খেলে, বাংলাদেশের জার্সিতে তার খেলাটা অবশ্যই জাতীয় দলের মানোন্নয়নে সহায়ক হবে। বাকি খেলোয়াড়েরাও উজ্জীবিত হবে। হামজার অন্তর্ভুক্তিতে জাতীয় দল আরও শক্তিশালী হবে, আমরা এশিয়ার শক্তিধর সব দেশের সঙ্গে লড়াই করার শক্তি অর্জন করব। এমন একজন খেলোয়াড় এ দেশের তরুণ প্রতিভাদের অনুপ্রাণিত করবে।
বাংলাদেশে সরকারবিরোধী আন্দোলনে অনেকের মৃত্যু হয়েছে। এটা নিশ্চয়ই আপনার জন্য ভিন্ন এক অভিজ্ঞতা?
কাবরেরা: এমন অভিজ্ঞতা আমার আগে ছিল না। জুলাই মাসের মাঝামাঝি সময়ে আমার ঢাকায় আসার কথা ছিল। পরিস্থিতি খারাপ থাকায় সেটি স্থগিত করা হয়। স্পেন থেকেই খোঁজখবর রাখছিলাম। প্রচুর ছাত্র, সাধারণ মানুষ আইন–শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গুলিতে নিহত হচ্ছিলেন, কয়েক দিন তো ইন্টারনেটও ছিল না। পরিবর্তনের ফলে নতুন প্রত্যাশা তৈরি হয়েছে। ৮ আগস্ট ঢাকায় এসে দেখলাম, ছাত্ররা রাস্তায় ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করছে। সবার মধ্যে একধরনের আবেগ লক্ষ করছি। ভবিষ্যতের জন্য এটা সত্যিই দারুণ ব্যাপার।